পবিত্র ক্কা’বা শরিফ অবমাননার অভিযোগে মন্দির ভাংচুর

    0
    182

    “এই ধরণের ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই,আমরা শুধু মাত্র “পবিত্র কাবা শরিফের অবমাননাকারীর শাস্তি  দাবি করেছি। একই সাথে যারা মন্দিরে হামলা করেছে, আমরা তাদেরও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,৩১অক্টোবর,জি এম সাইফুলঃ গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেইসবুক আইডি থেকে মুসলিমদের পবিত্র ক্কা’বা শরিফের উপরে মুর্তির ছবি বসিয়ে একটি পোস্ট দেয়।ফেইসবুকে রসরাজ দাস ‘ক্কা’বা শরিফকে অবমাননা করে’ পোস্ট দিয়েছে এমন অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমরা তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি প্রদানের দাবী জানালে পুলিশ তাকে শনিবার আটক করে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

    ওই ঘটনা নিয়ে শান্তিপুর্নভাবে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর ব‌্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে এবং হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় অন্যান্য ইসলামি দলের কর্মসূচি।

    হামলার ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া  জেলায় কর্মসূচি আহ্বানকারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপজেলা সভাপতি ইসলাম উদ্দিন দুলাল এ প্রতিনিধিকে বলেন, “এই ধরণের ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই,আমরা শুধু মাত্র “পবিত্র কাবা শরিফের অবমাননাকারীর শাস্তি  দাবি করেছি। একই সাথে যারা মন্দিরে হামলা করেছে, আমরা তাদেরও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

    এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকাতে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করা হয়।এর মধ্যে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা।

    প্রত্যক্ষদর্শীদের সুত্রে বলা হয় কিছু দুষ্কৃতিকারী লোক এ সুযোগকে  কাজে লাগিয়ে নাসিরনগর সদরের বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালায় ভাংচুর করে।

    এদিকে পূজা উদযাপন পরিষদের নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার সাংবাদিকদের জানান, “কম পক্ষে ১৫টি মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শ’র বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তাঁরা।”

    এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হন বলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি আদেশ দেব জানান।

    উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত জানান, “শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ফেরাতে গিয়ে এলাকার অনেক মুসলিম যুবকরাও আহত হয়।” স্থানীয়রা জানায়, হামলাকারীদের বেশিরভাগই যুবক বয়সের এবং তাদের পরনে ছিল প্যান্ট-শার্ট।

    পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পরে অন্যান্য বাহিনীও যোগ দেয়।

    প্রতিটি ভাংচুরের ঘটনায় আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে এসপি মিজানুর বলেন, ইতোমধ্যে ছয় ‘হামলাকারীকে’ তারা গ্রেপ্তার করেছেন।

    ১২ বিজিবি ব‌্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

    জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান ও পুলিশ সুপার মিজানুর বিকালেই ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”

    নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন দেব বলেন, “বিকালের পর পরিস্থিতি দৃশ্যত শান্ত হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ‌্যে আতঙ্ক রয়েছে।”এই হামলার জন‌্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করছেন এসপি মিজানুর।

    তিনি বলেন, “সুযোগ সন্ধানী মহল সরকারকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    এদিকে পাশের এলাকার রসরাজের শাস্তির দাবিতে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব‌্যানারে রোববার বিকালে মাধবপুর উপজেলা চত্বরে প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়।একই সময় একদল যুবক মাধবপুরে বাজারে ঢুকে ঝুলন মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর এবং কালী মন্দিরের ফটক ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে।এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতংকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন।

    র‌্যাব -৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক মাঈন উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত র‌্যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে তবে র‍্যাব সদস‌্যরা উপস্থিত হওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

    স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুব আলী, পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, জেলা ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) এমরান হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফজলে আকবর মো. শাহজাহান, উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা মোকলেছুর রহমান, ওসি মোকতাদির হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তাজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

    এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র বলেন, “যারা মন্দিরে হামলা-ভাংচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    উল্লেখ্য, ঘটনার পর পাশাপাশি দুটি উপজেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও আতঙ্ক কাটছে না  হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের।