আজ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব “শুভ বড়দিন”

    0
    219

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৫ডিসেম্বরঃ  আজ রোববার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট (হজরত ঈসা আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম  যাকে মুসলিমরাও নবী বলে দাবী করেন )এ দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধারনা।

    খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল।

    অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মানুসারীরা রোববার যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন।

    তবে ধর্মীয় এ উৎসবটি এবার বাংলাদেশে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভিন্নমাত্রায় এবং আরো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। কারণ, এই প্রথম কোন বাঙালী কার্ডিনাল নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ব খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশী নাগরিক আর্চ বিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসিকে সম্প্রতি কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেছেন।

    এ পদে এই প্রথম একজন বাঙালি নির্বাচিত হওয়ায় খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উৎসবটি এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করবে বলে জানান। বাঙালী হিসেবে আগে এমন গৌরব আর কখনো আসেনি বলেও গির্জা সূত্রে জানা গেছে।

    সারাবিশ্বে মাত্র ১২১ জন কার্ডিনাল রয়েছেন। যারা পোপ হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন, আবার পোপ নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন। সেই ভোটদানের অধিকারটা আজকে একজন বাঙালি অর্জন করেছেন। কাজেই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায় নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি আজকে খুবই আনন্দিত এ অর্জনে। তাই অন্যান্যবারের মতো এবার এ উৎসব হবে আরো সার্বজনীন।

    ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আলহাজ্জ মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

    বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কাল ধরে। এখানে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।

    বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস¦ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা।

    বড়দিন উপলক্ষে বাঙলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের শুভেচ্ছা জানান।

    রাজধানীর গির্জা ও হোটেলেগুলো বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জায় সাজানো হয়েছে।এর মধ্যে-  গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে। গির্জা ও অভিজাত হোটেলগুলোতে টুকটুকে লাল পোশাক পরা সফেদ দাঁড়ি-গোঁফের বুড়ো সান্তা ক্লজ উপহারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোট্ট সোনামণিদের হাতে তুলে দেবেন মজার মজার উপহার।

    রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর রঙিন করা হয়েছে। ভেতরে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি।
    বড়দিন উপলক্ষে গির্জার মূল ফটকের বাইরে কাল থেকে বসবে মেলা। ওই মেলার স্টলগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা যাবে।

    রাজধানীর গির্জাগুলোর পাশাপাশি ৫ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, রেডিসন ও ওয়েস্টিন,সিলেটের শ্রীমঙ্গলের গ্রান্ট সুলতান টি  রিসোর্ট  এন্ড গলফ নামের একটি আন্তর্জাতিক মানের অভিজাত হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেল ও বাসাবাড়িতে সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি ও বড়দিনের কেক স্থাপন করা হয়েছে আরো কয়েকদিন আগে থেকেই।হোটেলগুলোতে বড়দিনের আয়োজন উপলক্ষে সকাল ও বিকালে শিশুদের জন্য রয়েছে শান্তাক্লজের উপহার অনুষ্ঠান এবং সবার জন্য বুফে ডিনারের ব্যবস্থা ও রাখা হয়েছে।

    দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেবেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেককে গ্রামের বাড়ির দিকেও ছুটতে দেখা গেছে।

    রাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে গির্জাসূত্রে জানা গেছে।

    উৎসব উদযাপন উপলক্ষে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রীতি পরিষদ সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি জোরদার করার লক্ষ্যে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছ বলে বাসস সুত্রে জানা গেছে।