চোখের সামনেই কারো হার্ট অ্যাটাকঃআপনি কী করবেন?

    0
    210

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮নভেম্বরঃ পারিবারিক পরিবেশে হার্ট অ্যাটাক সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একদিন আমার এক আত্মীয় রসিকতা করে বলেছিলেন -মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয় কারণ -মেয়েদের হার্ট নেই বললেই চলে! আমরা সবাই হেসেছি, পাশাপাশি আলোচনা করতে গিয়ে ঐদিন দেখলাম সবার মধ্যে একটু একটু প্রাথমিক ধারণাও আছে, কি করবেন তাৎক্ষণিক ভাবে যদি পরিবারের কোনো সদস্যের হার্ট অ্যাটাক হয়।

    আমি অত্যন্ত আশাহত হয়েছি এই জন্য যে ,আমরা যারা লন্ডনে বা বহির্বিশ্বে বসবাস করি আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা অনেকটা সচেতন, আমাদের আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশি যারা বাংলাদেশে থাকেন তাদের তুলনায়। এই জন্য আমরা কাউকে দোষারোপ করতে পারিনা, আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি হচ্ছে। মেডিকেল হেল্থ সম্পর্কে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে যা আমাদের জন্য সহায়ক।

    মেয়েদের হার্ট নেই বা হার্ট অ্যাটাক কম হয় এটা বোধ হয় ঠিক না। এটা ছিল (simply) রসিকতা। মেডিকেল প্রপেশনালরাই এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমরা নন-প্রফেশনালরা এই বিষয়ে কথা বলতে পারি না। আমি লন্ডলে যে হাসপিটালে কাজ করি প্রতিবছরই আমাকে লিস্ট অফ ট্রেইনিং এ পাঠানো হয়, তার মধ্যে আমার কাছে (cardiac arrest) কার্ডিয়াক এরেস্ট বা (heart attack) হার্ট অ্যাটাক ট্রেনিং অন্যতম।

    যা জানতে শিখতে আমার অনেক আগ্রহ। আমাকে প্রতি বছর ট্রেনিং এ পাঠানোর কারণ হল, আমার কার্য পরিসরে অন ডিউটি হঠাৎ করে আমার পাশে, আমার হাসপাতালে যেখানে আমি কাজ করি কারো যদি হার্ট অ্যাটাক/ কার্ডিয়াক এরেস্ট হয় তাহলে —এজ এ মেম্বার অফ স্টাফ হিসেবে আমি কি করব? আমি কি শুধু শুধু চেয়ে দেখব? নাকি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস আসার পূর্ব পর্যন্ত কার্ডিয়াক এরেস্ট রোগিকে শুধু শুধু জিজ্ঞেস করব আপনার কি হয়েছে? নাকি তাৎক্ষণিক ভাবে এই রোগিকে ট্রেনিং এ শিখা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাঁচাতে সহায়তা করব?

    প্রশ্ন গুলোর উত্তর হচ্ছে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যতসম্ভব রোগিকে বাঁচাতে সহায়তা করা। আমি শুধু আমার ট্রেনিং অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করতে চাই। ট্রেনিং থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা, নিজে পড়ে জেনে যেটুকু জানতে বুঝতে পেরেছি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

    আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে আপনাদের সাথে আমার এ অভিজ্ঞতা শেয়ার কোনো চিকিৎসা পত্র নয়। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনো বিষয় আপনার ডা. এর সাথে পরামর্শ করাই যুক্তিযুক্ত। আর এটার মানেই হল আপনি স্বাস্থ্য সচেতন।

    হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো ব্লক হওয়া ধমনীর কারণে হৃদযন্ত্রের ক্ষয়তা কমানোর প্রচেষ্টা। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা-দেওয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে। আপনার হাতের কাছে বা মোবাইল ফোনে আপনার পাশের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস/ হাসপাতাল/ আপনার পারিবারিক ডাক্তারের মোবাইল কন্টাক্ট নাম্বার আছে কি? না থাকলে তা আজই সংগ্রহ প্রয়োজন। চোখের সামনে বড় অক্ষরে লিখে রাখুন যাতে করে পরিবারের সকল সদস্যরা দেখতে পায়, কারণ সব ইমার্জেন্সিতে আপনি পাশে থাকবেন তা ভাবা ঠিক না। ইমারজেন্সি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর এই কাজগুলো করতে হবে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই। বেশি সময় নিলে রোগী বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে।

    তবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুঝতে আপনার প্রথমেই নিচের বিষয়গুলো (Identify) বিবেচনা করতে হবে যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সাধারণত নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো চোখে পড়ার কথা…..

    ১. বুকের মাঝে অস্বস্তিকর চাপ অনুভব করা, কিংবা বুকে ব্যথা হওয়া। এই ব্যথা ক্রমেই শরীরের নানা অংশে যেমন বা হাতের দিক দিয়ে ছড়িয়ে পড়া।

    ২. পেটের উপরের দিকে তুলনামূলক লম্বা সময় ধরে ব্যথা অনুভব করা।

    ৩. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, মূর্ছা যাওয়া।

    ৪. অস্বস্তিকর চাপ কিংবা বুকে ব্যথার কারণে ঘামতে থাকা।

    এখানে লক্ষণীয় যে, হার্ট অ্যাটাক শুরু হওয়া পর বুকের ব্যথা ১৫ মিনিট অবধি থাকতে পারে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, বুকে ব্যথা শুরু হয়ে এটি চোয়াল, হাতের দিকে এবং পশ্চাৎ দিকে ধাবিত হয়।

    লক্ষণ গুলো বোঝার সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স আসার পূর্বে রোগিকে শুইয়ে বুকের উপর বারবার চাপ, CPR (cardiopulmonary resuscitation) and artificial respiration (mouth-to-mouth resuscitation) এমনকি কৃত্তিমভাবে হার্ট চালু করানো এবং কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা যাতে হার্টে পাম্প হয়। রোগি যদি একা থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেয় তখন কী করবেন? সেক্ষেত্রে আপনি যেটা করবেন তা হচ্ছে জোরে জোরে কাশি দিবেন। জোরে জোরে কাশি দিলে হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচল কিঞ্চিত বেড়ে যায়।

    এ সময় পাশের লোকটিকে আপনার সমস্যার কথা বলুন। কাছাকাছি অবস্থান করছে এমন কাউকে ফোন করুন এবং আসতে বলুন। হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়াটাই সঠিক পদক্ষেপ। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজে পড়ুন জানুন, যা আপনাকেই সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে আপনার শারীরিক অবস্থা বাজে কন্ডিশনে যাওয়ার পূর্বেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

    লেখকঃ নজরুল ইসলাম,ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, লন্ডন মেম্বার দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাটেড কিংডম। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশ।