নবীগঞ্জে এক সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগে শাস্তি দাবি

0
156

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত এক সন্তানের জননীকে ধর্ষন করেছে ৩ সন্তানের জনক শামীম মিয়া।

ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনা স্থলে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফলে আইনি কিংবা শালিসের মাধ্যমে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত ধর্ষিতা ওই নারী বিচারের প্রহর গুনছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ভুমিহীন ( রাজনগর) গ্রামের মতিন্দ্র করের মেয়ে শুক্লফা কর (২৫) এর ১০ বছর পূর্বে বিয়ে হয় জগন্নাথপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সুমন করের সাথে। বিয়ের ২ বছর পর তার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি ইনাতগঞ্জের রাজনগর গ্রামের বাবার বাড়িতে মায়ের সাথে থাকেন।

শুক্লফার মা ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবন চালান। তার ৪ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ২ টার সময় শুক্লফা রাজনগর গ্রামের পাশে একটি ফিশারির পাড়ে খাবারের জন্য কচু কাটতে যান। এ স্থানে সব সময় লোকজনের আনাগোনা কম থাকে। সেই সুযোগে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা  একই গ্রামের সারাজ উদ্দিনের পুত্র শামীম মিয়া (৩৮) শুক্লফাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

এ সময় শুক্লফা তাকে নির্যাতন না করতে বাবা বলে ডাকে। শুক্লফা অনেক অনুনয় বিনয়সহ সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে বাবা ডেকেও শামিমের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। এক পর্যায়ে শুক্লফাকে শামীম ধর্ষন করে।

সাথে সাথে তার রক্তপাত শুরু হয়। সেই সাথে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে।

শুক্লফা জানায়,একজন খুনি যেভাবে খুন করার উদ্যশ্যে হিংশ্র হয় এ মুহুর্তে সেটাই তার কাছে মনে হয়েছে। এ সময় গ্রামের একজন মহিলাকে আল্লাহ পক্ষ থেকে এখানে না পাঠালে তাকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলতো বলে সে জানায়।এমনটাই হয়তো পরিকল্পনা ছিল নরপশু শামীমের।

এ ঘটনার পর আহত শুক্লফাকে নিয়ে তার মা ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ইনচার্জ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে  ঘটনাটি জানান। ফাঁড়ির ইনচার্জ তাদের কোন শান্তনা না দিয়েই বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। শুক্লফার মা জানান,আমার মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ৩ ঘন্টা পুলিশের অপেক্ষা করলেও ইনচার্জ আমার বাড়িতে আসেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত না। আমার মেয়েকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার পর এসআই আবু বকর আমার বাড়িতে এসেছেন।
পরে গ্রামবাসী ও আত্মাীয়স্বজন শুক্লফাকে গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনদিন হাসপাতালে অবস্থান করে টাকার অভাবে চিকিৎসা না করে বর্তমানে বাড়িতে মৃত্যু শয্যায় রয়েছেন শুক্লাফা দাবি তার মা ও আশপাশের লোকজনের।
এদিকে ধর্ষনের খবরটি মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় চাউর হলে পার্শ্ববর্তী ২/৩ টি গ্রামের মানুষ রাজনগর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শামীমের বাড়িঘর ভাংচুর করেন। বর্তমানে শামীম পলাতক রয়েছে।  

বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান উমরাহ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকলেও তিনিও ঘটনা স্থলে যাবার প্রয়োজন মনে করননি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। মর্মান্তিক এমন একটি বড় ঘটনায় ন্যায় বিচার পাবেন কিনা শংকায় রয়েছেন নির্যাতিতা পরিবার। তাদের দাবি বিচারের বানী যেন নীরবে নিভৃতে না কাঁদে।

এ ঘটনায় এখনো মামলা করেননি কেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুক্লফার মা জানান,আমরা গরিব মানুষ। নুন আনতে পানতা ফুরায়।

তিনি জানান,স্থানীয় মেম্বার বলেছেন “মামলা করার দরকার নাই।  বিষয়টি দেখে দিবো। তবে মেয়ের উপর যে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে আমি প্রশাসনের নিকট বিচার চাই। আমি গরিব এবং ভিক্ষা করে খাই। কতো টুকু বিচার পাবো ভগবান জানেন।”

এক পর্যায়ে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন।নবীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক উত্তম কুমার পাল হিমেল বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক ও মর্মান্তিক তিনি ও ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ির এসআই আবু বকর বলেন,খবর পেয়ে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছি। এখনো মামলা হয়নি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।