৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে কী ঘটেছিল? পাভেল পার্থ

    0
    254

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫ডিসেম্বরঃ  রংপুর সুগার মিল লিমিটেড গাইবান্ধা জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শ্রীপ্রতিপুর মৌজায় এই চিনিকল তৈরি করা হয়। ১৯৫৪ সনে এই চিনিকল নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৫৭ সনে শেষ হয়। ১৯৫৭-৫৮ সন থেকে এই চিনিকলে উৎপাদন শুরু হয়। চিনিকলটি প্রায় ৩২৬ একর জায়গাতে অবস্থিত এর ভেতর ৭০ একর জায়গা তাদের খরিদকৃত। বিস্ময়করভাবে ১৯৫৪-১৯৫৫ সনে যখন নানাভাবে ‘রিফ্যুজিরা’ এসে আদিবাসী, বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলিম রায়তদের জায়গা জমিতে বসতবাড়ি গড়ে তুলছে তখনি পাকিস্থান সরকার ‘সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম’ এলাকাটি চিনিকলের ইক্ষু খামারের জন্য নিশানা করে। রংপুর চিনিকল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। কেন করে? কারণ এই এলাকায় একসময় আখ চাষের জন্য আদিবাসী ও বাঙালিরা জমি প্রস্তুত করেছিল এবং দেশিয় পদ্ধতিতে চিনি কারখানা তৈরি হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী খেড়ি কুশল, সোম কুশল ও গেন্ডারীর আবাদ হত এখানে। সেই আখ গরু দিয়ে মাড়াই করে তৈরি হত চিনি-গুড়। গোবিন্দগঞ্জের ঘোড়াঘাট ও বহমনকুন্ডা পরগণা ছিল আদিবাসী অধ্যুষিত। সাঁওতাল ও পাহাড়িয়া জাতির আধিক্য। সাঁওতাল, পাহাড়িয়াদের পাশাপাশি রবিদাস, বাঙালি হিন্দু,  জেলে ও কিছু মুসলিম কৃষক পরিবারও বাস করতো এলাকায়। ঘোড়াঘাট পরগণার বগদহ মৌজার একজন জমিদার ছিলেন বাগদা সরেন। ঘোড়াঘাট পরগণার জমিদার অখিল চন্দ্র চক্রবর্ত্তী বাগদা সরেনের জমিতে বগদহ মৌজায় একটি চিনিকল তৈরি করেন। বাগদা সরেনের নামে এর নাম হয় ‘বাগদা ফার্ম’। ১৯৪০ সনের পর থেকে বাগদা ফার্ম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। জমির রায়তগণ জমির স্বত্ব লাভ করেন। ১৯৫০ সনে প্রজাস্বত্ত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। ব্রিটিশ আমলে বিলিতি সাহেবদের আগমন ও শাসনের মাধ্যমে বাগদাফার্ম এলাকার নামটি হয়ে যায় ‘সাহেবগঞ্জ’। ১৯৫৬ সালে ‘পাকিস্থান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ ইক্ষু খামারের জন্য তৎকালীন সরকার ১৫টি সাঁওতাল ও পাহাড়িয়া আদিবাসী গ্রাম ও ৫টি বাঙালি গ্রাম উচ্ছেদ করে। ৫নং সাপমারা ইউনিয়নের রামপুর, সাপমারা, মাদারপুর, নরেঙ্গাবাদ ও চকরহিমাপুর মৌজার ১৮৪২.৩০ একর ভূমি ‘রংপুর সুগার মিলের ইক্ষু খামারের’ জন্য অধিগ্রহণের নামে কেড়ে নেয় তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্থান সরকার।

    কথা ছিল অধিগ্রহণের নামে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেয়া এই জমিনে আখ চাষ হবে। আখ ভিন্ন অন্য কোনো ফসল চাষ করা হলে বা চিনিকলের উদ্দেশ্যর সাথে সম্পর্কহীন কোনোকিছু করা হলে কেড়ে নেয়া এসব জমি আবারো ভূমিমালিকদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। অধিগ্রহণের পর বেশ কিছু জমিনে আখ চাষ হয় এবং আখ ব্যবহার করে চিনিও উৎপাদিত হয়। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অব্যস্থাপনার দরুণ ৩১ মার্চ ২০০৪ সালে  কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নানা সময় একবার চালু হয়, আবার বন্ধ হয় এভাবেই চলতে থাকে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অধিগ্রহণকৃত জমি বহিরাগত প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দিতে শুরু করে। অধিগ্রহণের চুক্তি লংঘন করে কেবলমাত্র আখচাষের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে ধান, গম, সরিষা ও আলু, তামাক ও হাইব্রিড ভূট্টা চাষ শুরু হয়। জন্মমাটি থেকে উদ্বাস্তু আদিবাসী ও বাঙালিরা পুরো ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে আনে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সনের ৩০ মার্চ গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকা সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্তকালে তারা উল্লিখিত জমিতে ধান, তামাক ও মিষ্টিকুমড়ার আবাদ দেখতে পান। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ১০ মে ২০১৬ তারিখে উক্ত ভূমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অ ল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন সরকার বরাবর। বাপ-দাদার জমিনে অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে আদিবাসী-বাঙালি ভূমিহীনদের তৈরি হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন। আন্দোলন দমাতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন ভূমিহীনদের সংগ্রামে হামলা-মামলার বাহাদুরি চালাচ্ছে। ১৯৬২ থেকে ২০১৬, দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে চিনি উৎপাদনের অজুহাতে রাষ্ট্র সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ভূমিউদ্বাস্তু হাজারো মানুষের সাথে বর্ণবাদী অন্যায় করে চলেছে।

    ২০১৬ সনের ৬ নভেম্বর চিনিকল ও রাষ্ট্র কর্তৃক ঘটে আরেক নির্দয় ঘটনা। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিক-কর্মচারী ও ভাড়াটে মাস্তান বাহিনী নিয়ে হামলা চালায় মাদারপুর মৌজায় নতুনভাবে ঘরবসতি নির্মাণ করে বসবাসরত নিরীহ আদিবাসী ও বাঙালিদের উপর। কয়েকমাস ধরে এখানে তারা মাটির ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছিলেন। আশেপাশের জমিনে খেসারী কালাই, ধান ও শস্যফসল বুনেছেন। হামলকারীরা আগুন জ্বালিয়ে তছনছ করে দেয়। নির্বিচারে গুলি করে। সব কিছু মুহূর্তে লুট হয়ে যায়।  প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চিনিকল মুহুর্তেই ঘরবসতি, স্কুল, মন্দির, জাহেরথান, খেলার মাঠ, মসজিদ, ধর্মস্থল, শস্যফসলের জমি সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চুরমার করে দেয়। শিশু, নারী ও প্রবীণের উপরও হামলে পড়ে আক্রমণকারীরা। এ ঘটনায় পুলিশ ও চিনিকলের আক্রমণে নয়াবসতিস্থাপনকারী সকল পরিবার একেবারেই গৃহহীন ও সর্বসান্ত হয়েছে। প্রায় সকলের শরীরে নির্যাতন ও জখমের দাগ। আহত ও রক্তাক্ত হয়ে আদিবাসীরা রংপুর, দিনাজপুরসহ হাসপতাল গুলোতে চিকিৎসার জন্য ছুটে গেছে। আহত ও জখমপ্রাপ্ত আদিবাসীদের চিকিৎসা দিতেও সরকারি হাসপাতালগুলো প্রথমে বাঁধা দেয় এবং অপরাগতা প্রকাশ করে। হামলা করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পুলিশ ও চিনিকলের আক্রমণে মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত শ্যামল হেমব্রম (৩৫) দিনাজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। পরের দিন পুলিশ মঙ্গল মার্ডীর (৫০) লাশ ফেরত দেয়। আহত অবস্থায় ঘরে মারা যান রমেশ টুডু। চোখে গুলিতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত দ্বিজেন টুডু জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইহ্নটিটিউটে, বিমল কিসকু ও চরণ সরেন ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সজল মুরমু নামের এক কিশোর ও ফুলমনি মুরমু নামের এক প্রবীণ নারী মারাত্মকভাবে গুলিতে আহত হয়েছেন। এখনো অনেক আদিবাসীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি, তারা কোথায় আছে নাকি নিহত হয়েছেন তাও স্পষ্ট নয়। ভয়াবহ এই নির্যাতনের ছবি ও খবর দেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। হামলাকারী প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবং নির্যাতিত উভয় দিক থেকেই নানা ধরণের মামলা ও রিট হয়েছে। প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ গ্রাম ভেঙে মানুষকে উদ্বাস্তু করে জায়গাটি তারকাঁটার বেড়া দিয়ে রেখেছে। আবার স্মরণ করা যাক কী ঘটেছিল ৬ নভেম্বর?

    ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুলিশ, সাপামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার, চিনিকল শ্রমিকদের নিয়ে কাটাবাড়ি মোড়ে আসেন। তাদের উপস্থিতি দেখে স্থানীয় আদিবাসী ও বাঙালিরা তাদের আগমনের কারণ জানতে চায়। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলেন, তারা ‘ধাখ’ কাটতে চান। তখন আদিবাসী-বাঙালিরা বলেন, গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সামনে আখ কাটতে হবে। কারণ কোনো প্রমাণ না থাকলে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ ‘চুরি’ হয়েছে এমন মিথ্যা অপবাদ চাপাতে পারে। এ নিয়ে চিনিকলের সাথে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। চিনিকলের সাথে আসা সাপমারা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শাহআলম সরকার এ সময় পুলিশের দিকে তির ছুঁড়ে মারে। এ নিয়ে পুলিশ মারমুখী হয়। চিনিকলের লোকজন মাঝি হেমব্রম ও দ্বিজেন টুডুকে ধরে আটকে ফেলে। পুলিশ এ সময় কোনো ঘোষণা ছাড়াই জনতার দিকে গুলি ছুঁড়ে। প্রতিবাদী জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং দেখতে পায় শ্যামল হেমব্রমসহ তিনজন আদিবাসী গুলিতে জখমপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় আহতদের হাসপাতালে নিতে সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ চলে যায়। মাদারপুর মৌজার নয়াবসতিস্থাপনকারীরাসহ লোকজন ঘরে ফিরে আসে। হাসপাতালে নেয়ার সময় গুলিতে জখমপ্রাপ্ত শ্যামল হেমব্রম মারা যায়। বিকেলে নারীরা চুলায় আগুন ধরিয়েছে। চাল ধুয়ে রেখেছে। আলু ও শাকপাতা কেটেছে রাতের খাবারের জন্য। শিশুরা হাত পা ধুয়ে বই নিয়ে বসেছে কেউ। প্রবীণ কোনো পুরুষ লাউয়ের মাচা বাঁধছে কেউবা ঘুমানোর পাটিটা ঠিক করছে। কোনো ধরণের  ঘোষণা ছাড়াই পুরো এলাকায় ঘেরাও দিয়ে বন্দুক নিয়ে এগিয়ে আসে একদল সশস্ত্র পুরুষ। তাদের পরনে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পোশাক ছিল। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সামনের সারিতে দেখেছে মানুষ। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকল আকন্দ বুলবুল মাইকে ঘোষণা দেন সবার আগে যাবে পুলিশ ও প্রশাসন তারপর তাদের সাথে আসা চিনিকল ও অন্যান্য ভাড়াটে বাহিনি। প্রশাসন, চিনিকল ও জনপ্রতিনিধিরা মুহুর্তেই মাদারপুর মৌজায় নয়াবসতিস্থাপনকারীদের বসতি চুরমার করে দেয়। গুলিতে এলাকা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। এলাকাবাসী না জায়গায় সাত আটজন সাঁওতাল আদিবাসীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিথর পড়ে থাকতে দেখেন। নিমিষেই পুলিশ এলাকা থেকে সকলকে উচ্ছেদ করে। পরবর্তীতে চিনিকল দিনরাত ট্রাক্টর চালিয়ে বসতভিটা গুঁড়িয়ে সমান করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। যেন বসতির কোনো চিহ্ন না থাকে। কেবলমাত্র বসতিঘর নয়, তারা জাহেরথান, পূজাস্থল, মন্দির, ধর্মস্থল, বিদ্যালয় সবই ভেঙেচুরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। অথচ পুলিশ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কেউ কিছু বলেনি। কেন বলেনি? মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বা গীর্জা ভাঙলে যেমন কারো কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, এমনি আঘাত কারো কারো জাহেরথান কী ধর্মস্থল চুরমার করলেও লাগে। পুলিশ, প্রশাসন, চিনিকল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কী তাহলে একটা বড়রকমের সংঘাত আর সহিংসতা তৈরি করতে চেয়েছিল? সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়ে চেয়েছিল? সরকারের উন্নয়নযাত্রা কী তাদের সহ্য হচ্ছে না? বিস্ময়করভাবে রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী যে অন্যায় প্রশাসন ও চিনিকল সেদিন করলো তাতে কোনো বিচারবিভাগীয় তদন্ত বা দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার হলো না। কেন হয়নি? ঘটনার পর একমাস চলে গেছে। নির্দয় রাষ্ট্র আরো বেশি লজ্জাহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। রাষ্ট্র রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। যে চিনিকলে চিনি হয় না, আখের জমি গুলো জবরদখল করে লুটে খাওয়ার সংস্থান করে দিয়েছে প্রভাবশালীদের সেই চিনিকল কর্তৃপক্ষের পক্ষেই নিলর্জ্জ সাফাই গেয়েছে রাষ্ট্র। ঘটনার দিন চিনিকল কর্তৃপক্ষ কাটাবাড়ি মোড়ে বলেছিল তারা ‘আখ’ কাটতে চান, পরে গণমাধ্যমকে বলেছেন তারা ‘বীজ-আখ’ কাটতে চেয়েছিলেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলেছেন তারা সব জমিনে আখচাষ করবেন, আবার বলেছেন প্রতি কেজি চিনিতে সরকার ১০০ টাকা ভর্তুকি দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত চিনিকলের বক্তব্য দেখে স্পষ্টত বোঝা যায় চিনি উৎপাদন বা আখ চাষের জন্য চিনিকল কর্তৃপক্ষ কী শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যূণতম ‘আগ্রহ’ কী ‘দায়িত্ববোধ’ নেই। তারা এক এক কর্তৃপক্ষ এক একজনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন, গণমাধ্যম প্রমাণ করবার চেষ্টা করছেন আখ চাষ করে চিনি উৎপাদন একটি লোকসানি প্রকল্প। নির্যাতিত মানুষেরা না খেয়ে না নেয়ে ঘুমহীন কাটিয়েছেন শীতের দিন আর রাত। কিন্তু তারা গাইবান্ধা-৪ আসনের সাংসদের পাঠানো ত্রাণ কী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ে আসা খাদ্য সাহায্য বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণ গস্খামবাসীদের চোখের সামনে এই জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনই বারবার হামলা করেছেন। খুনী-হামলাকারীর হাত থেকে তারা খাবার সাহায্য নেয়া বর্জন করেছিলেন। সরকার এটি বুঝতে পেরেছে। সরকারের আহবানে পরবর্তীতে কিছু সহযোগিতা পরবর্তীতে তারা গ্রহণ করেন।

    সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পর বিচারহীন এক মাস পাড়ি দিয়েছি আমরা। আবারো সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে সংগঠিত সকল মানাবধিকার লংঘনের ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ঘটনার সাথে জড়িত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সাংসদ, প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সকল পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিশ্চয়তাসহ আবারো তাদের নিজ বাসভূমে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা এবং  সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আহত ও ক্ষতগ্রিস্থদের চিকিৎসার সার্বিক দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সকল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা বাতিল করতে হবে। আদিবাসীদের লাগানো ধান ও শস্য ফসল কাটা, পবাদি পশু চরানো এবং যাতায়াত কোনো ভাবেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বিঘœ তৈরি করা যাবে না। এলাকায় আদিবাসীদের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ফুলমনি মুরমু শিশু শিক্ষা ও সংস্কৃতিকেন্দ্র সরকারি খরচে নির্মাণ করতে হবে। আদিবাসী শিশুদের পুড়ে যাওয়া বই ও শিক্সা উপকরণ সরকারি খরচে বরাদ্দ করতে হবে। আদিবাসী শিশুদের নির্বিঘেœ স্কুলে আসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এলাকায় আদিবাসী-বাঙালি সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার চক্রান্ত রুখতে হবে। যাতে কেউ এলাকায় কোনো ধরণের হামলা বা জবরদখলের ঘটনা না ঘটাতে পারে এজন্য প্রশাসনকে যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫৪ বছরের বর্ণবাদী আচরণ চুরমার করে রাষ্ট্র এবার বাগদাফার্ম-সাহেবগঞ্জের ভূমিউদ্বাস্তু মানুষের পাশে দাঁড়াবে এই এই আশা করি আবারো, বারবার।আপডেট