রাস্তা তুমি কার ?

    0
    490
    হৃদয় দাশ শুভ,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের ভিতরে খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম, খোঁড়াখোড়ির কারনে স্থানীয় জনসাধারণ ও পর্যটকদের চলাফেরা কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। সবচাইতে দুর্ভোগের উৎস হলো শ্রীমঙ্গল শহরের পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের ভাঙ্গা রাস্তা। ভাঙ্গা রাস্তার জন্য স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। তবে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাস্তার কাজটি সওজ এর আওতায় পড়েছে বলে দাবী করছে পৌরসভা। তাই শহরের খানাখন্দে ভরা দিয়ে দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হচ্ছে পৌরবাসী কে৷
    সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, শহরের চৌমুহনা চত্বর থেকে স্টেশন সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা খন্দে ভরা। শহরতলীর রেলগেট এলাকা থেকে সরকারি খাদ্য গুদাম পর্যন্ত রাস্তাটি শহরের সব চেয়ে খারাপ রাস্তা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। শহরের রেলগেইটের সামনের রাস্তার প্রায় ১০ ফুট অংশ চলাচল অনুপযুক্ত রয়েছে।
    ফলে প্রায়ই যানজট ও ছোটখাট দূর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া, কিছুদিন পরপর শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা -সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের উভয়পাশ খোঁড়াখোড়ির কারনে মুল রাস্তার প্রায় ৪ফুট প্রশস্ততা কমে গিয়েছে, খোড়াখোড়ির পর আর রাস্তা সংস্কার করা হয় না। মাটি, কংক্রিটের কারনে রাস্তার পাশ উঁচু হয়ে পড়ে এবং সামান্য বৃষ্টি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
    নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, সরকারের এ মেয়াদে উপজেলায় পিচঢালা রাস্তা নির্মান বৃদ্ধি পেলেও নিমার্ণ ত্রুটি ও রাস্তাঘাট নির্মাণের উপকরণ সঠিক মাত্রায় না থাকায় রাস্তা তৈরীর ছ’মাস বা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খানাখন্দে ভরে উঠছে। একশ্রেণীর রাজনৈতিক মদদপুষ্টরা এসব কাজ পেয়ে কোন রকমে কাজ সম্পাদন করে থাকে। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তর এসব অনিয়মের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে উপরন্তু নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে এসব গুনগতমানহীন কাজের ব্যাপারে নীরব থেকে প্রকারান্তরে বৈধতা দিয়ে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে, লোকদেখানো যে সংস্কারকাজ করা হয় সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্বের কারনে সরকারের উন্নয়নের প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারছে না এলাকার জনগণ।
    শ্রীমঙ্গলে আসা বেশকিছু পর্যটক এর সাথে রাস্তার দুর্ভোগ নিয়ে কথা বললে তারা বলেন,  বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরী না হলে তো একে শহর বা নগর বলা দুস্কর হতো। যেখানে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামের অভাবনীয় উন্নয়ন হচ্ছে সেখানে একটা গুরুত্বপুর্ণ পর্যটন উপজেলা এভাবে অনুন্নত রয়ে গেছে তা দুঃখজনক।
    স্থানীয় পলাশ মিয়া বলেন, “আমরা চাই উন্নত রাস্তা, কার অধীনে আছে আর কে কাজ করবে কে করবে না করবে, এসব দায়সারা কথা জনগণকে ধোঁকা দেবার শামিল। জনপ্রতিনিধিদের এসব কথা জনগণকে তোয়াক্কা না করারই শামিল।”
    শ্রীমঙ্গল গ্রীনলিফ গেষ্ট হাউজের মালিক এসকে দাশ সুমন বলেন, শহরের ভিতরে এরকম ভাঙ্গা, পুরো উপজেলার চিত্র কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। শ্রীমঙ্গলে বেসরকারী খাতে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু হতাশার বিষয় সরকারি নজরদারি আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় এখানকার সামগ্রিক উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, ভাঙাচোরা আর বেহাল রাস্তা ঘাটের কারনে এখানকার পর্যটন শিল্পে স্থবির ভাব দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তা প্রয়োজন ৷
    শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া জানান, শহরের ভিতরের যে রাস্তাগুলো ভাঙ্গা তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায়। এই রাস্তার কাজ তারাই করবে। পৌরবাসী ও পর্যটকদের চলাচলাচলের কথা ভেবে আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অনেক বার বলেছি রাস্তার কাজটা করে দিতে। আমাদের দায়িত্বে না থাকার কারনে পৌরসভা কিছু করতে পারছে না।
    সড়ক ও জনপথ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেব বলেন, আমরা প্রায়ই সড়কে ছোট বড় গর্ত ঠিক করার কাজ করে আসছি। শ্রীমঙ্গল থেকে শমসেরনগর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার সড়কের বড় ধরনের সংস্কার কাজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজটি শেষ করতে দেড় বছর সময় লাগবে।