নবীগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে হরিলুট !

    0
    215

    “বক্তারপুর স্কুলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৯ হাজার টাকা,চাপা ক্ষোভ নিয়ে আন্দোলন মুখি পরীক্ষার্থীরা”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২নভেম্বর,মতিউর রহমান মুন্নাঃ নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরনের নামে চলছে হরিলুট। সংশ্লিষ্ট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কারন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেটগুলো। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ফি আদায়ের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবক মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র এবং বোর্ড ফি মিলিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে ২হাজার টাকা ও মানবিকসহ অন্যান্য সকল বিভাগে ১৯ শত টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে।

    সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৩৫ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টানের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অংশ গ্রহন করবে। এরমধ্যে স্কুল ১৮ ও মাদ্রাসা ১৭টি রয়েছে।

    এ সব প্রায় প্রতিষ্টানে আগামী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরনের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

    এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে কোচিং, স্কাউট, বিদ্যুৎ বিল, দালান উন্নয়ন, পাঠাগার, রশিদ, ক্রীড়া, শিক্ষক কল্যাণ ফান্ডসহ বিভিন্ন কারন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ অনিয়মকে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা পুকুর চুরি বলে অবহিত করেছেন।

    এদিকে, নবীগঞ্জের পাশ্ববর্তী বানিয়াচংয়ের বক্তারপুর হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতি জনের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ফি এবং জামানতের নামে ৫ হাজার টাকাসহ মোট ৯ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ফলে গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা উক্ত অতিরিক্ত ফি দিতে হিমশীম খাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনের কথা চিন্তা করে দার-দেনা ও সুদী লগ্নি করে ৯ হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন- শিক্ষকরা টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেননা। গরীব মানুষ পরের ক্ষেতে কামলা খেটে/ ভ্যান-রিকসা ঠেলে সন্তানকে লেখাপড়া করাই। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে শিক্ষকরা। তাদের চাহিদা মেটাতেই আমাদের রুজি করা টাকা তুলে দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের হাতে।

    শনিবার সকালে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে এক পরীক্ষার্থীর পিতা আসমান উদ্দিন নামের এক পঙ্গু ব্যক্তি সাংবাদিক‘দেরকে বলেন- “আমার ছেলে’রে স্কুলের স্যার’রা কইছে ৯ হাজার টাকা না দিলে তারে পরীক্ষা দিবার লাগি দিতানায়”। তিনি আরও বলেন, ‘‘শনিবার সকালে স্কুলে ২ হাজার টাকা নিয়ে গেছিলাম, কিন্তু হেড মাষ্টার স্যার ৯ হাজার টেকার (টাকার) কম অইতনায় না বলে আমাকে তাড়িয়ে দেইন। উক্ত আসমান উদ্দিনের পরীক্ষার্থী ছেলের নাম সেবুল হোসেন। অতিরিক্ত ফি আদায় করায় খোদ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

    বক্তারপুর হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সেবুল হোসেনের পঙ্গু পিতার ভাষ্য মতে- ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীকে বলেছেন নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ৯ হাজার টাকা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরন না করলে তাকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া যাবেনা। এ নিয়ে তিনি চরম হতাশায় রয়েছেন।

    এ বাপারে বক্তারপুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন। ‘

    নবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন বলেন- কেন্দ্র এবং বোর্ড ফি মিলিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার টাকা, মানবিক ও অন্যান্য বিভাগে ১৯শত টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে। অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের কোন অভিযোগ তাদের কাছে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।