আত্রাইয়ে পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ জনগণ

    0
    227

    নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাইয়ে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র দাবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও রৌদ্রের সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং। ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নাম মাত্র আকাশে মেঘ হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের দেখা পায়না গ্রাহকরা। উপজেলার প্রায় ৪৬ হাজার পাঁচশত গ্রাহক বিদ্যুতের লুকোচুরি থেকে নিষ্কৃতি চায়। কবে নাগাদ এই ভোগান্তির অবসান ঘটবে এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন?

    উপজেলা সদর ফিডারে কিছুটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও অন্যান্য পাঁচটি ফিডারের গ্রাহকদের যেন কোন মুল্যায়নই নেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে। ফলে এসব ফিডারের গ্রাহকদের একদিকে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন অপর দিকে কলকারখানায় হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদন। প্রায় মাসাধিককাল ধরে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে প্রায় ৪৬ হাজার পাঁচ শত গ্রাহক চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিয়েও কোন ফল হচ্ছে না উপজেলা বাসীর।

    জানা যায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৬টি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ ৬ ফিডারের আওতায় রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার পাঁচ শত গ্রাহক। আবাসিক, বাণিজ্যিক, দাতব্য ছাড়াও রয়েছে সেচ সংযোগ। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ায় সকল স্তরের গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁ জেলার আত্রাই রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন মাছ বাজার এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বরফ মিল। যে বরফ দিয়ে সংরক্ষিত করা হয় এখানকার শতশত টন মাছ। আর এ মাছ বাজারজাত করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

    সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে বরফ মিলগুলোতে বরফ উৎপাদন কমে যাওয়ায় মাছের বাজারে ধ্বস নেমেছে। সেই সাথে মিল মালিকদের আর্থিক লোকসান গুণতে হচ্ছে।

    উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের আজাদ সরদার বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমরা দৃর্বিসহ জীবন যাপন করছি। ফ্রিজ ও পানির মোটর চালাতে না পেরে প্রায়ই অন্যত্র থেকে পানি এনে বাসার প্রাত্যহিক কাজ করতে হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজিটালাইষ্ট ও ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়েছে।

    উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের মেহেদি হাসান রুবেল বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আকাশে একটু মেঘ হলেই বিদ্যুৎ থাকছে না। উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ থাকলেও আমরা মফস্বল এলাকার গ্রাহকরা খুব কমই বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। যেন তারা আমাদের সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ করেন। তিনি আরো বলেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , বিপনী বিতান ও কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সন্মূখীন হচ্ছে।

    উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রার শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের কোমলমতি শিশুদের লেখা পড়ায় মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।

    এ ব্যাপারে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আত্রাই জোনের এজিএম মো: ফিরোজ জামান বলেন, নওগাঁ মেইন লাইনে বিদ্যুতের কাজ চলছে। এর ফলে এ বিভ্রাট হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাভেদে বারবার লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। মেইন লাইনের কাজ শেষ হলেই আর লোডশেডিং থাকবে না এমটিই জানালেন তিনি।

    এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এমন বক্তব্য ৪৬ হাজার পাঁচ শত গ্রাহক মানতে নারাজ। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষের এ দায়সারা বক্তব্য অনেকটা অরণ্য রোদনের মতো। কবে নাগাদ যে পল্লী বিদ্যুৎ সরবাহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে, গ্রাহকগণ এ নিয়েই উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন।