মৌলভীবাজারে ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযানে এসে কর্মকর্তা আটক

    0
    253

    “ব্যাবসায়িদের দাবী অভিযানের আগে উৎকোচ দাবি করেন,না দিলেই জরিমানা।কোথাও এমন উদাহরণ নেই বলে  উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন উপ-পরিচালক মো. আল আমিন”

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমিনকে অভিযানের সময় অবরুদ্ধ করে রাখে মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের বিলাশসহ বিভিন্ন দোকানের ব্যবসায়ীরা।ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ব্যবসায়ীদের হাতে অবরুদ্ধের অভিযোগ করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমীন। এসময় ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে প্রায় ২ ঘন্টা সড়ক অবেরোধ করে রাখেন। পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন ব্যবসায়ীরা।

    বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জেলা শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের বিভিন্ন দোকান ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সরেজমিনে দেখতে যান ভোক্তা অধিকারের উপপরিচালক মো. আল আমিন।এ সময় ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ও নান অনিয়মের কারনে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে জরিমানা করেন।

    অপরদিকে ব্যবসায়ীরা জানান কিছু দিন পূর্বে অভিযানের পর আবারো একই দোকান গুলোতে ঈদের আগে হঠাৎ অভিযান তাদের সন্দেহ হয়। তাই ব্যবসীয়ারা তার প্রতি পণ্যের দাম ও মান নিয়ে কথা কাটাকাটি করেন। তারপরও তিনি কয়েকটি দোকানে বড় অঙ্কের জরিমানা করতে থাকেন।
    একপর্যায়ে তিনি বিলাসে বিদেশী পারফিউম ও অন্যান্য পণ্যের দাম অতিরিক্ত রাখা হয়েছে এমন মন্তব্য করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন বিলাসের মালিক সুমন আহমদ ও সুহাদ আহমদ। ভোক্তা অধিকারের ওই কর্মকর্তা তখন ক্ষেপে গিয়ে জরিমানার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে এমন অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ব্যবসায়ীরা উপ-পরিচালক মো. আল আমিনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সড়কে অবস্থান নেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঈদের কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ ক্রেতারা। পরে জেলা প্রশাসক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় পুলিশ ভোক্তা অধিকারের উপ-পরিচালকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
    ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন জরিমানার সময় শুভ্র ভট্রাচার্য্য নামের একই ব্যক্তি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান প্রতিবারই অভিযানে আসলে অভিযোগকারী ওই একই ব্যক্তিকে দেখানো হয়। তারা বলেন ভোক্তা অধিকারের ওই উপ পরিচালক আল আমিন ও তার সাথে একটি চক্র আছে। অভিযোগকারী শতকরা ২৫ ভাগ টাকা পায়।

    বিলাসের সত্তাধিকারী সুমন আহমদ ও সুহাদ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, “কিছু দিন আগে তাদের দোকানে অভিযান দেন ওই উপ-পরিচালক। পণ্যের ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা দেখানোর পরও তিনি কারণ ছাড়াই জরিমানা আদায় করেন। তারা জানান একটি বিদেশী ব্র্যান্ডের কোম্পানীর নকল পণ্য ধরে তারা তার কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলেও তিনি আমলে নেননি। অথচ অভিযোগ ছাড়া তিনি ঢালাও ভাবে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানী করছেন।” এমবির স্বত্তাধিকারী ডা. আব্দুল আহাদ জানান তার প্রতিষ্ঠানে বিদেশী পণ্যের দাম ও মান ঠিক থাকার পরও ওই উপ-পরিচালক জরিমানা করেছেন। তিনি বলেন, তার পরিচয় ও অভিযোগকারীকে এমন বিষয় জানতে চাইলে তিনি তার সাথে খারাপ আচরণ করেন।
    স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, অভিযানের আগে উৎকোচ দাবি করেন উপ-পরিচালক মো. আল আমিন। যারা তাকে উৎকোচ দেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ পেলেও তিনি অভিযানে যান না। ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি করেন।
    এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, যে সকল প্রতিষ্ঠানে অভিযান করা হয়েছে সে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের অতিরিক্ত দামসহ নানা সমস্যা ছিল। তাই আইনানুযায়ী ওই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে।

    তিনি বলেন “ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার এলাকায় অভিযান চলছিল। এ সময় রান্নাঘর অপরিষ্কার, পোকা বেগুন দিয়ে বেগুনি তৈরি, ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে চৌমুহনী রাজমহল মিষ্টি দোকানকে ৩০ হাজার টাকাসহ আরও কয়েক দোকানিকেসহ বাউটন গ্যালারিকেও জরিমানা করা হয়।”

    “এরপর বিলাস ডিপার্টমেন্টালে বিদেশি প্রসাধনীতে নিজেরা মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি মূল্য নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সময় এই স্টোরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই স্টোরের মালিক সোহাদ আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।”

    তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ উৎকোচের যে অভিযোগ তুলেছেন তা ডাহা মিথ্যা। ৬ বছরের মৌলভীবাজার কর্মজীবনে কোথাও এমন উদাহরণ নেই বলে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।”

    ঘটনার সময় এক ব্যবসায়ী কামরুল হাসান আফসোস করে বলেন “যেখানে সিন্ডিকেট সেখানে অভিযান করে লাভ নেই গত বছরে শ্রীমঙ্গলেও অভিযানের সময় এরুপ ঘটনা ঘটে, আসলে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক নিয়মিত ব্যবস্থা না থাকায় এবং শুধু মাত্র ঈদ মৌসুমে লোক দেখানো অভিযান করার কারনে জনগন এটিকে ভালো চোখে দেখেনা।তিনি বলেন ভেজালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান হলে জনগণের সহযোগিতা পাওয়া যাবে।”

    এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানের সময় কর্মকর্তা লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন।”