আজ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস

    0
    229

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪ডিসেম্বর,মুহাম্মদ ফয়সাল শরীফঃ
    আজ শোকার্ত ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি আজ স্মরণ করছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের হারিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। একই সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি; যাঁরা দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে নির্মমভাবে হারানোর বেদনা ও কষ্ট। আজ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান
    মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। ওরা আরো মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের এসব বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বর্বর পাক বাহিনী ও রাজাকাররা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। ছিলেন ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১
    হাজার ৭০ জন। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা চেয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে এ দেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষদিকে এসে পরাজয়ের আগ মুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে। হানাদাররা তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের। পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এদেশের কিছু কুলাঙ্গারই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে তুলে দিয়েছে পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনীর হাতে; কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেরাই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, সেসব বিশ্বাসঘাতক নরাধমের অনেকেই পঁচাত্তরপরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে; কেউ কেউ মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে। পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক। পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির সংগ্রামে তারা
    সর্বদা রাজনীতিকদের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণা দিয়েছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচারের দাবিটি স্বাধীনতার পর পরই ওঠে। বিচার কাজও চলছিল। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী শাসকরা বিচার দূরে থাক, খুনীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সর্বত্র। শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই বিচার কাজ শুরু করেন নির্বাচনী ওয়াদাকে সামনে রেখে। একাত্তরে যারা হত্যাযজ্ঞে ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল, তাদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলছে। ইতোমধ্যে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মতো ঘাতকদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। নিজামী, মীর কাশেম আলীসহ আরও অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রায় ঘোষণা করলেও আপীলের অপেক্ষায় আছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম। সবাই মনে করে এসব হত্যাযজ্ঞে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্যেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব। এসব ঘাতকের চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে। ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:-[২][১৮][১৯] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকঃ ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)। ডঃ মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)। ডঃ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)। ডঃ আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)। ডঃ আবুল খায়ের (ইতিহাস)। ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)। ডঃ সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)। ডঃ এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা)। হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)। রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)। সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)। ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)। এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)। এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা)। শরাফত আলী (গণিত)। এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)। এম এ সাদেক (শিক্ষা)। এম সাদত আলী (শিক্ষা)। সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)। গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস)। রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)। এম মর্তুজা (চিকিৎসক)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকঃ ডঃ হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)। ডঃ শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)। মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)। চিকিৎসকঃ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)। অধ্যাপক ডাঃ আলিম চৌধুরী
    (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)। অধ্যাপক ডাঃ শামসুদ্দীন আহমেদ। অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আলিম চৌধুরী ডাঃ হুমায়ুন কবীর। ডাঃ আজহারুল হক। ডাঃ সোলায়মান খান। ডাঃ আয়েশা বদেরা চৌধুরী। ডাঃ কসির উদ্দিন তালুকদার। ডাঃ মনসুর আলী। ডাঃ মোহাম্মদ মোর্তজা। ডাঃ মফিজউদ্দীন খান। ডাঃ জাহাঙ্গীর। ডাঃ নুরুল ইমাম। ডাঃ এস কে লালা। ডাঃ হেমচন্দ্র বসাক। ডাঃ ওবায়দুল হক। ডাঃ আসাদুল হক। ডাঃ মোসাব্বের আহমেদ। ডাঃ আজহারুল হক (সহকারী সার্জন) ডাঃ মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক) অন্যান্যঃ শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক)। নিজামুদ্দীন আহমেদ (সাংবাদিক)। সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক) সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)। আ ন ম গোলাম মুস্তফা (সাংবাদিক)। আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার
    ও সুরকার)। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)। রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর)। যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক)। জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার)। মেহেরুন্নেসা (কবি)। ডঃ আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ)। নজমুল হক সরকার (আইনজীবী)। নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক। বুদ্ধিজীবীদের তালিকাটি বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহীত।