বিক্রমজিত বর্ধন,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দেশ যেখানে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, সরকার যেখানে সব নাগরিকের জন্য বাসস্থান নিশ্চিতকরণে কাজ করছে, বিষ্ময়করভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে ঠিক এমনই সময় দি কনসলিডেটেড টি এন্ড ল্যান্ডস লিমিটেড ফিনলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ চা শ্রমিককে বাসস্থান ছেড়ে দেবার নির্দেশ ও মানসম্পন্ন গৃহ নির্মাণের উপর মৌখিক নিষেধাজ্ঞা সহকারে, কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা ও নিরীহ শ্রমিকের নির্মিতব্য গৃহ ভেঙ্গে দেবার অভিযোগ করেছেন উপজেলার কালীঘাট ইউপির কাকিয়াছড়া চা বাগানের একটি শ্রমিক পরিবার।
জানা যায়, মো. মোস্তাকিম নামে চা বাগানের সাবেক শ্রমিক,পারিবারিক প্রয়োজনে গৃহ প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করলে বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. তানভীর একদল লোক নিয়ে এসে কাজ বন্ধ করে দেন ও গৃহনির্মাণ কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে টিন দিয়ে তৈরী করা বেষ্টনী ভাংচুর করে ফেলে দেন। পরে বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সুকুমার ভর সহকারে ভুক্তভোগী শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা বাগান ব্যবস্থাপকের নিকট গেলে, তাদেরকে বাগান থেকে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পাকা ঘর নির্মাণ করতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের মধ্যে হিন্দু – মুসলিম – খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী প্রায় ৯৩ টি জনগোষ্টির লোকজন এ শিল্পের সাথে জড়িত।
সাধারণত, চা বাগান অভ্যন্তর এলাকায় বসবাসরত এসব জনগোষ্টি চা শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। তবে, এসব শ্রমিকের ভূমির উপর মালিকানা নেই কারন চা বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারের ভূমি বন্দোবস্ত নিয়ে যুগ যুগ ধরে চা শিল্পের ব্যবসার সাথে জড়িত। আর চা শিল্পে শ্রমিকের চাকুরীসুত্রে প্রাপ্ত বাসস্থানে বংশানুক্রমিকভাবে বসবাস করে আসছে শ্রমিক পরিবারগুলো। বাগান কর্তৃপক্ষ এ ভুক্তভোগী শ্রমিকের পরিবারে কোন স্থায়ী শ্রমিক না থাকায় প্রকৃতপক্ষে এ পরিবার থেকে কোন শ্রমিক নিয়োগ না করায়, পরিবারটি বাগানে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে বলে দাবী বাগান কতৃপক্ষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, মো. মোস্তাকিমের ঘরটি চা আবাদের (কৃষিজ) জায়গা ভিন্ন পতিত জমি। এখানে বিভিন্ন শ্রমিকের কাঁচা, আধাপাকা, পাকা ঘরবাড়ি রয়েছে। কিন্তু, পরিবারে কোন স্থায়ী শ্রমিক না থাকার কারন দেখিয়ে উচ্ছেদের কথা বলছে ফিনলে চা কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক ও ঐ পরিবারের সদস্য মুক্তা মাহমুদ বলেন, বাগানের গেরুয়া পথ, জরাজীর্ণ ঘর, টিলাগুলোর সাথে তাদের রয়েছে গভীর নাড়ির টান। তার পরিবার ৫০-৬০ বছরেরও অধিককাল ধরে চা বাগানে বাস করছেন এবং শ্রমিকের কাজে যুক্ত ছিলেন। বর্তমান শ্রমিক বান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল মানুষের আর্থ – সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। আমরাও নিজেদের অবস্থানকে একটু উন্নততর করার পদক্ষেপ নিতে না নিতেই বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের উপর অমানবিক আচরণ করেছে ও অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে ধাবিত হতে প্ররোচণা দিচ্ছে। চা শ্রমিক বাগানে ছিলো, বাগানেই থাকবে যেহেতু তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
এ পরিবারের সদস্য বলেন, ‘আমরা বাগানে কাজ করতে আগ্রহী, কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি কাজ না দেয়, আবার কারো কাজ না থাকার খোঁড়াযুক্তিতে যদি আবাসভূমি (দখলীস্বত্ব) থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে তাহলে সরকার আমাদের অনুকুলে সরকারের ভূমি লীজ দিয়ে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিক এখানে বা অন্যত্র। এটা মালিকপক্ষের বিভিন্ন প্রকার নিপীড়নের মধ্যে অন্যতম একপ্রকার নিপীড়ণ। যেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক মানুষের বাড়িঘর নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর, সেখানে ফিনলে কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপ সরকারের নীতি বিরোধিও বটে ।’
এ বাগানের বাসিন্দা, সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, হিন্দু – মুসলিম বুঝি না, ১৫০ বছর ধরে যারা এলাকায় বংশানুক্রমিকভাবে বাস করছে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকী অত্যন্ত অমানবিক। চা বাগান এলাকায় পাকা ঘর করা যাবে না মর্মে যদি কোন আইন থাকে তাহলে কেন বাগান কর্তৃপক্ষ এতোকাল ধরে পাকা ঘর নির্মাণ করতে দিয়ে এখন কেন তাতে বাধা দিচ্ছে।