লাউয়াছড়া কমিটির ৯৯ ভাগ সদস্য গাছ চোরের সাথে জড়িত!

    0
    245

    প্রতি বছর লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে মারা যাচ্ছে  অসংখ্য বন্যপ্রাণী

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০ডিসেম্বর,জহিরুল ইসলামঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ও কমলগঞ্জের মধ্যবর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রতিবছর লোকালয়ে গিয়ে বিদ্যুপৃষ্ট, ট্রেন ও গাড়ির চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণীর  সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

    যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ি এলাকার সড়ক ও রেলপথে প্রতিমাসে/প্রতিবছর বণ্যপ্রাণী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কমপক্ষে ১০টি মায়া হরিণ লোকালয়ে ধরা পড়ে। অনেকেই  গভীর রাতের আধাঁরে মায়া হরিণ ধরে খেয়ে ফেলছে , এর মধ্যে রেলপথে ও সড়ক পথে ৪টি মায়া হরিণ, গুইসাপ, দাঁড়াশ সাপ, বেন্ডেড ক্রেইট, ব্যাঙ, লিজার্ড, সবুজবরা সাপ, গন্ধগোকুল, গোল্ডেন জ্যাকেল, সিভিট, পেরিস ল্যাংঙ্গুর মোট ৪০টি বণ্যপ্রাণী মারা গেছে বলে জানান  শ্রীমঙ্গল বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

    সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী গবেষণা কাজে নিয়োজিত একটি দল গত বছর ও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে এক পরিসংখ্যান প্রদান করেন। ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে গোল্ডেন জ্যাকেল ১টি, ক্রিকেট ফ্রগ ২৫টি, ইসমিথ লিটিল ফ্রগ ২টি, মাইক্রো হাইলিফ ফ্রগ ৯টি, আনআইডেনটিফাইড ফ্রগ ১৩টি, চিকাল কিলব্যাক ৩টি, ব্লাকক্রেইট ১টি, বেন্ডেড ক্রেইট ১টিসহ মোট ৫৫ বন্যপ্রাণী মারা যায়। একই বছরের অক্টোবর মাসে মোট ৪৪টি মারা যায়। এর মধ্যে ছিল ক্রিকেট ফ্রগ ১৫টি, ইসমিথ লিটিল ফ্রগ ৪টি, মাইক্রো হাইলিফ ফ্রগ ১০টি, কপস ফ্রগ ৬টি, কমনট্রি ফ্রগ ৩টি, আনআইডেনটিফাইড ফ্রগ ৬টি।

    লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাইথন  প্রজেক্টের বণ্যপ্রাণী গবেষক শাহরিয়ার সিজার সম্প্রতি তার এক গবেষণার প্রতিবেদনের বলা হয় , লাউয়াছড়া বনে সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় প্রতিমাসে ৪৫টি করে বণ্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। বণ্যপ্রাণীদের এ অনাকঙ্খিক্ষত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বণ্যপ্রাণী নিরাপত্তার কথা ভেবে বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জাতীয় উদ্যানের ভিতরের ভানুগাছ- কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল  প্রধান সড়কটিও বিকল্প জায়গায় স্থানান্তর করার প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন বিভাগে প্রেরণ করেছে। একই সঙ্গে জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রেলপথও স্থান্তান্তর করা নিয়েও পরিবেশবাদীরা সরকারের উচ্চ মহলে জোর দাবি তুলেছেন। সর্বশেষ গত কিছু দিন পুর্বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রেলগেট এলাকায় দ্রুতগ্রামী একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে একটি মায়া হরিণ মারা যায়। একই সময় আবার মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় বিদ্যুতের তারে বিদ্যুপৃষ্ঠ  হয়ে একটি চশমা হনুমানও মারা যায়। চশমা হনুমান ও মায়া হরিণ প্রাণী গুলোর মধ্যে বিরল প্রজাতির।

    বন বিভাগের (বন্যপ্রাণী  ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) সহকারী বিভাগীয় বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জাতীয় উদ্যানের রেলগেট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে একটি মায়া হরিণ এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে একটি চশমা হনুমান  মারা গেছে ।

    বাংলাদেশ বণ্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জণ বলেন , আগে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বন্য প্রাণী রক্ষা হবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান কি ? জাতীয় উদ্যান না কি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ? সেটা যদি বণ্যপ্রাণী রক্ষার জন্য করা হয় তাহলে সেখানে বনের ভিতরে পর্যটকদের বনভোজন ও পর্যটকরা আসা-যাওয়া বন্ধ করা হউক, আর সেটা যদি জাতীয় উদ্যান হয় তাহলে পর্যটক আসুক। পর্যটকদের আসা-যাওয়ার কারনে বনের বন্যপ্রাণীরা বনে থাকতে পারে না। কিছু অসাধু বন কর্মকর্তার কারণে  গাছ চোররা বনের ভিতরে গাছ-পালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এতে করে বন ধব্বংস হচ্ছে। আর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনের বন্যপ্রাণীরা। যার কারণে বনের ভিতরে এদের আহারের জন্য কোন খাদ্যদ্রব্র থাকছে না। যার কারনে বন্য প্রাণীরা খাবারের সংকটের কারণে বন থেকে লোকালয়ে যাচ্ছে। এতে করে লোকালয়ের মানুষের হাতে ধরা পড়ছে বন্যপ্রাণী অজগর সাপ ও মায়া হরিণ । বিশেষ করে মায়া হরিণ লোকালয়ে ধরা পড়লে সেগুলোর আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

    ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল এই তিন মাসে বন্যপ্রাণীরা বংশ বিস্তার করে, কিন্ত এই সময় বনের ভিতরে বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত করা যাবে না । এই কাজটি  কি আইপ্যাক ও নির্সগ কমিটি করে না করে না ? এমন প্রশ্ন অনেকের।

    তাছাড়া উন্নত দেশে বন উন্নয়নের জন্য কমিটি করা হয় বন উন্নয়নের জন্য। আর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আইপ্যাক ও নির্সগ  কমিটি করে বনকে আরো ধব্বংস করছে। আর এই কমিটির ৯৯ ভাগ সদস্য গাছ চোরের সাথে জড়িত বলে সচেতন মহলের দাবী,তাহলে বনের উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব ? এতে করে বন বিভাগের কর্মকর্তা বন রক্ষা করতে অনিহা প্রকাশ করছে। বনের উন্নয়ের জন্য আইপ্যাক ও নির্সগ, এনজিও কাজ করছে, কিন্তু সচেতন মহল বলছে এনজিও গুলো বাস্তবে কোনই কাজ করছে না। তারা বলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হলে আগে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।