নবীগঞ্জে গোলাপ ও মৌলানা শফির অপকর্মের তদন্ত চলছে

    0
    229

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,২৪মে,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ এবং তাকে প্রধান করে দায়েরকৃত একই যুদ্ধাপরাধ মামলার আরও দুই অভিযুক্ত জামাল মিয়া ও মওলানা গিয়াস উদ্দিন মুফতিসহ জেলার লাখাই উপজেলাধীন জিরুন্ডা-মানপুরের বাসিন্দা তৎকালীন পাকিস্তানী নেজামী ইসলাম পার্টীর নেতা মৌলানা শফি উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধমুলক কর্মকান্ডের খুঁজে হবিগঞ্জে আবারও তদন্ত দল। আর এবারের এই তদন্তে নতুন করে ফেঁসে যেতে পারেন জামাল ও মুফতি গিয়াস উদ্দিন।
    মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা এসএসপি নুর হোসেনের নের্তৃত্বে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার ৫ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টীম জেলার নবীগঞ্জের গজনাইপুর, দিনারপুর সহ আরও কয়েকটি গ্রাম এলাকায় গোলাপ ও তার অপর দুই অভিযুক্ত সহযোগী জামাল মিয়া ও মওলানা গিয়াস উদ্দিন মুফতি কর্তৃক ৭১’এ সংঘটিত নারী নির্যাতন, বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগের মতো নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেন।
    এসময় সংশ্লিস্ট টীম পাকিবাহিনী ও রাজাকারদের লালসা-নির্যাতনের শিকার হয়ে এখনও বেঁচে থাকা বেশ কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষের সাথে কথোপকথন এবং তাদের জবানবন্দী সংগ্রহ করেন। সেই সাথে স্টিল ও ভিডিও চিত্র ধারন সহ স্ব স্ব ঘটনাস্থলের স্ক্যাচ ম্যাপও অংকন করেন তারা।
    শুধু তাই নয়, গোলাপ ও তার অপর সহযোগী জামাল মিয়ার বয়স নির্ধারনের লক্ষ্যে দিনারপুর স্কুলে উপস্থিত হয়ে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের এডমিশন রেজিষ্টার বের করে ওই টীম। এতে প্রমান মেলে ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গোলাপ ও জামাল মিয়া ছিলেন প্রাপ্ত বয়স্ক টসবগে যুবক। মুক্তিযোদ্ধা সহ প্রগতিশীল সাধারন মানুষ তখন ওই টীম প্রধান নুর হোসেনের কাছে উপস্থিত হয়ে গোলাপ ও জামাল সহ মওলানা গিয়াস উদ্দিন মুফতি কর্তৃক ৭১’সালে বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত নানা বিভৎস চিত্র তুলে ধরেন এবং বিচার দাবী করেন।
    এসময় তাদের সাথে ছিলেন আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা স্বাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির মেম্বার এবং জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন এবং ওসি জিয়ার নের্তৃত্বে পুলিশের একটি টীম।
    অনুসন্ধানকালে গোলাপ, জামাল ও মুফতি গিয়াসের বিরুদ্ধে ৭১’সালে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকান্ডের আরও জোরালো কিছু তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসে। বুধবারে জেলার লাখাই উপজেলাধীন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামও পরিদর্শন করছেন ওই ট্রাইব্যুনালের একই টীম। এসময় তারা তৎকালীন পাকিস্তান নেজামী ইসলামী পার্টির নেতা রাজাকার মৌলনা শফি উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক তদন্তের অংশ হিসেবে ৭১’ সালে তার কর্তৃক সংঘটিত নানা অপকর্মের সন্ধান করবেন। তাছাড়াও সূত্র মতে, ইতিমধ্যে ওই ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হওয়া দেশ ত্যাগী একই উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা কমান্ডার লিয়াকত আলীর সংশ্লিস্ট যুদ্ধাপরাধ মামলা সংক্রান্ত কিছু বিষয় এবং তৎসংশ্লিস্ট কয়েক সহযোগি সর্ম্পকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ সহ স্বাক্ষীদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হামলার বিষয় নিয়েও সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে পারে ওই টীম।
    এদিকে অনুসন্ধাকালে রাজাকার গোলাপ গংদেও বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার স্বাক্ষী ও ভিকটিমকে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকী শুধু নয় তাদের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে বলে সংশ্লিস্ট পরিবারগুলোর সদস্যদের অভিযোগের সত্যতা মেলে।
    উল্লেখ্য, সংশ্লিস্ট ট্রাইবুনালের বিচারকদ্বয়ের নির্দেশে নবীগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতা গোলাপ ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে আছেন। অন্যদিকে অপর আওয়ামীলীগ নেতা লাখাইয়ের লিয়াকতের মামলায় তার বিরুদ্ধে সংশ্লিস্ট ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষী চললেও এই কমান্ডার লিয়াকত আলী প্রায় এক বছর আগে দেশ ত্যাগ করে এখন আমেরিকার নিউইর্য়কে অবস্থান করছেন। নবীগঞ্জের গোলাপের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত রাজাকার মওলানা মুফতি গিয়াস উদ্দিন সম্প্রতি লন্ডনে পালিয়ে গেছেন এবং অপর রাজাকার জামাল মিয়া এখন সিলেটের উপশহরে বাস নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। গত সোমবার বিকেলে ওই তদন্ত দল হবিগঞ্জে পৌছেন।