আমার সিলেট রিপোর্ট: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজন এবং নরসিংদীতে দুই জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে, এর সাথে অর্থনৈতিক কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
আজ ২১ নভেম্বর শুক্রবার সকালে যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে তার কেন্দ্র ছিল রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী নরসিংদী জেলার মাধবদী এলাকায়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রিখটার স্কেলে পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার এই ভূমিকম্প গত কয়েক দশকে দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।
এর আগে সিলেট, নোয়াখালী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। তবে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ঢাকার আরো কাছে নরসিংদীতে!
ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করেন এমন অনেকে বিভিন্ন মিডিয়াতে বলেছেন, এর আগে ঢাকার এত কাছে এই মাত্রার ভূমিকম্প উৎপত্তি হওয়ার ঘটনা বিরল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলছেন, “বাংলাদেশের মধ্যে টেকটোনিক প্লেটের যে পাঁচটি সোর্স আছে তার মধ্যে নোয়াখালী থেকে শুরু করে কক্সবাজার, নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং আরেকটি সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে”।
নোয়াখালী থেকে সিলেট, এই অংশে যে বড় ফাটল রয়েছে তারই একটি ছোট অংশ নরসিংদী, এর ফলে নরসিংদী এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়া অস্বাভাবিক নয় বলেও মনে করেন মি. আনসারী।
অপরদিকে উপদেষ্টা রেজওয়ানা চৌধুরী বলেছেন, গত পাঁচ বছরে যতবার ভূমিকম্প হয়েছে এত শক্তিশালীভাবে ভূমিকম্প আমরা এর আগে অনুভব করিনি,” এমন মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এটি বাংলাদেশের জন্য একটা সতর্কবার্তা বলেও মনে করছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন ভবনে বিল্ডিং কোড মানা হলেও যে ভবনগুলো আগে তৈরি করা সেগুলোর বেশিরভাগই কোনো নিয়ম না মেনে গড়ে তোলা হয়েছে।
“রাজউকের পরিসংখ্যানে ৯০ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোডের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বলে যে তথ্য দেয় সেগুলো নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন,” বলেও মন্তব্য করেন রেজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা বলেন, সড়ক বা ভবন তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয়। জলাশয় এবং পাহাড়ে আর হাত না দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অপরদিকে ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধ্বসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।
