সিলেট সুনামগঞ্জের তৃতীয় দফায় বন্যা শুরু আবারো আতঙ্কিত বানভাসিরা

0
11

আমার সিলেট রিপোর্ট: দুই দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই তৃতীয় দফায় প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারো বন্যার মুখোমুখি হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা। গত দুই দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার, সিলেটের কানাইঘাটে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জনপদ প্লাবিত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট ডুবে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইঘাট, জৈন্তা ও কানাইঘাট, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার এবং মৌলভীবাজারের জুড়ীসহ অন্যান্য উপজেলার নিচু এলাকা গুলো প্লাবিত হয়েছে।

সোমবার (১জুন) বিকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নানা আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার বাসিন্দাদের। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সুরমার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত সিলেটের সবকটি নদী সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, গোয়াইন, সারি, ডাউকী, ধলাইয়ের সব পয়েন্টেই পানি হু হু করে বাড়ছে।

সোমবার সকাল ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা যেখানে বিপদসীমার ৮ সে.মি. ওপরে ছিল সেখানে বিকাল ৩টায় ৯৮ সে.মি. ওপর দিয়েপানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে সারি নদী অমলসিদে বিপদসীমার ৬ সে.মি. ও গোয়াইনঘাটে ২৫ সে.মি. এর ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছন, আগামী তিন দিনে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সমতলে কোথাও কোথাও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে পারে।

সুরমাসহ বিভিন্ন নদী তীরবর্তী বসিন্দারা বাড়িঘর, গৃহপালিত পশু, জমি, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে চোখে আঁধার দেখছেন। প্রায় এক মাস থেকে মারাত্মকভাবে ফুলে থাকা কুশিয়ারায় নতুন করে আবার পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় বাসিন্দারা মহা দুশ্চিন্তায়। এর আগে দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২১ লাখ লোক পানিবন্দি হন। চার জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয় অন্তত হাজার কোটি টাকার। গত সপ্তাহে বন্যার পানি কমতে না কমতে শুরু হয়েছে ঢলের তাণ্ডব। “এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা”—বললেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের শাহ জামাল উদ্দিন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তার এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে চারদিকে পানি। সেখানে যেতে হলে নৌকা লাগে। মানুষ বাড়িঘর, গরু-বাছুর নিয়ে চরম বিপাকে।

জানা গেছে, রবিবার থেকেই সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হুহু করে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট ডুবছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক তলিয়ে সেখানে নৌকা চলছে। সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদনদীগুলোর পানি প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে।

পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় প্রবাহিত নদ-নদী গুলোর পানি বাড়া বা কমার বিষয়টি ভারতে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। আজ মঙ্গলবারও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হচ্ছে,ভারতের বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নামে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছে। তবে এর আগে পানি কমায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন বাড়ি ফিরে যান।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি একদিনে বেড়ে সোমবার বেলা ১২টায় বিপদসীমার ১২ সে.মি. এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক রাস্তাঘাট ডুবে যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে। আসাম থেকে নেমে আসা বরাক নদী দিয়ে ঢল নেমে সিলেটে সুরমার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির কারণে উজানের পানিতে সীমান্তের নিচু সড়ক প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হয়েছে।

তাহিরপুরে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ফের বাড়ছে তাহিরপুরের সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি ও পাটলাইসহ সব নদনদীর পানি। এতে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে উপজেলায়। উপজেলার বাদাঘাট, দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নসহ সাতটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

জৈন্তাপুরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বহু ঘরবাড়িতে এখন হাঁটু পানি।

গোয়াইনঘাট উপজেলার সব নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।