শ্রীমঙ্গলে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিয়ে পৌরবাসীরা শঙ্কায়

    0
    259
    হৃদয় দাশ শুভ,শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে  ময়লার ভাগাড়ে ময়লা ফেলতে গত রবিবার সন্ধ্যা থেকে বাঁধা দিচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনরত স্থানীয় স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ফলে পৌর এলাকার ড্রেন ও বাসা বাড়ীর বাসিন্দাদের নিত্যদিনের স্তুপকৃত ময়লা গত চার দিন ধরে  ভাগাড়ে ফেলতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
    এ অবস্থায় বাসাবাড়ী,দোকানপাঠ হোটেলরেস্তোরাঁর ময়লা নিয়ে বিপাকে  পড়েছেন পৌরসভায় বসবাসকারী নাগরিকরা।পরিস্থিতি নিরসনে কোনও মহল থেকে কোন ধরনের উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না। সোমবার ও মঙ্গলবার শহরের চৌমুহনাচত্বর,উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল থানা জামে মসজিদের সামনে,স্টেশন রোডসহ হবিগঞ্জ রোড,পুরান বাজার,নতুনবাজার, মাছবাজার, গরুর বাজার কাঁচামালের বাজার এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এসব ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
    শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী  মো. সিদ্দিক মিয়া বলেন, গত তিন দিন ধরে বাজারের ময়লা আবর্জনা পৌর কর্তৃপক্ষের গাড়ি নিয়ে না যাওয়ার কারনে বাজারের সামনে ময়লার স্তুপ জমে গিয়েছে। ময়লার দূর্গন্ধে বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি কম। সম্মিলিতভাবে সবাই বসে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
    আন্দোলনকারীরা কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাশেঁর খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে। স্থানীয় এলাকা বাসী ও আন্দেলনকারীরা দিনে ও রাতে সেখানে পাহারা বসিয়েছে। যাতে পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ী সেখানে না নিয়ে যেতে পারে।
    সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাশেঁর খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়া। বেড়ার গায়ে বাশেঁর উপর  লম্বা ব্যানার টাঙিয়ে লিখা হয়েছে ‘১লা অক্টোবর ২০১৮ থেকে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ,দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসার সম্মুখে ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলা বন্ধ করুন।
    এহেন পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু কলেজ রোডস্থ নিজস্ব ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে পৌরসভার গার্বেজ ফেলার জায়গাটি উন্মুক্ত করার জন্য সহায়তা চেয়ে গত ১ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।  এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় পৌরসভার গার্বেজ ট্রাক চালক দেবেন্দ্র সিং গাড়ি নিয়ে গার্বেজ ফেলার জন্য গেলে অজ্ঞাত পরিচয়ে কিছু লোক গার্বেজ ফেলতে বাধা প্রদান করেন। এমতাবস্থায় গার্বেজ ফেলা বন্ধ হয়ে যায়।  পৌরসভার ট্রাক চালক ও অফিস সহকারী থানায় গিয়ে অফিসার ইন-চার্জকে বিষয়টি অবহিত করেন।
    বর্তমানে শহরে গার্বেজ ফেলা বন্ধ রয়েছে এবং গার্বেজের দুর্গন্ধে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।অচিরেই শহরে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনস্বাস্থ্য ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে’।  চিঠিতে মেয়র আরো উল্লেখ করেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর  জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করা হয়।  আসন্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গা পূজা সন্নিকটে তাই জরুরীভিত্তিতে এর সমাধান প্রয়োজন। যদি গার্বেজ ফেলার কোন সমাধান না হয় শহরে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।
    মেয়র কর্তৃক চিঠির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার সিনিয়র সচিব, সচিব, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ও পাঠানো হয়েছে।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান,‘অবস্থা তো খারাপ।  রোববার রাত থেকে এখন পর্যন্ত কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ী  যেতে পারছে না। আন্দোলনকারী লোকজন  গাড়ী ফেরত দিচ্ছে। তারা ময়লা ফেলা ঠেকাতে সন্ধ্যা থেকে রাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারীরা পালাক্রমে পাহাড়া দিচ্ছে।  এর ফলে শহরের বাসিন্দাদের বাসবাড়ী ও ময়লার ড্রেনে প্রতিদিন ১০/১৫টন গার্বেজ এর স্তুপ তৈরী হচ্ছে। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কেএম নজরুল ইসলাম জানান,বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে নির্দেশনা  মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
    এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য ও গ্রীন লীফ গেষ্ট হাউজের সত্বাধীকারী এস কে দাশ সুমন এ প্রতিনিধিকে বলেন, পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে দুঃখ অনেক, ভাঙ্গাচোড়া রাস্তাঘাট তার উপর আবার মরার  উপর খড়ার ঘা হিসেবে ময়লার স্তুপ যুক্ত হয়েছে। এতে স্থানীয়সহ বেড়াতে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকরা শহর সম্পর্কে বিরুপ ধারনা নিয়ে যাচ্ছেন।
    এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া বলেন, বিকল্প স্থানে (শ্রীমঙ্গল জেটি রোডে ময়লা ভাগাড় স্থানান্তরিতের জন্য ডিসি খতিয়ানের জায়গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পৌরসভাকে আ্যাকুয়ার করা হয়) শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নবাসীর পক্ষ হতে বাধা দেওয়া হয়েছে, আমি প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি, প্রশাসন থেকে সহায়তা পাইনি। ৪০ বছর ধরে এখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, হঠাৎ করে এ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদেরকে উসকানি দেওয়া হয়েছে, প্রকাশ্যে পৌরসভাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ময়লা ফেলার বিকল্প জায়গা না থাকার কারনে শহরে আবর্জনা জমে একটা বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। জনগুরুত্বপুর্ণ সার্বজনীন বিষয় সার্বজনীনভাবে সমাধানকল্পে সকল পক্ষের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
    উল্লেখ্য,দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রি,শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ স্থানিয়রা  কলেজ রোড থেকে ময়লার ভাগার দ্রুত স্থানান্তরের জন্য নানা ধরণের আন্দোলন করে যাচ্ছে, সর্বশেষ বিগত ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ,দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউসিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার সম্মূখ থেকে পৌরসভার ময়লার ভাগার অন্যত্র সরানোর দাবীতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
    এতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী,অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন অংশগ্রহণ  করেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ময়লার ভাগার অন্যত্র সরিয়ে না নেওয়ায় গত রবিবার সন্ধ্যা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না আন্দোলনকারীরা।সেখানে ময়লা ফেললে এর প্রতিবাদে স্কুল,কলেজ,মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা এক যোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনেরও হুমকি দেন।
    বর্তমানে  শহরে ময়লা  আবর্জনা ফেলা নিয়ে  পৌরবাসীরা শঙ্কায় রয়েছে ৷