সালেহ আহমদ (স’লিপক): আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় সংলাপে এবং জুলাই সনদে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ দেয়া, দূর্নীতিবাজ কালোর টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, মাজার মসজিদ খানকায় হামলায় জড়িতদের বিচার, জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করা এবং মবসন্ত্রাস থামানো সহ ১৩ দফা দাবিতে সিলেটে বৃহত্তর সুন্নী জোটের বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বৃহত্তর সুন্নী জোট সিলেট জেলার উদ্যোগে জনসভা প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দীন আল কাদেরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর চেয়ারম্যান পীরে তরিকত ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভান্ডারী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মহাসচিব শায়খুল হাদিস অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দের মধ্যে জননেতা স ম হামেদ হোসাইন, আল্লামা রফিকুল ইসলাম জাফরী, মুফতি মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুরাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ শাহ আলম, মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান মাহমুদী, মুফতি মোঃ আব্দুল মুমিন আল আবেদী, মাওলানা শেখ শফিকুল হাসান রেজভী, মাওলানা মুহাম্মদ ওলীউর রহমান, জাকির হোসেন মুন্সি, শেখ মাসুক আহমেদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর নেতৃবৃন্দের মধ্যে পীরে তরিকত আল্লামা শাহ জালাল আহমদ আখঞ্জী, অধ্যক্ষ আল্লামা আলী মোহাম্মদ চৌধুরী, অধ্যাপক মাওলানা শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সোলাইমান খান রব্বানী, অধ্যাপক মাওলানা নুরুল্লাহ রায়হান খান, এইচ এম মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আহমদ আলী হেলালি, অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার, কাজি মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন, ডাঃ এস এম সরওয়ার, মাওলানা আব্দুল মুহিত হাসানী, মাওলানা শেখ মোঃ খাইরুল আমিন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন জালালি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর নেতৃবৃন্দের মধ্যে পীরজাদা কাজী আশিকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা রুহুল আমিন ভূইয়া চাঁদপুরী, মোঃ আসলাম হোসাইন, মোঃ ইব্রাহিম মিয়া, মাওলানা হাফেজ কেরামত আলী, মোঃ আব্দুর রহিম, শাহ আবুল ফজল মোঃ মাসউদ, মহালদার মোঃ সুহেল আহমেদ ভান্ডারী, ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী, মোঃ আলী হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন জনগণের নিকট অধিকতর প্রত্যাশিত থাকলেও তা নিয়ে নানামাত্রিক তালবাহানা ক্রমাগত জনমনে আস্থার সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি মহল নির্বাচন নিয়ে রকমারি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অথচ এ মূহুর্তে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।
নির্বাচনের পূর্বে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা না হলে অতীত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তিই ঘটবে বলে উল্লেখ করে জোটের শীর্ষ নেতা ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, দেশে এখনো মব সন্ত্রাস চলমান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলো এখনো প্রোপারলি ফাংশান করছে না। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার হয়নি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন তার বক্তব্যে বলেন, সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ ১৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা পায় নি। এ যাবত প্রায় ৪০০ শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানি-রপ্তানি শ্লথ হয়ে পড়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ অপেক্ষাকৃত হৃাস পেয়েছে। অভিশপ্ত বেকারত্ব বর্ধিষ্ণু। দূর্নীতির পারদও উর্ধ্বমুখী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতিপয় রাজনৈতিক দলের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশ ও জাতিকে ক্রমাগত নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর চেয়ারম্যান পীরে তরিকত ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী তার বক্তব্যে বলেন, মানুষ আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। গত ১৫ মাসে সারা দেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ বহু ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সময়ে কবরের লাশও নিরাপদ নয়। কবর থেকে লাশ তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতে কখনো দেখা যায়নি। দেশে যেন নব্য জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মহাসচিব শায়খুল হাদিস অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন, সরকার রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিষয়সমূহ পাশ কাটিয়ে সংস্কারের নামে নির্দিষ্ট একটি মহলকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে প্রতিষ্ঠা করছে। সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ ১৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি দেশের রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আনতে পারে নি।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিচারকেন্দ্রিক অনিয়ম-দূর্নীতি, যেমন মামলা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য এসবের ক্ষেত্রে পূর্বাবস্থা বহাল রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দূর্নীতি প্রতিরোধেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ছাঁটাইকৃত সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার চাকুরীতে পূনর্বহালের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এর অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েনে প্রভাবিত ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনও কি আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনে পরিণত হচ্ছে? নাকি জাতি আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা ইতোমধ্যে জুলাই সনদের বিশ্বস্ততা নিয়েও অংশীজনদের মধ্যে বিরাট বিভাজন দেখা দিয়েছে।
বৃহত্তর সুন্নী জোটের জনসভায় ঘোষিত ১৩ দফার দাবিগুলো হল- ০১) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, ০২) রাষ্ট্রীয় যেকোনো বৈঠকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে দল নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, ০৩) নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা, ০৪) দূর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, ০৫) সিলেটকে রাষ্ট্রীয়ভাবে “আধ্যাত্মিক রাজধানী” হিসেবে ঘোষণা করা, ০৬) সিলেট-ঢাকা ছয় লেন সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং সিলেট-ঢাকা রুটে ডাবল রেললাইন চালু করা, ০৭) ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকার সুরক্ষা প্রদান এবং পর্যটন খাতে জাতীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা, ০৮) সিলেটের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলনকৃত গ্যাস সিলেট বিভাগের সব জেলায় সমভাবে বণ্টন করে ঘরে ঘরে নতুন গ্যাস সংযোগ চালু করা, ০৯) জুলাই ২৪ ও জুলাই পরবর্তী সময়ে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা, ১০) পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ১১) চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা ও জাতীয় স্বার্থে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে কোনো প্রকার করিডোর না দেওয়া, ১২) মাজার, খানকা, দরবার শরীফ, ধর্মীয় নেতাদের ও গণ-মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ১৩) মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
মাওলানা আহমদ আলী হেলালি, শেখ মাসুক আহমেদ, মুহাম্মদ নূরুল হক চিশতী, শাহ আবুল ফজল ও মোঃ আব্দুর রহিম এর যৌথ পরিচালনায় এসময় আল্লামা সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম, আল্লামা আফছার আহমদ তালুকদার আল আবেদী, মাওলানা শেখ মশাহিদ আলী আল আবেদী, হাজী রফিকুল ইসলাম নাজিরী, মোঃ জামাল উদ্দিন আহমেদ, মুফতি ফারুক আহমেদ, মাওলানা শাহ্ মহিবুর রহমান জালালী আল আবেদী, হাফিজ ইলিয়াস আহমদ, হাফিজ আব্দুল মতিন, মাওলানা রমজান আলী, মোঃ ময়নুল ইসলাম খান, মাওলানা আবুল কালাম খান, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা আবু সুফিয়ান আল আবেদী, কবি মোঃ সালেহ আহমদ (স’লিপক), মুফতি মোজাহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, আব্দুল আজিজ, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ময়নুল ইসলাম, জাকির হোসেন শাকিব, মোঃ কাউসার আহম্মদ, মাওলানা শমসের আলী মুজাদ্দেদী, রেজাউল করিম, জামাল খান সহ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও জোটভুক্ত অন্যান্য দল এবং সহযোগী অঙ্গসংগঠন সমুহের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
