আমার সিলেট ডেস্ক: এক বছর পূর্তিতে একটি গঠনমূলক ফিচার গণমাধ্যম একটি দেশের চিন্তা, চেতনা, মতামত ও বাস্তবতার দর্পণ। সমাজের সুখ—দুঃখ, রাষ্ট্রের অগ্রগতি—ব্যর্থতা, মানুষের আশা—হতাশা—সবকিছুই গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। আর এই বিশাল দায়িত্ব পালনের পেছনে থাকেসাংবাদিকের কলম, তার সাহস, ও স্বাধীনতার পরিবেশ। এই স্বাধীনতাই সাংবাদিকতাকে করে তোলে সত্যের মুখপাত্র।
আর সেই সত্য প্রতিষ্ঠায় আমার পেশাগত যাত্রা শুরু হয়েছিল সিলেট থেকে—একটি শহর, যা শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্যই নয়, গণমাধ্যমে তার সমৃদ্ধ ভূমিকার জন্যও পরিচিত। সিলেটের সেই শুরু গণমাধ্যমে আমার কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়েছিল সিলেটের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায়। সেসব পত্রিকার মধ্যে দুটি ছিল আমার কাছে বিশেষ: দৈনিক সবুজ সিলেট এবং দৈনিক শুভ প্রতিদিন। কারণ সেসব পত্রিকায় ছিল মত প্রকাশের অসাধারণ স্বাধীনতা—একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
সেখানে আমি উপলব্ধি করেছি—সাংবাদিকতা শুধু খবর লেখা নয়; এটি একটি দায়িত্ব, একটি অঙ্গীকার, কখনো কঠিন, কখনো ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সবসময় মর্যাদাপূর্ণ। স্বাধীনভাবে লেখার সুবিধা আমাকে দিয়েছে সাহস, দিয়েছে চিন্তার পরিসর, দিয়েছে পেশাগত আত্মবিশ্বাস।
জাতীয় দৈনিকে পদার্পণ পরবর্তীতে পেশাগত যাত্রা আমাকে নিয়ে গেছে জাতীয় পরিসরে। দৈনিক মানবজমিন ছিল সেই নতুন দরজা। জাতীয় গণমাধ্যমে কাজ করা মানেই বড় দায়িত্ব, বড় চ্যালেঞ্জ, এবং অনেক বেশি চাপ। কিন্তু মানবজমিনে আমি পেয়েছি সেই পুরোনো পরিচিত স্বাধীনতার বাতাস। মুক্তভাবে লেখার সুযোগ, নির্ভয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার—একজন সাংবাদিকের জন্য যা সত্যিই অনন্য। দীর্ঘ সময় সেখানে কাজ করেছি আরামে, আত্মবিশ্বাসে এবং লেখার স্বাধীনতায়। আজও আমি গর্বের সাথে বলতে পারি—মানবজমিনের সেই সময় আমাকে দিয়েছে পেশাগত পরিণতি, দিয়েছে সত্যের পক্ষে দাঁড়াবার শক্তি।
রূপালী বাংলাদেশের দিকে নতুন পথচলা
কর্মজীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখন চলছে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে। একটি নবীন দৈনিক, যার বয়স মাত্র এক বছর। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এই এক বছরে রূপালী বাংলাদেশ যে গ্রহণযোগ্যতা, কৃতিত্ব এবং গণমানুষের আস্থা অর্জন করেছে—তা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে খুবই ব্যতিক্রম। সবচেয়ে বড় কথা—এখানে আমি আবারও পেয়েছি হাত খুলে লেখার স্বাধীনতা। প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদকসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে দিয়েছে নির্মোহভাবে, সত্য ও দায়িত্ব নিয়ে লেখার পরিবেশ। জাতীয় দৈনিকে এমন উন্মুক্ত স্বাধীনতা বিরল—এটাই সত্য।
রূপালী বাংলাদেশের কর্মীরা যে স্বাধীনতা ভোগ করেন, তা সত্যিই ঈর্ষণীয়। এই স্বাধীনতাই সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করে, সংবাদকে করে প্রাণবন্ত, আর গণমাধ্যমকে করে জনগণের সত্যিকারের প্রতিবিম্ব। এক বছরে কেন রূপালী বাংলাদেশ আলাদা? একটি দৈনিকের পথচলার প্রথম বছর সাধারণত প্রতিষ্ঠা, পরীক্ষা এবং সংগ্রামের বছর। কিন্তু রূপালী বাংলাদেশ তার প্রথম বছরেই জনমানুষের এত কাছে পৌঁছেছে, এত আস্থা অর্জন করেছে—যা অনেক প্রতিষ্ঠিত দৈনিকও সহজে পারে না।
কারণ—সংবাদে নির্মোহতা ও নির্ভুলতা, গণমানুষের কথা প্রাধান্য দেওয়া, জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান
যুগোপযোগী উপস্থাপনা ও ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতার দক্ষতা এই পত্রিকা ধীরে ধীরে শুধু একটি সংবাদমাধ্যম নয়, একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হচ্ছে।
ভিজ্যুয়াল যুগে আত্মপ্রকাশ আমরা এখন ভিজ্যুয়াল যুগে—ভিডিও, গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া—সবকিছুর সমন্বয়ে নতুন ধারার সাংবাদিকতা। রূপালী বাংলাদেশ ঠিক এই সময়েই আবির্ভূত হয়েছে, যখন সাংবাদিকতার রূপ বদলে যাচ্ছে। সংবাদ শুধু পড়া নয়—দেখা, অনুভব করা, বিশ্লেষণ করার যুগে প্রবেশ করছে দেশ। আর সেই রূপান্তরের পথে রূপালী বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে দৃঢ়ভাবে।
রূপালী বাংলাদেশের দর্শন এই পত্রিকার মৌলিক লক্ষ্য স্পষ্ট—দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সত্যের জন্য। এটি শুধু খবর পরিবেশন করে না; এটি দেশ, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রহরী হতে চায়। সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি, বৈষম্য ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় নির্মোহভাবে। একটি গণমাধ্যমের কাছে জাতি যে প্রত্যাশা করে—রূপালী বাংলাদেশ সেই অঙ্গীকার নিয়েই এগোচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রাপ্তি: স্বাধীনতা
এ পত্রিকায় কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি—স্বাধীনতা শুধু একটি সুবিধা নয়, এটি একটি শক্তি। যখন সম্পাদকীয় নীতিতে থাকে নৈতিকতা, যখন সংবাদ নিয়মিতভাবে সত্যকে অনুসরণ করে—তখন একজন সাংবাদিক তার সেরা কাজটি করতে পারেন। রূপালী বাংলাদেশ সেই স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, যা সাংবাদিকদের জন্য যেমন গর্বের, দেশের গণমাধ্যমের জন্যও তেমন উদাহরণ।
এক বছর: নতুন ইতিহাসের সূচনা এক বছরে রূপালী বাংলাদেশের সাফল্য বলে দেয়—গণমাধ্যম শুধুই বয়স বা ইতিহাসে বড় হয় না; বড় হয় নীতিতে, কর্মে ও মানুষের আস্থায়। প্রথম সারির দুয়েকটি দৈনিক ছাড়া এমন দৃঢ় অবস্থান খুব কমই দেখা যায়। এই এক বছরে রূপালী বাংলাদেশ: ✅ পাঠকের কাছে পৌঁছেছে হৃদয়ের ভাষায়
সমাজের কথা বলেছে নির্ভয়ে, জাতীয় স্বার্থকে দিয়েছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব, সাংবাদিকদের দিয়েছে মর্যাদা ও স্বাধীনতা,জন্মদিনের অঙ্গীকার
আজ রূপালী বাংলাদেশের প্রথম বর্ষপূর্তি।
এই জন্মদিন শুধু আনন্দের নয়—এটি দায়িত্বেরও দিন। সামনে পথ আরও দীর্ঘ, আরও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। কিন্তু আমার বিশ্বাস—এই দৈনিক তার আদর্শিক অবস্থান ধরে রাখবে। দেশ ও দশের জন্য নিবেদিত থাকবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার হয়ে দাঁড়াবে সত্যের পক্ষে।
গণমাধ্যম শুধু খবর ছাপায় না—তা ইতিহাস গড়ে। রূপালী বাংলাদেশ সেই নতুন ইতিহাসের পথে হাঁটছে। একজন কর্মী হিসেবে আমি গর্বিত, আনন্দিত, এবং আশাবাদী। শুভ জন্মদিন, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ। তুমি আলো হয়ে থাকো সত্যের পথে, মানুষের পাশে, দেশের স্বার্থে।
লেখক:কবি ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন রনি
