শ্রীমঙ্গলে বেপরুয়া বালুবাহী ট্রাক চাপায় শিশু ও নারীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে সড়ক অবরোধ

0
19
লাশ উদ্ধারের পর গাড়িতে তোলার আগ মুহূর্তে স্থানীয়দের আশ্বাস দিচ্ছেন উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেব

আমার সিলেট শ্রীমঙ্গল রিপোর্ট:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সোমবার (১জুলাই-২০২৪) সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বেপরোয়া অবৈধ বালুবাহী ট্রাক চাপায় এক শিশু ও মধ্য বয়সী নারীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রশাসন ও স্থানীয় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নিহতরা হচ্ছে শিশু কন্যা সাফিনা আক্তার সাবিহা (৫) পিতা দুদুমিয়া গ্রাম আলিশারকুল, বহু নবীর ইউপিশ্রীমঙ্গল ও পেয়ারা বেগম (৪৫) পিতা মৃত জবান উল্লাহ গ্রাম পাত্রীকুল, ভূনবীর ইউপি,শ্রীমঙ্গল ,মৌলভীবাজার।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের অন্তর্গত পার্তিকুল গ্রামের আঞ্চলিক পাকা সড়কে। সড়কটি সাতগাঁও এলাকার ঢাকা সিলেট হাইওয়ে রোড থেকে মির্জাপুর ইউনিয়নমুখী।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, নিহত পেয়ারা বেগম তার বোনের শিশুকন্যা সাফিনা আক্তার সাদিয়াকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ ডাক্তারের কাছে ওষুধের জন্য গিয়েছিলেন, ফেরার পথে প্রথমে একটি অবৈধ বালু বাহি ট্রাক তাকে রাস্তার পাশে চাপা দিলে শিশু মেয়েটি তার হাত থেকে ছিটকে দূরে পড়ে যায়,একই সময়ে পিছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা ওপর আরেকটি বালুবাহি ট্রাক শিশু বাচ্চাটিকেও চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা এ ঘটনা দেখে ট্রাকগুলোকে (মির্জাপুর গামী ২টি খালি বালুর ট্রাক যার রেজি: নং- ঢাকা ড-১১-১৮৩২ ও রেজি: নং- ঢাকা ড-১১-২১৬৫ ) আটক করার চেষ্টা করে কিন্তু সম্ভব হয়নি।

সূত্র থেকে প্রাপ্ত তত্ত্বে জানা যায়, একটি ট্রাকের চালক শাকিল মিয়া (২৪) পিতা- দুদু মিয়া সাং- পাত্রীকুল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও অপর ট্রাকের চালক অজ্ঞাত।

দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের হসপিটালে প্রেরণ করার চেষ্টা করলে দেখা যায় ঘটনাস্থলেই পেয়ারা বেগমের মৃত্যু ঘটে। এ সময় শিশুকন্যাটি জীবিত থাকায় তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করেন সেখান থেকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় হাজারো স্থানীয়রা রাস্তায় নিহত নারীর লাশ রেখে রাস্তা অবরোধ করে। এ ঘটনা শুনে প্রথমে ঘটনাস্থলে এসআই আমিনুল ইসলাম সহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যান মৃতদেহটি উদ্ধার করতে।এতে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় ও উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেবসহ পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও অপারেশন কর্মকর্তা তাপস রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অবৈধ বালু ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করে রাখে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদসহ সবাই ক্রমান্বয়ে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে, আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ উপজেলা কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে অত্র এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা আর করতে দেওয়া হবে না এমন অঙ্গীকারের পরে রাস্তার অবরোধ তুলে নেন।

স্থানীয়রা দাবি করেন অবৈধ বালু সিন্ডিকেট, মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পয়সা দিয়ে বছরের পর বছর এই অবৈধ ব্যবসা করে আসছে। অবৈধ ভালো ব্যবসায়ীরা খুবই বেপরোয়া তারা একদিকে মানুষ মারছে অপরদিকে পরিবেশেরও বড় ধরনের ক্ষতি করছে।
এ সময় স্থানীয়দের অনেকে অভিযোগ করেন বালু ব্যবসায়ীরা সেলো মেশিন দিয়ে রাত দিন মাটির গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব নষ্ট করছে এবং জমিন ও বাড়ি ঘরের বড় ধরনের ক্ষতি করে যাচ্ছে যে কোন সময় হালকা-পাতলা ভূমিকম্প হলেই ঐ সমস্ত এলাকায় বড় ধরনের ভূমিধ্বসে নামতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এ সময় বিক্ষুব্ধদের অনেকেই দাবি করেন এই সমস্ত অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন এর সাথে কিছু সাংবাদিকদেরও দায়ী করে তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন,যদি অবৈধ সুবিধা না দেওয়া হতো তাহলে বছরের পর বছর এ ব্যবসা টিকে তাকে কিভাবে? প্রশাসন পারেনা এমন কাজ আমরা কখনো শুনিনি বলে অনেকেই ব্যঙ্গ করেন।
এদিকে দ্বিতীয় দফা আবারো রাস্তা অবরোধ করেন, একই ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকার লোকজন, নিহত শিশু সাবিনা আক্তার সাদিয়া নিহত পেয়ারা বেগমের বোনের মেয়ে। নিহত সাফিনা আক্তার সাদিয়ার বাবার বাড়ি থেপাড়া এলাকায়। নিহত সাফিনা আক্তার সাদিয়ার বাবা একজন কৃষক।
এলাকাবাসী এক নারী জানান, নিহত পেয়ারা বেগম লেবুর বাগানে কাজ করে থাকেন তার শুধুমাত্র বৃদ্ধ মা জীবিত রয়েছে যাকে দেখাশোনা করারও কেউ নেই একমাত্র উপার্জন কারী পেয়ারার মৃত্যুতে তার বৃদ্ধা মা সবচেয়ে বেশি আশ্রয়হীন এবং অনিশ্চয়তায় ভুগবে।
তবে প্রশাসনের লোকজন বিশেষ করে উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেব তিনি উভয় পরিবারকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেব জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, বালু চোরদের সাথে আমি নেই এবং আমি কখনো থাকবও না এরকম কোন অবৈধ কাজের সাথে যদি আপনারা আমার কোন সংশ্লিষ্টতা পান তাহলে ব্যবস্থা নিবেন আমি আইনের উর্ধ্বে নয়। তার এই বক্তব্যে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট হয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়ের আশ্বাসে উভয় রাস্তার অবরোধ তুলে নেন। পরে পেয়ারা বেগমের মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করেন, অপরদিকে শিশু সাফিনা আক্তার সাদিয়ার মৃতদেহ ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। উভয়ের ময়নাতদন্ত শেষে আগামীকাল তাদেরকে দাফন করা হবে। শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।