নবীগঞ্জে শতবছরের স্কুল স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে এলাকা উত্তপ্ত

    0
    190

    আমারসিলেট24ডটকম,জানুয়ারী,মতিউর রহমান মুন্নানবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রীমতপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং স্কুলের স্থান পরিবর্তনের  চেষ্টার খবরে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামবাসী উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্চাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নিয়মিত স্কুলে না আসায় পাঠদানে মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন।

    এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে যেকোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংখ্যাও করছেন অনেকে। গঠিত ম্যানেজিং কমিটিকে অবৈধ ও প্রধান শিক্ষকের মনগড়া পকেট কমিটি দাবী করে শ্রীমতপুর গ্রামবাসী উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে গণস্বাক্ষর নিয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন। যার অনুলিপি উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিসার বরাবরেও প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ দেয়ার খবরে উক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন দরকাস্থকারীদের নানা হুমকী প্রদানেরও অভিযোগ উঠেছে।

    গ্রামবাসী সুত্রে জানাযায়, শ্রীমতপুর গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম মজিল মিয়া চৌধুরী ১৯৩৯ ইং সনে তার নিজের ২ শতক ভুমির উপর একটি টিন সেট ঘর নির্মাণ করে তার পিতা আছকির মিয়া চৌধুরীর নামে এই প্রাইমারী স্কুলটি প্রতিষ্টিত করেন। পরবর্তীতে গ্রামের আরো কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষের সাথে মিলে এর পার্শ্ববর্তী স্থানে ৭ শতক ভুমির উপর স্কুলটি স্থানান্তর করলে সরকার একটি ভবন নির্মাণ করে। বর্তমানে ওই স্কুলে ৫ শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩১ জন।

    এরমধ্যে শ্রীমতপুর উত্তর পাড়ার শিক্ষার্থীরা হবে প্রায় ১৮০ জন। বাকী শিক্ষার্থীরা গ্রামের দক্ষিন ও মাঝ পাড়ার বাসিন্দা। কিন্তু স্থান সংকোলান না হওয়ায় কোমলমতি শিশুদের পাঠদানে মারাত্বক ব্যাহত হচ্ছে বলে জানাগেছে। সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলে দেখা যায়, বিধি মোতাবেক নতুন ভবনের জন্য প্রায় ৩৩ শতক ভুমির প্রয়োজন। তবে বর্তমান ওই স্কুলের ভুমি ৯ শতক থাকায় ওই স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রামের উত্তরপাড়ার লোকজন ও প্রতিষ্টাতা মরহুম মজিল মিয়া চৌধুরীর পরিবার মিলে স্কুলের পাশ্ববর্তী বিশাল পতিত জায়গায় স্কুলটি স্থানান্তরের প্রস্তাব দিলে গ্রামের দক্ষিন পাড়ার কিছু লোকজন বাদসাধেন।

    তারা ওই স্থান থেকে সড়িয়ে দক্ষিন পাড়ায় স্কুলটি স্থানান্তরের পরিকল্পনার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রামবাসী বলেন, দক্ষিনপাড়ার বেশীর ভাগ ছাত্র-ছাত্রী তাদের বাড়ির পাশে অবস্থিত লহরজপুর প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করে আসছে। ওই স্কুলটি সেদিকে গেলে উত্তরপাড়ার সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়ার অবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এদিকে সম্প্রতি ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ ভিলেজ পলিটিক্সির সাথে জড়িয়ে গোপনীয় ভাবে পুর্বের দাতা সদস্য ও অভিভাবকদের না জানিয়ে একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী।

    এ ব্যাপারে গণস্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রাইমারী শিক্ষা অফিসারের বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। গত ২২ জানুয়ারী দেয়া তাদের আবেদনে গ্রামবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলী, ভুয়া ম্যানেজিং কমিটি পুর্ণ গঠন এবং গ্রামের প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রীমতপুর প্রাইমারী স্কুলটির নিকটবর্তী বিশাল পতিত জায়গায় স্থানান্তর করার দাবী জানান।

    এ ব্যাপারে শ্রীমতপুর গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী সিতার মিয়া, আতাউর রহমান, শেখ গউছ মিয়া, আব্দুল আজিজ, জাকির হোসেন, লুৎফুর রহমান চৌধুরী, ইউছু মিয়া, হাফিজ মিয়া, শাহীন মিয়া চৌধুরী, আব্দুল আহাদসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, শ্রীমতপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায় বর্তমানে স্কুলটি সড়িয়ে দক্ষিন পাড়ায় নেয়ার যে চক্রান্ত শুরু হয়ে তা দুঃখ জনক। ওই স্থান থেকে সেদিকে স্কুল গেলে প্রায় দু’ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া বিঘœ ঘটবে। তাই ওই স্কুলের পাশ্ববর্তীস্থানে পুর্বের প্রতিষ্টাতা ও অপর কয়েক জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা তাদের বিশাল পতিত রকম ভুমি স্কুলের জন্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে। স্থানান্তরিত হলে সেখানে স্থানান্তরের দাবী জানান।

    অন্যতায় উক্ত স্কুল স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে গ্রামে দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশংখ্যা প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের অভিযোগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওই গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রাম্য ভিলেজপলিটিক্সে জড়িয়ে তার মনগড়া ভাবে স্কুলটি পরিচালনা করে আসছে। কাউকে না জানিয়ে একটি ভুয়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি করেছেন। তারা উক্ত কমিটি বাতিলসহ প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলীর দাবী জানান।

    এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কমিটির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে স্থানান্তরের বিষয়ে কোন আবেদন নাই বলে জানান তিনি।