আসুন,হতভাগা মেধাবীদের স্বপ্নপূরণে হাত বাড়িয়ে দিই

    0
    483

    আমারসিলেট24ডটকম,২৩মে,শাব্বির এলাহীঃ এ বছর এস,এস,সি পরীক্ষায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর এম,এ,ওহাব উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী মিতা নুর নাহার।বাবা থেকেও নেই,মেয়ের জন্ম দিয়ে সেই কবে মাকে ছেড়ে অন্য মাকে নিয়ে অন্য সংসার করছেন। সন্তানের খবরও রাখেন না।অভাগা মা আপ্তারুন বেগম মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে ঠিকা ঝিয়ের কাজ করে গলদঘর্ম শ্রমে আর একটু সুখের আশায় মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন।

    মা মেয়ে থাকেন নৈনাছড়ার পাড়ে অন্যের বাড়ীতে।কোন রকমে মাথা গোঁজা আর কি।মেয়ে মিতা নুর খেয়ে না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করে প্রতিদিন নিয়ম করে স্কুলে যাচ্ছে,স্কুল থেকে ফিরে বিকালে ঘর সংসারের টুকিটাকি সেরে সন্ধ্যায় ছনবাঁশের ঝুপড়িঘরে কুপির আলোয় গভীর রাত পর্যন্ত পড়তে বসে।ভালো রেজাল্ট করে মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে আশংকায় ভূগছে মিতা নুর।

    এমনিতেই এস,এস,সির ফরম ফিল-আপ,কোচিং,স্কুলড্রেস,খাতা কলম ইত্যাদির যোগান দিতে গিয়ে চড়া সুদে অনেক ঋণ করতে হযেছে মাকে,সে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় সাফল্যের আনন্দ ম্লান মামেয়ের।কলেজে ভর্তি,পুরো দুই বছর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা মিতা নুরের জন্য অসম্ভবই বৈকি।শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া শুরু করেছিলো আমাদের হাবিব।দুবেলা খেয়ে না খেয়ে,নিজের পড়ার ফাঁকে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরছ যুগিয়ে এবার কমলগঞ্জের সফাত আলী সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৩.৫৯ পেয়ে পাস করেছে সে।   তবে কলেজে ভর্তি আর বাকি জীবনের লেখাপড়া নিযে চিন্তিত হাবিবসহ তার পরিবারের লোকজন।

    অশ্রুরূদ্ধ কন্ঠে হাবিবের প্রশ্ন এ প্লাস পাইনি বলে কি কেউ আমায় পড়তে দিবে না ? তার সহায় সম্বলহীন বাবা শ্রীনাথপুর গ্রামের হতদরিদ্র হামিদ মিয়ার ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই।বড় ছেলে হাবিব ছাড়া তার আরও চার সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বিশাল সংসারের ঘানি টানতে পারছেন না আর।খালার বাড়ীতে থেকে পরীক্ষা দিয়েছে।কিন্তু আর পড়াতে দেবে কে? তাও এ প্লাস অর্থাৎ জিপিএ ৫ পায়নি ছেলে। প্রতিদিন আধাপেট খেয়ে প্রায় চারকিলোমিটার দুরের মাদ্রাসায় পায়ে হেঁটে ক্লাস করে আবার ফিরতিপথে চারকিলোমিটার হেঁটে ক্লান্তশ্রান্ত হাবিব দুই/একটা টিউশনি করে বাড়ী পৌঁছে সন্ধ্যা পেরিয়ে।নিজে প্রাইভেট পড়তে পারেনি,কোচিংও নেই।

    অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো একটু সুযোগ পেলে হয়তো হাবিব শুধু জিপিএ ৫ নয়,গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেতো। তাই বলে কি সে উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতে পারে না? তবু অসীম আশায় বুক বেঁধে আছেন হাবিবের মা সাজিয়া বেগম।হয়তো কেউ,কোন মহৎপ্রাণ শিক্ষানুরাগী হৃদয়বান মানুষ হাবিবের পাশে দাঁড়াবেন।আমি,আমরাও আশা করছি দুঃখের আধাঁর ঘরে চাঁদের আলো মিতা নুর,হাবিবদের মতো অভাগা মেধাবীদের স্বপ্ন পূরণে কেউ না কেউ হাত বাড়িয়ে দিবেন।প্রতিমুহুর্তে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে যারা লেখাপড়া করতে পিছপা হয়নি। ভালো ফলাফল করেছে।

    নুন আনতে পান্তা ফুরায় সংসারের ভাত-কাপড়ের সংস্থান ঠিকমতো নেই যাদের,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তাদের জন্য আকাশছোঁয়া স্বপ্ন বৈকি।কিন্তু অপ্রতিরোধ্য দারিদ্র্যের সুকঠিন বাধা ডিঙিয়ে এতটুকো পথ যারা পাড়ি দিতে পেরেছে,শাণিত মেধার মঙ্গল আলোয় স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়ে তারা এগিয়ে যাবেই।শুধুমাত্র একটু ভালোবাসা,মানবিকতার ছোঁয়াই পারে ওদেরকে আলোর পথে নিয়ে যেতে।