হাওর আকাশে মেঘ,পাহাড়ে বৃষ্টিঃবাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় কৃষক

    0
    154

    সুনামগঞ্জের ৪৬টি হাওর পাড়ের লক্ষ লক্ষ কৃষকরা উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় !

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১মার্চ,জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জের ৪৬টি হাওর পাড়ের কৃষকরা কয়েক দিন যাবৎ আকাশে মেঘাচ্ছন্ন আর হালকা বৃষ্টি দেখে আতংকিত। কখন জানি পাহাড়ী ঢলের পানিতে ঘটে যায় হাওরের কোন বাঁধে বাঁধ ভাঙ্গার গটনা। হাওর পাড়ের কৃষকরা হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই বোরো ধানের চারা রোপন শুরু করে শেষ করলেও জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বাঁধ রক্ষার কাজ নির্ধারীত সময় পার হলেও সঠিক ভাবে বাঁধ নির্মান,মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ শেষ করে নি পাউবো। এখেনো বাঁধ নির্মানে দেরীর হওয়ায় ক্ষুব জারের বিভিন্ন উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবন্ধ। হাওরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাঁধ নির্মান করার নামে পিআইসির মাধ্যমে পাউবো পুকুর চুরি করার পায়তারা করায় কোন সাইন বোর্ড লাগনো হয় নি। কোন বাঁধে কি পরিমান অর্থ বরাদ্ধ হয়েছে,কি ভাবে কাজ হওয়ার কথা,তা কেউ যানে না। হাওর বাসীর একমাত্র সম্পদ বোরো ফসল রক্ষায় পাউবোর যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। তেমনি এসব হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও দেখার যেন কেউ নেই। শুধু অঘটন ঘটলেই শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। অথছ সময় মত বাঁধ নির্মান হলে কোন সমস্যাই সমস্যা হয় না। অথছ সুনামগঞ্জে ১৫শত কোটি টাকার অধিক উৎপাদিত বোরো ফসলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছে। সত কষ্টের পরও প্রতি বছর হাওর পাড়ের কৃষকরা এই এক ফসলী বোরো ধান জেলাবাসীর একমাত্র সম্পদ। আর বোরো ধান নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনে আসছে বংশ পরমপরায়।

    ফলে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে জেলার উল্লেখ্য যোগ্য বৃহৎ হাওর গুলো হলো-পাকনার হাওর,খরচার হাওর,শনির হাওর,হালির হাওর.মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,বলদার হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওর,দেখার হাওর,চাপাতি হাওর,তুফান খালি বোয়ালীয়া,মাছুয়ারাখারা,নলুয়ার হাওর,মইয়ার হাওর,সুরাইয়া বিবিয়ানা,জোয়াইরা সহ মোট ছোট-বড় ৪৬টি হাওর। জানাযায়,জেলার গত বুধবার (২২,০২,১৭ইং) ও বৃহস্পতিবার (২৩,০২,১৭ইং) দু-দিনের সামন্য বৃষ্টির পানি জেলার কয়েকটি হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে। তার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনারথাল হাওরের শয়তাল খালী ফসল রক্ষা বাঁধ সামান্য পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে ২৫০একর বোরো ধান পানিতে থলিয়ে গেছে। ঘুরমা প্রকল্পের পাশুয়ার হাওর প্রায় ২৫শত হেক্টর,ঘুরমা হাওরেও পানি ডুকেছে এতে প্রায় ১৫শত হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সময় মত এবং সঠিক ভাবে বাঁধের কাজ না হওয়ায় দূর্ভল বাঁেধর কারনে এমন ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার সামসার হাওরের বৈঠাখালি বাঁধ ভেঙ্গে সামন্য বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। টাংগুয়ার হাওর পাড়ের সন্যানী,এরালিয়া কোনা ও গনিয়াকুড়া ফসল রক্ষা বাঁেধ কোন কাজ না হওয়ায় ৩টি হাওরের প্রায় ৭শত একের জমির ধান গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।

    ফলে জেলার অন্যান্য হাওরের লক্ষ লক্ষ কৃষক আগাম বন্যায় কোটি কোটি টাকার এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকায় উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। প্রতি বছর সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ১৫ই ডিসেম্ভর থেকে ২৮শে ফ্রেরুয়ারীর মধ্যে জেলার ৪৬টি হাওরের বেরী বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ভাগ কাজও ভাল ভাবে করে নি পাউবো। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর,ছাতক,জামালগঞ্জ,দোয়রা বাজার,বিশ্বম্ভরপুর,দিরাই,শাল্লা সহ ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধের কাজ হচ্ছে দায়সারা ভাবে অভিযোগ উঠেছে। সরকার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ,পিআইসি ও ঠিকাদারদের বিরোদ্ধে দ্রুত জুড়ালো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় সর্বস্থরের জনসাধারনের মাঝে চরম ক্ষোব বিরাজ করছে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানাযায়,এ জেলার ১১টি উপজেলার ৪৬টি হাওরে আবাদী জমির পরিমান ৩,৭৯,২১৬হেক্টর,আবাধ জমি-২,৭৬,৪৪৭হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ২লাখ ১৫হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। আর জেলার ৪৬টি হাওরের হাওরের বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে ২২৫টি পিআইসি এবং ৪৮টি প্যাকেজে ঠিকাদারদের মাধ্যমে দু-শত ৩০কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ন ও মাটি ভড়াটে কাজ করবে। পিআইসিতে ১০কোটি ৭০লাখ টাকা ও দরপত্রের মাধ্যমে কাজ আদায়ের জন্য ৪০কোটি টাকার কাজ বরাদ্ধ পেয়েছে পাউবো। উৎপাদিত ধানের মধ্যে রয়েছে-হাইবিট,স্থানীয় ও বাকি জমিতে অকশি জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে। সব জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত ধান থেকে ৯লক্ষ মেঃটনের অধিক ফসল উৎপন্ন হয়। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশী। জেলার ২৫লক্ষাধিক জনসাধারনের মধ্যে প্রায় ২০লাক্ষাধিক মানুষ ঐসব হাওরে চাষাবাদের উপর নির্ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত করে থাকে। আরো জানাযায়,তাহিরপুরের হাওরগুলোতে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

    উপজেলার লালুগুয়ালা,বৈজ্ঞানি সুইচ গেইট,মেশিন বাড়ি,সাবনগড় বাঁধ,পুটিঁজুড়া বাঁধ সহ ১৮বাঁধ নিয়ে আতœংকিত লক্ষ লক্ষ কৃষক। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে উপজেলার সব কটি হাওরে সময় মত,সঠিক ভাবে বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৪০ভাগ কাজই শেষ হয় নি। ফলে তাহিরপুর উপজেলার উল্লেখ যোগ্য বৃহৎ হাওরগুলো হলো-শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,বলদার হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওর সহ ছোট-বড় মোট ২৩টি হাওরের উৎপাদিত ২শ কোটি টাকার অধিক ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক দিনপার করছে। জেলার হাওর পাড়ের কৃষক খেলু মিয়া,শফিকুল ইসলাম,সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,উত্তম রায় সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাওর পাড়ের সচেতন নাগরিক ও কৃষকদের সাথে কথা বলে তারা জানায়,হাওর রক্ষায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দিলেও সঠিক ভাবে,সময় মত বাঁধ নির্মান ও মেরামত না হওয়ার কারনে কষ্টের ফলানো সোনার ফসল সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যায়।

    এখনো বিভিন্ন হাওরের বাঁধে মাটি ফেলা হয় নি।  তাছাড়া দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ভাগ কাজ হয় না। এবারও এর ব্যাতিক্রম হয় নি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত শেষ করে নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিভিন্ন সংঘটনের লোকজন জানান,বিভিন্ন হাওরে নির্মিত বেরী বাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোন উপকারে না আসলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারী হয়েছে আর পিআইসি মাধ্যমে প্রতি বছর দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে পাউবো যা অপেন সিক্রেট যার প্রমান এখনো বাঁধ নির্মান না হওয়া। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান,আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি,সঠিক ভাবে ও সময় মত বাঁধ নির্মাণ না করায় হাওর বাসী আতœংকের মধ্যে আছে পাহাড়ী ডলের আশংকায়। প্রতি বছর পাউবো হাওরের বাঁধ নির্মান ও মেরামত করার নামে কোটি কোটি টাকা পুকুর চুরি করে। বাঁধ সামান্য পানির চাপে ভেঙ্গে কৃষকের কষ্টের ফলানো সোনালী ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এবার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি হলে এর দায় পাউবো কেই নিতে হবে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

    এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান,হাওরে পানি কমতে দেরী,জেলা পরিষদ নির্বাচন,পিআইসি গঠনে রাজনৈতিক নেতাদের চাপ ও গ্রুপিংয়ের কারনে জেলায় পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু করতে দেরী হয়েছে। টি আর কাবিখা ১২কোটি টাকা কাজ পেয়েছে আর আমরা পেয়েছি ১০কোটি টাকা। আমরা বড় বড় হাওর নিয়ে কাজ করি আমাদের নিয়ে শুধু কথা হয় ছোট ছোট হাওর গুলোও টিআর কাবিখার টাকা দিয়ে কাজ করা যায়। হাওরের বাঁধ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে।

    উল্লেখ্য,গত বছর জেলার ছোট বড় ৪৬টি হাওরে সময় মত ও সঠিক ভাবে বাঁধ মেরামত না করায় ১৫টি বাঁধ ভেঙ্গে ২৫টি হাওরের ৬০-৭০ভাগ পাকা,আধা কাচাঁ বোরো ধান সম্পূর্ন পানিতে তলিয়ে যায়।