শামীম ওসমান খুব শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি

    0
    214

    আমারসিলেট24ডটকম,২৫মেঃ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদসদস্য শামীম ওসমান খুব শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেনসরকার গঠিত তদন্ত কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য।হত্যা মামলাটির প্রধান অভিযুক্ত আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানেরফোনে কথোপকথনের রেকর্ডটি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ার দু’দিন পর সংশ্লিষ্টকর্মকর্তারা জানান, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার এটিই সঠিকসময়।

    গত ২৯ এপ্রিল নূর হোসেন ও শামীম ওসমানের এই কথোপকথন থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়যে, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নূরকে সাহায্য করার নিশ্চয়তাদিয়েছিলেন শামীম।

    সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই হত্যাকাণ্ডে শামীমের জড়িত থাকার সম্ভাবনাআছে কি-না তা নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। কারণ অভিযুক্ত হত্যাকারী নূর ও নিহতনজরুল- দুজনেরই পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি।নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তারা আরো জানান, এছাড়াওহত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে- বরাবরই নূর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শামীমওসমানের।

    প্রসঙ্গত, হত্যার উদ্দেশ্যে নজরুলকে অপহরণ করার সময় পরবর্তী সময়ে বিষয়টিধামাচাপা দিতে তার সঙ্গে থাকা সহযোগীদের এবং প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আইনজীবীচন্দন সরকার ও তার গাড়িচালককেও অপহরণ ও পরে এদের প্রত্যেককেই নির্মমভাবেহত্যা করা হয়।
    নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পুরো অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রক ও গডফাদারহিসেবে এক ভয়ঙ্কর ভাবমূর্তির অধিকারী শামীম ওসমান স্বীকার করেছেন, নূরহোসেনের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এটাও দাবি করেন যে, কথোপকথনটিগণমাধ্যমে আংশিক প্রকাশ করা হয়েছে।নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দাবি- শামীম ওসমানকে গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
    গত ২৭ এপ্রিল চার সহযোগীসহ নজরুল এবং গাড়িচালকসহ আইনজীবী চন্দন সরকার- মোটসাতজনকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়ক থেকে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ এপ্রিল নজরুল ওচন্দনসহ অপহৃতদের মধ্যে ছয়জনের মৃতদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায়উদ্ধার করা হয় এবং ঠিক তার পরদিনই বাকি আরেকজনের মৃতদেহও নদীতে ভেসে ওঠে।নজরুল ও চন্দন ছাড়া নিহত বাকিরা হলেন- মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, জাহাঙ্গীর এবং ইব্রাহিম।

    এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে অন্তত ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেনেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আবার দু’বার করেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।কিন্তু তাদের কেউই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিদেননি।এই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নূর হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী, গাড়িচালক এবং দেহরক্ষীরাও রয়েছেন।

    পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেবল একজন জানিয়েছেনকিভাবে পুরো অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ওই ব্যক্তির তথ্যথেকে জানা গেছে, কিভাবে দুর্বৃত্তদের দলটি নজরুল ইসলাম ও বাকি ছয়জনকে অচেতনকরার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী একটি জায়গা থেকেঅপহরণ করে। অপহরণের পর সাতজনকেই নূর হোসেনের ট্রাক স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়েআসা হয় এবং সেখানেই তাদের নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

    কিন্তু এসব তথ্য জানানোর পর আবার ওই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি তার বক্তব্যপ্রত্যাহারও করে নিয়েছেন এই বলে যে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অতিরিক্ত চাপের মুখেপড়ে তিনি বাধ্য হয়েই এসব কথা বলে ফেলেছেন।

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মৃতদেহগুলোর ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদেরভুলের কারণে ওই ব্যক্তির এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ময়নাতদন্তের সময় মৃতদের কারোরই শরীরের অভ্যন্তরের ভিসেরা পরীক্ষার মাধ্যমে কোনোনমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ফলে হত্যা করার আগে নজরুল ও বাকি ছয়জনকে অচেতন করাহয়েছিল কি-না তা জানা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

    নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন দুলাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, “আমরা ভিসেরা নমুনারাখিনি। কারণ ময়না তদন্তের সময় চোখে দেখেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতহওয়া গিয়েছিল।”

    এদিকে, পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যা ব সদস্যরানজরুলকে হত্যা করেছেন বলে নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান যে দাবিকরেছেন তা আদতেই কতটা সঠিক তা জানা তখনই সম্ভব হবে যখন মামলায় অভিযুক্ত সবআসামিকে গ্রেফতার করা হবে।

    শহীদ চেয়ারম্যানের অভিযোগ অনুযায়ী- র্যা ব ১১’র কমান্ডিং অফিসারলেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্টকমান্ডার এসএম মাসুদ- এই তিন সাবেক র্যা ব কর্মকর্তাকে হত্যা মামলারসন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গত ১৭ ও ১৮ মে গ্রেফতার করা হয়।

    হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক ওমেজর আরিফের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ, এর আগে পর্যন্ত এই মামলারঅভিযুক্ত আসামি ছিলেন ছয়জন।

    নারায়ণগঞ্জ থানার সাবেক পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও সচিবালয়ের সাবেকউপ-কমিশনার মনোজ কান্তি বড়ালকে রোববার জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত কমিটি। এইদুই ব্যক্তিই অনেক আগে থেকেই নূর হোসেনের অপরাধী কর্মকাণ্ডকে অব্যাহতভাবেউপেক্ষা করে এসেছেন বলে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদেরঅভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তাদের বদলি করা হয়।

    এদিকে, শনিবার রাতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শামীম ওসমানকে গ্রেফতারেরদাবি জানান। চাঞ্চল্যকর এই হত্যামামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেফতারেরপথে শামীম ওসমান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন বলে নিজেদের বিশ্বাসের কথাওজানান তারা।

    সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় অবস্থিত নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলইসলামের বাড়ির সামনে থেকে তার পরিবারের সদস্য ও সমর্থকরা শনিবার আনুমানিকরাত ৮টার দিকে একটি মিছিল বের করেন। এ সময় তারা শামীমের গ্রেফতার ও শাস্তিরদাবি জানিয়ে স্লোগানও দেন।

    জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ সে সময়নজরুলের বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছিলেন। নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে তিনিসেখানে গিয়েছিলেন।

    এই প্রথমবার কোনো মিছিলে শামীম ওসমানকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়া হলো। সূত্রঃডেইলি স্টার।