গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে আদালতের নির্দেশনা

    0
    221

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১নভেম্বরঃফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দায়িত্ব পালনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কিছু যুগান্তকারী নির্দেশনা দিয়েছে। গত ২৪ মে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে ১৩ বছর আগে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

    বহালের সাড়ে ৫ মাসের মধ্যে আপিল বিভাগ এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ৩৯৬ পৃষ্ঠার এই রায়টি লিখেন। এতে সাক্ষর করেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। রায়ের দশ দফা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে: আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্য কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর অবিলম্বে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন।  ওই কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। যেখানে তারিখ এবং গ্রেপ্তারের সময় উল্লেখ থাকবে।

    আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্য কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলে ওই ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। নিকটাত্মীয়দের অনুপস্থিতিতে গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরামর্শ অনুযায়ী তার কোন বন্ধুকে জানাতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে বিষয়টি জানাতে হবে, তবে কোন ভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি দেরি করা যাবে না। গ্রেপ্তারের সময় এবং স্থান এবং কোথায় আটক রাখা হয়েছে তা জানাতে হবে।

    গ্রেপ্তারের কারণসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যার তথ্য অথবা অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে তার নাম-ঠিকানাও লিপিবদ্ধ করতে হবে। আটককৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর কাছে অভিযোগকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

    ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোন ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় আটক করা যাবে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন। যদি দাবি করা হয়, তবে যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং যারা উপস্থিত আছেন তাদেরকে নিজের পরিচয়পত্র দেখাবেন।

    গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে যদি কোন রকম ইনজুরির চিহ্ন পাওয়া যায় তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ওই ইনজুরির কারণ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করবেন এবং ওই ব্যক্তিকে কাছের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। এবং উপস্থিত চিকিৎসকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন।

    যদি কোন ব্যক্তিকে তার বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে ওই ব্যক্তিকে থানায় আনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার নিকটাত্মীয়কে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তিকে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা তার ফরওয়ার্ডিং এ ১৬৭(১) কারণ বর্ণনা করবেন কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি। কেন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্য দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাও বর্ণনা করতে হবে। কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেস ডায়েরিও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবেন।

    বৃহস্পতিবার বিচারক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কিছু নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন। যুগান্তকারী এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোন ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেপ্তার অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। গ্রেফতারকৃত এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা যদি পরিচয়পত্র দেখতে চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই তা দেখাতে হবে। গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবকে গ্রেফতারের সময় এবং স্থান জানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিচারকদের প্রতি জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেইস ডায়েরি (তদন্তের দিনপঞ্জি) ছাড়া কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন।

    যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলাঃ১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুবেল মারা যায়। পুলিশ হেফাজতে রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট(ব্লাস্ট) সহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের রিট আবেদন দায়ের করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. হামিদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার বিধান ৬ মাসের মধ্যে সংশোধনে এক যুগান্তকারী রায় দেন।ইত্তেফাক