নূরুজ্জামান ফারুকী,নবীগঞ্জ থেকে: নবীগঞ্জে হাওর এলাকাগুলো থেকে যেন কোন মতেই থামানো যাচ্ছে না জমির উপরিভাগের ‘টপ সয়েল’ বিক্রি। পরিবেশ আইন আমান্য করে যে যার মতো করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষকদের ভবিষ্যৎ। এছাড়াও হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্যতার হুমকি তো রয়েছেই । ভেঙ্গে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা-ঘাট।
অভিযোগ রয়েছে, একদল অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব মাটি কিনে পাচার করছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। আবার কেউ কেউ ভিটা ভরাটের কাজেও ব্যবহার করছে জমির উপরিভাগের এসব মাটি। যদিও প্রশাসন বলছে, জমির উপরিভাগের মাটি কাটা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, , নবীগঞ্জ উপজেলায় দেদারছে চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাওরের বিভিন্ন জমিতে লেগে আছে ট্রাক ট্রাক্টরের দীর্ঘ লাইন। ফসলি এসব জমি থেকে এক্সেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে সেগুলো পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। আর এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বসতভিটা। একই সাথে যাচ্ছে ইট ভাটায়।
জানা গেছে, একটি অসাধু সিন্ডিকেট চক্র কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির জন্য সাধারণ কৃষকদের নানা ভাবে প্রলোভন দিয়ে আসছে। প্রতি ট্রাক্টর মাটি তারা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। আর এতে করে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি।
যদিও কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে দশ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যামান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই সেগুলো কাটা অথবা বিক্রি করা যাবে না। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। সাধারণ কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, কিছু কিছু জমি পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে সেইগুলো জমি থেকে উপরিভাগের মাটি কাটতে দিচ্ছেন তারা। তারা বলেন, এতে করে একদিকে যেমন কিছু টাকা পাওয়া যায় একইভাবে আবার জমিও কিছুটা নিচু হয়। যে কারণে জমিতে বেশি সেচ দিতে হয় না। কৃষকরা জানান, আমাদের জমি তো আমাদেরই থাকছে তা হলে জমির মাটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেলে ক্ষতি কিসের ?
এদিকে, কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে বেশ তৎপর হতে দেখা গেছে উপজেলা প্রশাসনকে। উপজেলায় নিয়মিত চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। আর এসব অভিযানে করা হচ্ছে বিপুল পরিমানের জরিমানা। একই সাথে দেয়া হচ্ছে কারাদন্ডও। তবুও থামছেই না অবৈধ পন্থায় মাটি কাটার মহোৎসব। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে একই সাথে এ বিষয়ে কৃষকদেরও সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জানান, অবৈধভাবে যারা মাটি ও বালু উত্তোলন করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।