বড়লেখা প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই ভাই নিহতের ঘটনায় জড়িত জমির উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশি প্রহরায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আটক জমির উদ্দিন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বিওসি কেছরিগুল গ্রামের মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে।
এদিকে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) নিহত দুই ভাইয়ের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যা ৬টায় খলাগাঁও বাজার সংলগ্ন শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া গৌরনগর দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে দাফন শেষে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এর আগে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বিওসি কেছরিগুল (মাঠগুদাম) গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতরা হলেন—বিওসি কেছরিগুল গ্রামের মৃত নিমার আলীর ছেলে কুয়েত ফেরত জামাল উদ্দিন (৫৫) এবং তার ছোট ভাই কৃষক আব্দুল কাইয়ুম (৪৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিপক্ষ জমির উদ্দিন গংদের দীর্ঘদিনের পূর্ব বিরোধ ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় জামাল উদ্দিনদের বাড়ির পাশের ফসলি জমিতে ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে কাইয়ুমের সঙ্গে প্রতিপক্ষের ঝগড়া শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বড় ভাই জামাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে গেলে একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই ভাইয়ের ওপর হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
হামলার সময় প্রতিপক্ষের জমির উদ্দিনও আহত হন। তাকে প্রথমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত জামাল উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেগমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। অপরদিকে নিহত আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দুই পরিবারই গভীর শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছে।
নিহতদের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ডে জমির উদ্দিনসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান খান রোববার সন্ধ্যায় জানান, নিহত দুই ভাইয়ের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় একজনকে আটক করা হয়েছে এবং তিনি পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানায়, ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও অপপ্রচারমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডটিকে রাজনৈতিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যাচাই ছাড়া এমন তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
