আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০মার্চঃ অগি্নঝরা ১০ মার্চ আজ। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক ফরমান জারি করে বলেন, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি কাজে বাধা দিলে বা সামরিক বাহিনীর চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সামরিক বিধিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যদি কেউ সরকারি সম্পত্তির বিনাশ করেন, তবে তা সামরিক বিধিতে দ-নীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রেসিডেন্টের এ ফরমান জারির সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশেই তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। প্রতিবাদে লাখো মানুষ বেরিয়ে আসে রাজপথে।
এদিকে, এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। সচিবালয়, সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরসহ সবই আমাদের নির্দেশ মেনে চলছে। বিশ্ববাসী ও পশ্চিম পাকিস্তানের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মানুষই পাকিস্তান সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেনি। তবু তারা হঠকারী চক্রান্তে উন্মত্ত হয়ে সমরসজ্জা অব্যাহত রেখেছে। রংপুর ও রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন চলছে।
১০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ৪০ কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে ১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। প্রাদেশিক সরকারের রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা ও গেরিলা যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের আপামর জনতা যেখানে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, সেখানে জেনারেল ইয়াহিয়ার এ হুশিয়ারিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের গ-ি বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ দিন জাতীয় লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় দেশের পরিস্থিতির এতটাই দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে যে, ঘটতে থাকে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা।
আন্দোলন-সংগ্রামরত জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে গঠিত হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি, চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং সংগৃহীত হতে থাকে অস্ত্র। বিস্ফোরণোন্মুখ জাতি দ্রুতই লিপ্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে। দিশেহারা হতে থাকে পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সর্বত্র শুধু একই আওয়াজ_ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর ।