সিলেটে ‘ছোটমনি নিবাস’ এ আয়ার হাতে ২ মাসের শিশু খুন ! খুনি আটক

0
662
সিলেটে 'ছোটমনি নিবাস' এ আয়ার হাতে ২ মাসের শিশু খুন ! খুনি আটক


নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ   সিলেটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্থ নগরীর বাগবাড়িস্থ “ছোটমনি নিবাসে” মাত্র ২ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে খুন করেছেন দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা নামের এক আয়া। উর্ধতন এক কর্মকর্তার সন্দেহ থেকে পুলিশের সহযোগিতায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই হত্যাকারী নারীকে সনাক্ত করে পুলিশ।

অভিযোগ উঠেছে,ওই এতিম শিশুকে প্রথমে সজোরে ছুড়ে ফেলেন এবং পরে বালিশচাপা দিয়ে শিশুর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। নিহত শিশুটির নাম নাবিল আহমদ। গত ২২ জুলাই দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট ২০২১) রাতে ঘাতক আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ।

এদিকে, অবুঝ শিশু নাবিলকে হত্যার পর ঘটনাটি গোপন রাখেন ‘ছোটমনি নিবাসে’র দায়িত্বে থাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ কারণে তদন্ত’সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর বাগবাড়িস্থ ‘ছোটমনি নিবাসে’ মাত্র ২ মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদ কান্নাকাটি শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সে সময় শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা নামে আয়া।তার গ্রামের বাড়ী নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের চেলার চর গ্রামের শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ও মফিজুল ইসলামের মেয়ে।

বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে নাবিলকে বিছানা থেকে তুলে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেন সুলতানা। এসময় বিছানার স্টিলের রেলিঙয়ে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি। প্রচন্ড আঘাতের ফলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারায় শিশু নাবিল। এরপর নাবিলের মুখের উপরে বালিশ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন পাষণ্ড আয়া সুলতানা। এরপর প্রমাণাদি লোপাটের চেষ্টা করেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করেন ‘ছোটমনি নিবাসে’র কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নম্বর-৪৫) দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তের পর নাবিলের মরদেহ দাফন করা হয়। নাবিল হত্যার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়।নিহত নাবিল সিলেটের গোয়াইনঘাটের এক ভবঘুরের সন্তান। তাকে গত ৬ জুলাই ছোটমনি নিবাসে পাঠান উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে আসেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এসময় শিশু নাবিলের অপমৃত্যু মামলাটি তার দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে রাত ১১টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাগবাড়ির ‘ছোটমনি নিবাসে’ ছুটে যান ডিসি আজবাহার আলী শেখ।

সেখানের সিসি ক্যামেরায় শিশু নাবিল খুনের পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়েছিলো। ক্যামেরায় ধারণ হয় সুলতানা কীভাবে নাবিলকে ছুড়ে ফেলে এবং বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।

সিসি ফুটেজ দেখে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করার নির্দেশ দেন আজবাহার আলী শেখ। পরে সুলতানাকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ ছোটমনি নিবাসে মোট ৪২ শিশু থাকতো। একজনকে হত্যার পর বাকি ৪১ জন শিশুর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ’

ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রূপন রায় বলেন, ‘এ ঘটনা গত ২২ জুলাই রাতের। আমাকে পরদিন সকালে জানানো হয়, নাবিল নামের এক শিশু নড়াচড়া করছে না। পরে হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। ’ তিনি বলেন, ‘মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গত ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তের পর শিশুটির দাফন সম্পন্ন হয়।


এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকালে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে- আয়া সুলতানা শিশু নাবিলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।শুক্রবার (১৩ আগস্ট) এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে যদি ছোটমনি নিবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরর বিরুদ্ধে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।