কারবালার যুদ্ধঃসত্য ও ন্যায়ের পার্থক্য

    0
    265

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২অক্টোবর: মহানবী সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম..জাহেরী জিন্দেগীতেও মসলিম নামের মোনাফিক সক্রীয় ছিল,তারা নবীজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র লিপ্ত থাকতো,তারাও নামাজ রোজা,হজ্ব, ইত্যাদি পালন করতো।মহানবীর ইন্তিকালের পর  হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক ছাড়া অন্য ৩ জন খলিফা মুসলিম মোনাফিক কতৃক শহীদ হন, ইমাম হেসাইন রাঃ সহ আহলে বায়াতও তার ব্যাতিক্রম নয়।  হযরত ওমর রাঃ হত্যার পর তিনি জিজ্ঞাস করেন,কে আমাকে হত্যা করবে? ওমর (রাঃ) কে তাঁর
    বাড়িতে আনা হল, তিনি লোকদের জিজ্ঞারা করলেন আমার হত্যাকারী কে? উত্তর দেওয়া হল আবুলুলু । আবুলুলুর নাম শুনে তিনি এই বলে আল্লাহর শোকর আদায় করলেন যে, আমার রক্তে কোন মুসলমানের হাত রঞ্জিত হয় নাই ।
    ইমাম হোসইন কারবালার মাঠে শাহাদতের পুর্বে বলেন- তোমাদের মধ্যে কি কেও মুসলমান আছো? ইয়জিদি বাহিনী তখন নীরব ছিল!!

    হযরত ওমর (রাঃ) এর শাহাদাত বরণঃ একদিন খুব ভোরে ওমর (রাঃ) নামাযের জন্য মসজিদে যান । আবুলুলু নামক একজন ইরানী পূর্ব থেকেই ওৎপেতে দাঁড়িয়েছিল । ওমর (রাঃ)নামাযের তাকবীর বলার সংগে সংগে সে বিষাক্ত ছুরি দ্বারা তাঁর কাঁধে ও নাভীতে ক্ষীপ্ত হস্তে ছয়টি আঘাত করে।

    হযরত ওছমান (রাঃ) এর শাহাদাত বরণঃ ইবনে বেশর একটি লোহার শলাকা দিয়া খলিফার মস্তকদেশে এক নিদারুণ আঘাত হানিল। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রসূলের এই সম্মানিত প্রতিভূ বিছানায় গড়াইয়া পড়িলেন এবং বলিতে লাগিলেনঃ “বিসমিল্লাহ, আল্লাহর উপর ভরসা করিতেছি।” দ্বিতীয় আঘাত করিল সাওদান ইবনে আমরান। দ্বিতীয় আঘাতে রক্তের ফোয়ারা বহিয়া চলিল। আমর ইবনে হোমকের নিকট এই নৃশংসতা যথেষ্ট মনে হইল না। হত ভাগ্য নায়েবে রসূলের বুকের উপর আরোহণ করতঃ খড়গ দ্বারা আঘাতের পর আঘাত করিতে শুরু করিল। এই সময় অন্য এক নির্দয় তরবারি দ্বারা আঘাত করিল। এই আঘাতে বিবি হযরত নায়েলার তিনটি আঙ্গুল কাটিয়া গেল। এই ধস্তাধস্তির মধ্যেই আমীরুল মোমেনীনের পবিত্র আত্মা জড়দেহ ছাড়িয়া অনস্ত শূন্যে মিলাইয়া গেল। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।
    নৃশংসতার এই পাশবিক দৃশ্য কেবলমাত্র হযরত নায়েলা সচক্ষে দর্শন করিলেন। তিনি হযরত ওসমানকে নিহত হইতে দেখিয়া ঘরের ছাদে আরোহণ করতঃ চিৎকার করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমীরুল মোমেনীন শহীদ হইয়া গিয়াছেন। দীর্ঘ দুই দিন পর্যন্ত খলিফাতুল মুসলেমনীনের পবিত্র লাশ গোর-কাফন ব্যতীত গৃহে পড়িয়া রহিল। তৃতীয় দিন কতিপয় ভাগ্যবান মুসলমান এই শহীদের রক্তাক্ত লাশ দাফন-কাফনের জন্য আগাইয়া আসিলেন। মাত্র সতের জন লোক জানাযার নামায পড়িলেন। এইভাবে আল্লাহর কিতাবের সর্বশ্রেষ্ঠ সেবক, সুন্নতে রসূলের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমিককে জান্নাতুল বাকীতে নিয়া সমাহিত করা হইল।

    হযরত আলী (রাঃ) এর শাহাদাত বরণঃ সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গেই দুইটি তরবারি একত্রে চমকিতে দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে একটি আওয়াজ শোনা গেল; “রাজ্য আল্লাহর, হে আলী, তোমার নয়।” শাবীবের তরবারি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইল, কিন্তু ইবনে মুলজিমের তরবারি তাঁহার ললাটদেশে বিদ্ধ হইয়া মস্তিষ্ক পর্যন্তহ আসিয়া পৌঁছিল।” –(ইহ্ইয়াউল উলুম)
    সঙ্গে সঙ্গে বলিতে লাগিলেন, আততায়ী যেন পলাইতে না পারে। আওয়াজ শুনিয়া চারিদিক হইতে লোক ছুটিল, কিন্তু ইহার ভিতর হইতেই শাবীব পলাইয়া যাইদে সমর্থ হয়।– (ইবনে সাদ)
    আবদুর রহমান তরবারি ঘুরাইতে ঘুরাইতে ভীড়[ ঠেলিয়া দ্রুত অগ্রসর হইতে লাগিল। এইভাবে পলায়ন করার মুখেই মুগীরা ইবনে নওফাল নামক বিখ্যাত বীর পুরুষ দৌড়াইয়া গিয়া তাহার উপর পুরু কাপড় ফেলিয়া দিলেন এবং শূন্যে তুলিয়া মাটিতে আছড়াইয়া ফেলিলেন।– (কামেল)
    আততায়ীর সহিত কথোপকথন:
    আহত আমীরুল মোমেনীনকে গৃহে পৌঁছানো হইল। তিনি আততায়ীকে ডাকাইলেন। তাহাকে সম্মুখে আনা হইলে বলিলেন, হে খোদার দুশমন, আমি কি তোর প্রতি কোন অনুগ্রহ করি নাই? সে বলিল, নিশ্চয়! বলিলেন, ইহার পরও তুই কেন এই কাজ করিলি? আততায়ী বলিতে লাগিল, আমি চল্লিশ দিন যাবত আমার তরবারি ধার দিতেছিলাম এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিতেছিলাম, ইহা দ্বারা যেন তাঁহার নিকৃষ্টতম সৃষ্টিকে হত্যা করিতে পারি।
    আমীরুল মোমেনীন বলিলেন, “তুই এই তরবরি দ্বারাই নিহত হইবি। তুই-ই আল্লাহর নিকৃষ্টত সৃষ্টি।”-(তাবেরী)
    তাঁহার কন্যা উম্মে কুলসুম চিৎকার করিয়া বলিলেন, হে খোদার দুশমন, তুই আমীরুল মোমেনীনকে হত্যা করিয়াছিস। আততায়ী বলিল, “আমি আমীরুল মোমেনীনকে হত্যা করি নাই; অবশ্য তোমার পিতাকে হত্যা করিয়াছি।”

    ইয়াজিদি ষড়যন্ত্র: ইয়াজিদ ছিল আমীর মুয়াবিয়ার(রাঃ) পুত্র৷ সে ছিল মদ পানকারী, অত্যাচারী, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠনকারী ও ভোগ বিলাসী একজন যুবক৷ মানব চরিত্রের এমন কোন বদগুণ নেই যা ইয়াজিদের মধ্যে ছিল না ৷ মুয়াবিয়া তার অযোগ্য পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী শাসক হিসেবে নিযুক্ত করলেও জনগণ তা মেনে নেয়নি ৷ কারণ শয়তানি ও লম্পট আচরণের জন্য জনগণ তার প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ ছিল ৷
    যা হোক, জনগণের মতামতকে না মেনে পিতার মৃত্যুর পর ইয়াজিদ মুসলিম জাহানের শাসক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করে৷ কিন্তু সে জানতো যে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে ইমাম হোসেইনের বায়াত বা আনুগত্য জরুরি ৷ তাই সে ক্ষমতায় বসেই মদীনার গভর্ণর অলিদ ইবনে ওতবাকে হুকুম দেয় যে, ইমাম হোসেইন যেন ইয়াজিদের শাসন মেনে নেয় ৷ আর অস্বীকার করলে যেন তাঁকে হত্যা করা হয়৷
    মদীনার গভর্ণর যখন ইমামকে এ কথা জানাল তখন ইমাম বললেন,’নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবো৷’ তিনি গভর্ণরকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আল্লাহর পরিবর্তে কখনো শয়তানের কাছে আত্মসমর্পন করবেন না৷
    ইমামের বলিষ্ঠ বক্তব্য শুনে ইয়াজিদ শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করল৷ এ অবস্থায় তিনি বাধ্য হয়ে মক্কায় চলে যান৷ কিন্তু মক্কাতেও ইয়াজিদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকল না৷ ইয়াজিদ কাবার পবিত্র প্রাচীরের মধ্যে গোপনে ইমামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল৷ এ সময় কুফা থেকে হাজার হাজার চিঠি আসে ইমামের কাছে৷ তারা ইমামকে কুফা যেতে আবেদন জানায় যেন তারা জালেম ইয়াজিদি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারে৷ এ অবস্থায় কাবার পবিত্রতা রক্ষা এবং নিরাপত্তার খাতিরে ইমাম তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন৷চলবে…