জৈন্তাপুরে অবাধে কারেন্ট জালের বিক্রি ও ব্যবহার

    0
    234

    শুধু মৎস্য সপ্তাহ পালনে দেখা মিলে অতিরিক্ত কর্তার

    রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় মৎস্য সপ্তাহ আসলেই দেখা মিলে মৎস্য কর্মকর্তার। বিগত ১১মাস থেকে জৈন্তাপুর উপজেলা মৎস্য অফিস তালা বদ্ধ থাকার পর গত ১৭ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু হলে খুলে এই অফিসের তালা। মৎস্য চাষী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ জৈন্তাপুর উপজেলা নদী, জলাশয়, খালে সমৃদ্ধ হলেও উপজেলা মৎস্য অফিসের দায়সারা কার্যক্রম ও মৎস্য আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকার কারণে দেশীও মৎস্য সংকট দেখা দিয়েছে।
    জৈন্তাপুর উপজেলায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চললেও এলাকার হাওড়, নদী-নালা, খালবিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা নিধন চলছে অবাধে। প্রকাশ্যে স্থানীয় কিছু অসাধু মাছ শিকারী চক্র দরবস্ত অঞ্চল, হেমু তিনপাড়া অঞ্চল, ডিবির হাওর সহ বিভিন্ন জলাশয়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য সম্পদ সহ জলজ প্রাণী শিকার করছে। এসব জালে পোনা মাছ, মা মাছ থেকে শুরু করে সকল প্রকার মাছ, ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়া সহ জলজ প্রাণী আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদী সহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল জৈন্তাপুর, নিজপাট, চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মেদল হাওর, ডিবির হাওর, করিচের ব্রিজের আশপাশ সহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাপক হারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে সয়লাব হয়ে পড়ছে। বন্যা আসার সাথে সাথে উপজেলার জৈন্তাপুর বাজার, দরবস্ত বাজার ও হরিপুর বাজারে প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল বিক্রেয়ের হাট বসলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
    এদিকে মাছের প্রজনন মৌসুমে কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার নিয়ে পরিবেশবাদীরাসহ স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
    এ ভাবেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে কারেন্ট জাল দেখার কেউ নেই।

    অপরদিকে উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাছের বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাওর, নদী-নালা, খালবিলে রুই, কাতলা, বাউশ, মৃগেল, কালিয়া সহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতীর মাছের পোনা সহ মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু জেলেদের বিকল্প জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার মৎস্যজীবীরা হাওর গুলো থেকে অবাধে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরে বিক্রি করছেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বছরে ১১মাস স্থানীয় মৎস্য কার্যালয় বন্ধ থাকে শুধু জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ আসলে দেখা মিলে মৎস্য কর্মকর্তাদের। মৎস্য বিভাগ যথাযথ ভাবে তদারকি ও অভিযান না চালানোর কারণে উপজেলা জুড়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কারেন্ট জাল ব্যবহার, নদী ও বিলের পানিতে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশের খাঁটি ও অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছের অবাধ গতি প্রবাহে বাধা প্রদান সহ নানা অপতৎপরতা মাছের আবাসস্থল ও প্রজনন স্থান বিনষ্ট করা হচ্ছে। ২০০২ সালে সরকারের জারি করা মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের ৪(১) ধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি কারেন্ট জালের উৎপাদন, বুনন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, বহন, মালিক হতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন ভঙ্গ করে যারা কারেন্ট জাল ব্যবহার, নদী ও বিল সেচ, নদীতে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশের খাঁটি ও অপরিকল্পিত ভাবে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এমনিতেই দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বন্যা আসার পর নদী হাওরে মাছ পোনা করে বাড়তেই পারছে না।

    ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সিলেট বিভাগীয় উপ-সহকারী পরিচালক সারওয়ার হোসেন বলেন, তিনি মৎস্য সপ্তাহ পালনের জন্য অতিরিক্ত মৎস্য কর্মকর্তা হিসাবে জৈন্তাপুর মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন৷ সপ্তাহ পালন শেষ করে চলে যাবেন৷ লোকবল না থাকার কারণে অফিস বন্ধ রাখা হয়। অভিযান পরিচালিত কিভাবে করবো আমার কাছে কোন বাজেট ও নেই লোকবল নেই। কারেন্ট জালের ব্যবহার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
    এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, অফিসে লোকবল নেই তাই অফিস বন্ধ রাখা হয়। জৈন্তাপুর মৎস্য কর্মকর্তাকে আমি বলে দিবো উনি যেন কারেন্ট জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।