বিশ্বকবির ১৫৬ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পতিসরে

    0
    469

    আজ  মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাড. আব্দুল হামিদ আত্রাইয়ে উৎসবের আমেজ

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৮মে,নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ  “আমাদের ছোট ছোট নদী/ চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে” বিশ্বকবির সেই বিখ্যাত “ আমাদের ছোট নদী” কবিতা যা কবি গুরুর জ্ঞানের অনন্য ছোঁয়া।

    “তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াও, তোমাদের সবার মঙ্গল হোক-তোমাদের সবাইকে এই আর্শীবাদই আমার শেষ আর্শীবাদ” যা ১৯৩৭ সালে কবিগুরু শেষ বারের মতো এই পতিসরে এসে লিখেছিলেন।

    যেগুলো কবি নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসর তার কাছারী বাড়িতে এসে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকা-বাঁকা নাগর নদীকে নিয়ে লিখেছিলেন। এছাড়াও বিশ্বকবি তার বিখ্যাত কবিতা “দুই বিঘা জমি” “সন্ধ্যা” সহ অসংখ্য জগত বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম রচনা করেছেন এই পতিসরের কাছারী বাড়িতে এসে।

    ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবির ১৫৬ তম জন্মোৎসব সরকারি ভাবে উদযাপন করবে এই পতিসর কাছরী বাড়ি। তাই পুরনো এক বছরের সকল জরা-জীর্ণকে পিছনে ফেলে নতুন বছরের আগমনের সঙ্গে বিশ্বকবির জন্মকে নতুন চিত্তে ভাবার জন্য ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হচ্ছে কবির পতিসরের এই কাছারী বাড়িকে। সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। কবিগুরুর এই অনুষ্ঠান করার জন্য প্রস্তুত কাচারী বাড়ির দেবেন্দ্র ম । দুপুর ২টায় শুরু হবে এই অনুষ্ঠান।

    এবারই প্রথম এই পতিসরে সরকারের কোন রাষ্ট্রপতি আসছেন। তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মো: আবদুল হামিদকে বরণ করে নিতে উত্তরবঙ্গের রবি ঠাকুরের স্মৃতি ধন্য এই পতিসর এখন প্রস্তুত। এবার পতিসরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এখানে আসবেন মন্ত্রি, এমপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশ বরেন্য বিখ্যাত শিল্পি ও রবীন্দ্র ভক্তরা। নাচ, গান আর বিশ্বকবির রচিত কবিতা আবৃত্তি করে উদযাপন করা হবে বিশ্বকবির জন্মোৎসব। প্রায় এক বিঘা জমির উপড় অবস্থিত কবির এই কাছারী বাড়ি। এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র।

    সূত্রে জানা, ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই কালিগ্রাম পরগনাকে ক্রয় করে ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অংশে অর্ন্তভুক্ত করেন। এরপর বিশ্বকবি ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জানুয়ারী প্রথম আসেন তার এই পতিসরের কাছারী বাড়িতে জমিদারী দেখাশোনা ও খাজনা আদায় করতে। সেই সময় এই পরগনা থেকে খাজনা আদায় হত প্রায় ৫০,৪২০টাকা। বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ থেকে তিনি এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালিন সময়ে এখানে অবস্থিত কৃষি ব্যাংকের মারফত পাঠিয়েছিলেন। এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেয়ার লক্ষে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনষ্টিটিউশন স্থাপন করে এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শত বিঘা জমি দান করেন। আর এই ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই কবি শেষ বারের মত এসেছিলেন তার পতিসরের কাছারী বাড়িতে।

    কবির ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকার প্রজাদের জন্য সর্বপ্রথম আধুনিক সময়ের কলের লাঙ্গল এনেছিলেন। পরবর্তি সময়ে তৎকালিন সরকার ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এক অডিন্যান্স বলে কালিগ্রাম পরগনার জমিদারি কেড়ে নিলে ঠাকুর পরিবারের এই জমিদারি হাতছাড়া হয়ে গেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বস্ত্রীক পতিসর যাতায়াত বন্ধ করে দেন। তৎকালিন রবীন্দ্র বিরোধী পাকিস্তান সরকার ১৯৪৭ হতে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে দেয়নি ।

    এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সেই সময়ের তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর সর্বপ্রথম অতিথি হিসেবে এখানে এসেছিলেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাবে পতিসরের এই রবীন্দ্র কাছারী বাড়ি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং সরকারি ভাবে প্রতি বছর এখানে বিশ্বকবির জন্মোৎসব উদযাপন করা হয়। এবছরের ১এপ্রিল হতে এখানে টিকেটের ব্যবস্থা করা হয় । মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫টাকা, মাধ্যমিকের পর হতে সকল পর্যায়ে ১৫টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০টাকা এবং ইউরোপের নাগরিকদের জন্য ১০০টাকা হিসেবে টিকেটের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর।

    নওগাঁ শহর থেকে পতিসরের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার এবং আত্রাই হতে ৪৬ কিলোমিটার। নওগাঁ এবং আত্রাই হতে মাইক্রোবাস, বাস, সিএনজি যোগে পতিসরে যাওয়া যায়।

    সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা, পতিসরে দিনব্যাপী কবিগুরুর জন্মোৎসব উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নওগাঁ জেলা প্রশাসন এই জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

    এবার কবিগুরুর পতিসরের কাছারী বাড়িতে কবির জন্মোৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মো: আবদুল হামিদ।

    স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: ইব্রাহিম হোসেন খাঁন। স্মারক বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ।

    বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান।

    এবিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে  জানান, বিশ্বকবির জন্মোৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে কবির কাচারী বাড়িকে নতুন করে সাজানো এবং অতিথিদের আগমনসহ অনুষ্ঠান যেন ভালো ভাবে উদযাপন করা যায় সে লক্ষে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।

    স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করছেন মহামান্য রাষ্টপতির আগমন এই এলাকাকে করবে ধন্য এবং আধুনিকতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছে দিবেন। এর সঙ্গে এলাকাবাসীর দাবী মহান রাষ্ট্রপতি কবি গুরুর এই স্মৃতি বিজড়িত কাচারী বাড়ির পরিসর বৃদ্ধি, মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি, দেশের ও বিদেশের কবি ভক্তদের এখানে এসে থাকার আবাসিক সুব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ আরো অনেক উন্নয়ন মূলক কাজের ঘোষনা এবং তা অতিদ্রুত বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা ও আশ্বাস বানী দিয়ে যাবেন।