আমারসিলেট24ডটকম,১২জুনঃ গোটা বিশ্ব এখন ফুটবল জোয়ারে ভাসছে।আর মাত্র একদিন পরই ব্রাজিলেপর্দা উঠছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর ২০তমফুটবল বিশ্বকাপ।এক মাস চলবে এ টুর্ণামেন্ট। আর এই এক মাসই গোটা দুনিয়াডুবে থাকবে ফুটবলে ম্যানিয়ায়। বিশেষ করে ফুটবল দৈত্য ব্রাজিল ওআর্জেন্টিনায় ভাগ হয়ে যাবে গোটা বিশ্ব। বিশ্বকাপ উন্মাদনার উত্তাপ শুধুবাইরের দেশ গুলোতেই ছড়াচ্ছে তা নয় বাংলাদেশেও এর উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। অলিগোলি, রাস্তাঘাট, দোকানপাটসব আড্ডাতেই এখন একমাত্র বিষয় হচ্ছে এ বিশ্বকাপ ফুটবল। কখনো বাব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, কখনো বা স্পেন-জার্মানি, আবার কখনোবা ইতালী-পর্তূগাল, ক্রোয়েশিয়া।বিশ্বকাপ শুরুর আগেই লাখ লাখ পতাকায় ছেয়ে গেছে রাজধানী সহ সারাদেশ।
কিন্তুএমন ফুটবল প্রেমেও যে হতে পারে জেল-জরিমানার কারন তা হয়তো জানেনা এ ফুটবলপ্রেমিকরা। কেননা সংবিধান অনুসারে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্য কোনো দেশেরপতাকা খুবই সীমিত পরিসরে উড়ানোর বিধান রয়েছে। এ বিধান লঙ্ঘন করলেজেল-জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে ফুটবল প্রেমীকরা। বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা১৯৭২ অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনসুলেটঅফিসে সে দেশের পতাকা উড়ানো যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এরবিধি ৯(৪) অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরে কোনো ভবনে বা যানবাহনে কোনো বিদেশিপতাকা উত্তোলন করা যাবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বামিশনের প্রধান তার অফিশিয়াল বাসভবন ও গাড়িতে নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন।বিধিমালায় আরো বলা আছে, বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরাবাংলাদেশ সফর করলে তাদের গাড়িতে নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন। সংশ্লিষ্টদেশগুলোর জাতীয় দিবসের মতো দিনে কূটনৈতিক মিশন, মিশন প্রধানের বাসভবন ওকনসুলেট অফিসের বাইরে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে সেখানে বিদেশী পতাকা ওড়ানোযাবে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা যথাযথসম্মানের সঙ্গে ওড়াতে হবে।
বাংলাদেশের বেলায় যারা এমন সুবিধা দেয়, সেইদেশগুলো এসব নির্দিষ্ট স্থানে তাদের নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবে। এর বাইরেঅন্য কোথাও বিদেশী পতাকা ওড়াতে চাইলে সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।বাংলাদেশে এমনিতেও সারা বছর বিদেশী পতাকা তেমনটি না দেখা গেলেও ফুটবলবিশ্বকাপ এলেই এ বিধান লঙ্ঘিত হয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রায় প্রতিটি ভবনেইবিভিন্ন দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। কে কত বড় পতাকা টাঙাবেন তা নিয়েরীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে এ-সম্পর্কিত বিধান অনেকেরই জানা নেই।
বিধিমালাঅনুযায়ী বাংলাদেশের পতাকার চেয়ে উঁচুতে অন্য কোনো পতাকা উড়ানো যাবে না। আরদুই বা ততোধিক পতাকা টাঙাতে হলে আলাদা দণ্ডে পাশাপাশি বসাতে হবে। আরপতাকার আকার হতে হবে প্রায় সমান। তিনটি পতাকা উড়ানোর প্রয়োজন হলেবাংলাদেশের জাতীয় পতাকা থাকবে মাঝখানে।
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ জাতীয়সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক অধ্যাদেশ অনুযায়ী কেউ এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করলেশাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২০১০ সালে আইনটির সংশোধনীতে এ বিধান যুক্ত করাহয়। এ অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার গেজেটের মাধ্যমে বিধি প্রণয়নকরতে পারবে। বিশ্বকাপের আনন্দে নিজ বাসার ছাদে, বারান্দায়, অনেকে ব্রাজিল ওআর্জেন্টিনার পতাকা টাঙিয়েছেন। তাদের কাছে এই আইন সম্পর্কে জানতে চাইলেতারা বলেন, খেলা ভালো লাগে, তাই পতাকা টাঙিয়েছি। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো আইনআছে কিনা তা জানা নেই।
এক আইনজীবী বলেন, আইনটিতেবিদেশী পতাকার ব্যবহারবিধি ও তা লঙ্ঘনের শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে।এর বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে আইন অনুযায়ীই বিচার করবেন আদালত, সেক্ষেত্রেশাস্তি হবে যদি না আইনটি পরিবর্তন করা হয়। অথবা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেনির্দিষ্ট সময়ে (যেমন বিশ্বকাপ চলাকালে) পতাকা ওড়ানোর অনুমতি দিলে আইনঅনুযায়ী তা বৈধতা পাবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে একদেশের নাগরিকদের জন্য অন্য দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে ফুটবল বিশ্বকাপে আরো বেশি পরিমাণে পতাকা ওড়ানোহলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বিদেশী পতাকায় ছেয়েগেছে গোটা দেশ।অথচ অনেক ক্ষেত্রেই পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা নেই।