অন্ধকারে শিকার সহজলভ্য

    0
    213

    আমারসিলেট24ডটকম,১৯জানুয়ারীঃঅস্থিরতা চারদিকে। সবখানে আতঙ্ক। সব মানুষের মধ্যে। কখন কি হয়। কখন কোন গাড়ি পেট্রোলবোমার শিকার হয়, কেউ জানে না। পুলিশ-র্যাব কাকে কখন গ্রেফতার করে তাও অজানা। সহিংসতা সর্বত্র। মুখোমুখি দুই পক্ষ। কেউ এক চুলও ছাড় দিতে রাজি নয়। দেশ গোল্লায় যাক। ক্ষমতায় থাকতে হবে। ক্ষমতায় যেতে হবে।
    এক পক্ষ চাচ্ছে আরেক পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। এ যেন দুই রাজনৈতিক দলের লড়াই নয়। জাতিগত লড়াই। এ যেন আফ্রিকার কোনো দেশ হয়ে যাচ্ছে। সরকারি দল ভাবছে ক্ষমতা না থাকলে শেষ হয়ে যাব। বিরোধীদল ভাবছে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে নামাতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

    সরকারের মন্ত্রীরা এমন ভাষায় কথা বলছেন, যা শুনে যে কেউ আঁতকে উঠবে। রোববার খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘অস্ত্র দিয়ে দমন করা হবে’। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘২০১৯ সালের একদিন আগেও নির্বাচন নয়।’ তাদের এই যুদ্ধংদেহী বক্তব্যে দেশবাসী হতাশ এবং আতঙ্কিত। রাজনীতিবিদরা এত দায়িত্বহীন হন কিভাবে? ভাবতে অবাক লাগে।
    পেট্রোলবোমা। এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম। কে যে কখন শিকার হয় তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। পুলিশও এই আতঙ্ক থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তারাও আক্রান্ত হচ্ছে। আর পাবলিকতো কোনো ছার। রোববারও ইডেন কলেজের দুই ছাত্রী পেট্রোলবোমার শিকার হয়েছেন। তারা এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শুয়ে কাতরাচ্ছে।
    দুই দলের মনোভাব দেখে মনে হয়- তারা কেউ সমাধান চান না। প্রয়োজনে সব শেষ হয়ে যাক। তাতেও যেন তাদের কিছু আসে-যায় না। শেষ করে দেবো। নিশ্চিহ্ন করে ফেলবো। উৎখাত করব। রাজনীতি থেকে চিরবিদায় করে দেবো। এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।
    বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতাটা কি? দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কোনো দলকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। সরকারের এতো অত্যাচার ও নিপীড়ন সত্ত্বেও গত ৬ বছরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ যোগ দেননি। আবার আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়ারও কোনো নজির নেই। দেশের মানুষ আসলে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সরকারের বিরোধিতার কারণেই যদি কেউ সন্ত্রাসী হয়, তাহলে তো দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষই সন্ত্রাসী। এটা কি সম্ভব?
    আমরা দেখেছি, যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা বাস্তবতা ভুলে যায়। ক্ষমতার দম্ভে বিবেচনাবোধ লোপ পায়। প্রতিপক্ষকে হুমকি দিতে ভালোবাসে। কিন্তু হুমকিতে কি সব হয়। হয় না। যেমন এখন হচ্ছে না।

    সরকার বলছে বিরোধীদলকে দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। অবরোধ হচ্ছে না। বিরোধীদল রাস্তায় নামছে না- একথা মানতে হবে। বিরোধীদলের যে জনসমর্থন সে অনুযায়ী তাদের লোকজন মাঠে নেই। কিন্তু অবরোধ যে হচ্ছে না সেটি বলার সুযোগ নেই। গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পাহারায়। স্কুল-কলেজে পড়াশোনা নেই। আর ব্যবসা তো নেইই।
    বাণিজ্যমেলায় বিআরবি কেবল স্টল দিয়েছে ১০ লাখ টাকা খরচ করে। দিনে দু’ হাজার টাকাও বিক্রি নেই। এটি একটি উদাহরণ। আসলে সারাদেশের চিত্রটি ঠিক এরকম। পর্যটন শিল্পের ধসের খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন। পোল্ট্রি শিল্পের ভয়াবহ লোকসানের খবর দিয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বাসস। এর অর্থ হলো সরকার নিজেও স্বীকার করছে ব্যবসা নেই। একটি দেশে যদি ব্যবসা না থাকে, তাহলে সেই দেশ চলে কি করে?
    আসলে চলছে না। সবকিছু স্থবির। আর এই স্থবিরতার সঙ্গে যোগ হয়েছে আতঙ্ক। অনিশ্চয়তা। স্বপ্নহীন এক ভবিষ্যৎ।
    রাজনীতিবিদরা দেশবাসীকে কোন গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছেন তা কেউ জানে না। গহ্বরের অন্ধকারে যদি দেশ তলিয়ে যায়, তাহলে রাজনীতিবিদরা কি ভেসে থাকবেন? থাকবেন না। তারাও তলিয়ে যাবেন। এর উদাহরণতো ভুরি ভুরি।
    এভাবে চলবে না। চলতে পারে না। অনন্তকাল ধরে এই স্থবির অবস্থা দেশবাসী মেনে নেবে এমনটি ভাবার সুযোগ সরকার বা বিরোধীদল কারোরই নেই। দিন যাবে পানি ঘোলা হবে। আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে শিকারিরাও সজাগ হয়ে উঠবে। এখনই যে উঠেনি, তাইবা কে জানে। তাদের দ্বারা সরকার ও বিরোধীদল যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ, পানি ঘোলার কার্যকরণটি বেশ দ্রুতই হচ্ছে। অন্ধকার নেমে আসছে। অন্ধকারে শিকার সহজলভ্য।
    ওইরকম শিকারের ঘটনায় শুধু রাজনীতিবিদরা আক্রান্ত হন না, আক্রান্ত হয় গণতন্ত্র, দেশ ও জাতি। সূত্রঃনতুন বার্তা।