নাগা মরিচ চাষে জৈন্তাপুরের কৃষকদের সম্ভাবনার হাতছানি

    0
    555

    রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ সিলেট জেলার তৈল গ্যাস পাথর বালু তৈজপাতা কমলালেবু, জাড়ালেবু ও পান পানি নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা নানা কারনে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত৷ এসবের সাফল্যের পিছনের মূল কারিগর কৃষক ও শ্রমিকরা৷ সম্প্রতি উপজেলার কৃষক পরিবার গুলো ধান চাষের পরবর্তীতে অব্যবহৃত পতিত ভূমিতে মৌসুমী সব্জী চাষ করে লাখ প্রতি হয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা৷ সব্জী চাষে সোনালী স্বপ্ন পুরন করতে কৃষকরা এখন নানা মূখী কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে৷ শিম, বরবটি, করলা, ভূইশষা, ক্যাপসীকাম মরিচ অন্যতম৷ পাশাপাশি শীতকালীন শাক সব্জী রয়েছে৷ কৃষক কাদের কৃষি বিপ্লব ঘটাতে তারা বাজারের সাথে সঙ্গতী রেখে বাজারের চাহিদা মোতাবেক সব্জী চাষে তারা বেশি আ গ্রহী৷ কম সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষে তারা নতুন নতুন সব্জির বিপ্লব ঘটায়৷ বিগত ২-৩ বৎসর হতে হাইব্রিড নাগা মরিচ চাষে ঝুকেছে কয়েক শত কৃষক পরিবার৷ কারন হিসাবে জানাযায় কোন কোন জমিতে একফসলা ধান উত্তোলনের পর ঐ জমি খালি পড়ে থাকে৷ এসব জমিতে ২য় কিংবা ত্রীফসলা ধান চাষ হয় না৷ পতিত জমি গুলোকে চাষা বাধের আ ওতায় আনতে এবং বহুমূখী ব্যবহারের জন্য নানা প্রকার সব্জী চাষ হয়, কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেন না৷ তারা বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে খরচের তুলনায় তিন গুন লাভের আশা নিয়ে নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী নাগা মরিচ চাষে সোনালী স্বপ্ন দেখে৷ তাতেই সাফল্যে পায় কৃষক পরিবার৷ এই সাফল্য দিন দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের স্বপ্ন দেখায় তারা নাগা মরিচের চাষে আ গ্রহী হতে শুরু করে৷ বিগত বৎসর গুলোতে কয়েকটি কৃষক পরিবার নাগা মরিচ চাষ করে খরচের তুলনায় তিন/৪গুন লাভবান হয়েছেন৷ নাগা মরিচ চাষে সাফল্য পাওয়ায় গত দু বৎসরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নাগা মরিচ এর চাষাবাঁধ দ্রুত সম্প্রসারন হতে শুরু হয়৷ 

    সরে জমিনে উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের হেলিরাই চারিকাটা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ এলাকা ঘুরে দেখা যায় কয়েকশত পরিবার নাগা মরিচ চাষে ব্যস্তদিন পার করছে৷ 

    কৃষক সামসুল হক জানান- জমিটি ধান উত্তোলনের পর ৯মাস খালি পড়ে থাকে৷ সুষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক কৃষির আ ওতায় ৫বিঘা জমিতে উন্নত প্রজাতির নাগা চাষ শুরু করেন৷ সার বীজ ক্রীটনাশক পানি সেচ সহ বিঘা প্রতি খরচ প্রায় লাখ টাকার মত হয়েছে৷ মরিচের গাছ এবং যে ফলন এসেছে এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে প্রতি বিঘা জমিতে তিনি ৪ থেকে ৫লক্ষ টাকার ফলন পাবেন বলে আশা করেন৷ ইতোমধ্যে বিঘা প্রতি ১০ হতে ১৫ হাজার টাকার মরিচ স্থানীয় বাজারে বিক্রয় হয়েছে৷ দু-এক সপ্তাহের মধ্যে নাগা মরিচ সিলেটের বাজারে সরবরাহ করতে পারবে৷ সটিক সময়ের মধ্যে ফসল উত্তোলন করতে পারলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আ য় হবে৷ তিনি বলেন উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা যদি কৃষকদের নাগা মরিচ চাষে কিংবা অন্যান্য সব্জী চাষে পরামর্শ, সহযোগিতা, রোগবালাই তার প্রতিকার সর্ম্পকে মাঠ বৈটকের মাধ্যমে অবহিত করতেন এবং কৃষি ঋন প্রদানের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে অনেক কৃষক উপকৃত হতে পারত৷

    আ তিকুর রহমান কৃষক জানান গত বৎসর নিজের অর্ধবিঘা জমিতে নাগা চাষ করে মোটামোটি ভাল ফলন পেয়েছেন৷ এ বৎসর তিনি আ রও ৪ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাধ শুরু করেন৷ তিনিও লাখ প্রতি হওয়ার আশাবাদি৷ এভাবে অনেক কৃষক তাদের নাগা মরিচ চাষের ফলে লাখপ্রতি হওয়ার সোনালী স্বপ্ন পুরনের কথা প্রতিবেদককে জানান৷ 

    কৃষক আব্দুস সবুর, খোরশেদ আলম, শাওন আ হমদ দুলাল, মনজুর ইসলাম আরও বলেন- আ মাদের হেলিরাই এলাকায় প্রায় ৭ হতে ৮শতটি নাগা মরিচের বাগান করা হয়েছে৷ বাগানে কিছুটা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে ফল আশা কিছু সংখ্যাক গাছ মরে যাচ্ছে৷ এটা নিয়ে আ মরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি৷ কৃষি বিভাগের লোকজন মাঝে মধ্যে আসেন আর মাঠ গুলো দেখে যান৷ রোগে ও পোকা মাকড় দমনে তেমন কোন পরামর্শ আ মরা পাচ্ছি না৷ তবে আ মাদের মাঠ প্রতি কৃষি অফিস একটি করে ক্ষতিকর পোকা নিধন বাটি দিয়ে গেছে বলে জানান৷ কৃষকরা ক্ষোভের সাথে বলেন- শুনেছি কৃষকদের মধ্যে সরকার ভর্তুকির আ ওতায় সার বীজ ক্রীট নাশক সরবরাহ করছে কিন্তু আ মরা কখনো সুযোগ সুবিধা পাইনি৷ কেউ পেয়ে থাকলেও আ মরা জানিনা৷ তবে আ মাদের হেলিরাই গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ১জন কৃষকের মাঠে কৃষি প্রদর্শনী সাইনবোর্ড আছে ঐ কৃষক কোন সুবিধা পেয়েছে কিনা আ মাদের জানা নেই৷

    জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের প্রদর্শনী মাঠে গিয়ে কৃষক আ ব্দুল গফুরের সাথে আলাপকালে তিনি জানান- উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা ফোন করে অফিসে ডেকে নিয়ে আমাকে ২০কেজী সার দিয়েছেন৷ পরবর্তিতে তারা আমার মাঠে প্রদর্শনী সাইবোর্ড লাগিয়েছেন৷ আ মি ২০ কেজি সার পেয়েছি৷ এছাড়া মাঝে মধ্যে মাঠটি দেখে কিছু পরামর্শ দেন৷ তবে অন্য কোন কৃষক সার বা অন্য সুযোগ সুবিধা পেয়েছে কি না আমি জানি না৷ তবে কৃষক নিজেই প্রতিবেদককে বলেন প্রদর্শনীর মাঠের চাইতে অন্য মাঠে ভাল ফলন হয়েছে৷ 

    এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন বলেন- উপজেলার হেলিরাই গ্রামের কৃষকরা নাগা মরিচ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে৷ এখানে আ মাদের সুষ্ট পরামর্শে এবং দিক নির্দশেনায় একটি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে৷ কৃষকদের সার বীজ কিটনাশক পাচ্ছে না একথটি সটিক নয়৷ সরকারি পরোদনার সহায়তার জন্য কৃষক নির্বাচিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা৷ তাদের তালিকানুযায়ী আ মরা সরকারের পরোদনার সহায়তা বিতরন করি৷ অন্য প্লট এর চেয়ে আ পনার প্রর্দশনী প্লটটি অবস্তা ভাল নয় প্রশ্ন করলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেন৷ তার দাবী আ মি নাগা মরিচের মাঠে এসে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি৷

    এছাড়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আ ওতায় প্রতিটি মাঠে কি ধরনের পোকা মাকড় আক্রমন করছে তা পরিক্ষার জন্য বিনামূল্যে প্রতিটি মাটে একটি করে বালতি দিয়েছি৷ নাগা মরিচ বা অন্যান্য সব্জী চাষে সরকারি কোন সহায়তা নেই৷ এখানে কৃষি অফিসের সহায়তা শুধুমাত্র পরামর্শ৷