দিল্লির আকাশে কালো ধোঁয়ার প্রবল দাপট

    0
    202

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬নভেম্বরঃ বিগত দশ বছরের মধ্যে এ বছর রাজধানীর আকাশে কালো ধোঁয়ার প্রবল দাপট। দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দৃশ্যমান্যতা গত বুধবার পর্যন্ত ৩০০-৫০০ মিটার পর্যন্ত ছিল। বৃহস্পতিবার অবস্থার একটু উন্নতি হলেও বেঙ্গালুরু থেকে জয়পুরগামী একটি বিমানকে ঘন কুয়াশার দরুণ দৃশ্যমান্যতার অভাবে জয়পুরের বদলে দিল্লিতেই নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিমানবন্দরের দৃশ্যমান্যতা কিছুটা উন্নত হয়। দৃশ্যমান্যতা ১২০০ মিটার পর্যন্ত হয়। তবে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আগামী দিনে আরও ঘন কুয়াশার কবলে পড়তে পারে বিমানবন্দর। দৃশ্যমান্যতা অনেকাংশেই কমে যাবে।

    দীপাবলির রাতে অসংখ্য আতসবাজি পোড়ানো ও পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ফসল জ্বালানোর জন্য বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার দরুণ শ্বাস-কষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। বাদ যায়নি শিশু, বৃদ্ধরাও। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)-এর পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক খুব তাড়াতাড়ি বায়ুদূষণ প্রশমন কমিটি গঠন করতে চলেছে। বাতাসে টক্সিক পদার্থের প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতে যাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদের ঘরের বাইরে বেরোতে কয়েক দিনের জন্য নিষেধ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ ছাড়াও শিশু ও বয়স্কদের মাস্ক পরে বাড়ির বাইরে বেরতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    বিভিন্ন সরকারি স্কুলে ‘আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস’ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় দিল্লিতে একটি বেসরকারি স্কুলে ও গুরুগ্রামের (গুড়গাঁও) চারটি বেসরকারি স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

    গত বৃহস্পতিবার সকালে সফদরজং এলাকায় দৃশ্যমান্যতা ৫০ মিটারে নেমে যায়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত দশ বছরের নভেম্বর মাসের তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছে কেবল এক বারই, ২০১১-র ২০ নভেম্বর সফদরজং এলাকায় দৃশ্যমান্যতা ৫০ মিটারের নীচে নেমেছিল।

    বাতাসে দূষণের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় দিল্লির রাস্তায় প্রতি দিন বের হওয়া অসংখ্য গাড়ির দূষণ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ অক্টোবর, বায়ুমণ্ডলের সংযুক্তিকরণ ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে ২১২.৯৬ মাইক্রোগ্রাম। ৩১ অক্টোবর তা বেড়ে প্রতি কিউবিক মিটারে ২১৭.৪৫ মাইক্রোগ্রাম হয়ে যায়। ১ নভেম্বর এই সংখ্যা বেড়ে ৩২৮.১৫ মাইক্রোগ্রাম হয়। ২ নভেম্বর তা ৩৮১.৫০ মাইক্রগ্রাম হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, এই সংযুক্তিকরণ হওয়া উচিত ৬০ মাইক্রোগ্রাম। এনভায়রনমেণ্ট পলিউশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অথরিটি (ইপিসিএ)-এর সদস্য নিরঞ্জন রাজে বলেন, “এই ভয়াবহ বায়ুদূষণ রুখতে কিছু জরুরি ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেওয়া প্রয়োজন।’’ কী রকম? তাঁর মতে, অন্তত ১৫-২০ দিনের জন্য দূষণ উৎপাদনকারী শিল্প, কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর সঙ্গে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এ ছাড়াও যে হেতু সকালের দিকে এই দূষণের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, তাই স্কুলগুলির সময় পরিবর্তন করা উচিত।

    একমাত্র বৃষ্টি বা বায়ুর গতিবৃদ্ধিই পারে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ কমাতে। এমনটাই জানিয়েছে পরিবেশ দফতর।

    আপাতত যে এই ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের কবল থেকে দিল্লিবাসীর রেহাই নেই, সেটা এক প্রকার নিশ্চিত।সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা