আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসঃরাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

    0
    247

    আমারসিলেট24ডটকম,১৪ডিসেম্বরঃ আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
    স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় তাদের অনিবার্য। পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।এ হত্যাকাণ্ডের ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

    ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়।

    ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষত বিক্ষত লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের লাশে ছিল আঘাতের চিহ্ন। চোখ, হাত-পা ছিল বাঁধা। কারো কারো শরীরে ছিল একাধিক গুলি। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।

    ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’ এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।

    স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর গঠিত বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব হয়নি। কারণ ফরমান আলীর টার্গেট ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে মেরে ফেলা।

    দিনটিতে গোটা জাতি বিনয় এবং শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের পেক্ষাপট অন্যান্য বছরের তুলনায় আদালা। মাত্র এক দিন আগেই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের এক জনের ফাঁসি কার্যযকর হয়েছে। এবার জাতির প্রত্যাশা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের সকলের বিচারের রায কার্যকর করে দেশকে কলংক মুক্ত করা।

    বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতিবছরের মতো দিবসটি পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিয়েছে পৃথক পৃথক কর্মসূচি।

    শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন

    রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    আজ সকাল ৮টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দলীয় প্রধান হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরপরই শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয় ফুলেল শ্রদ্ধা।
    পরবর্তীতে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই জনতার ঢল নামে মীরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ এই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
    উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাত্র দুইদিন আগে হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা বাংলাদেশকে মেধা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি শূন্য করতে শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তাদের অনেকের লাশ মিরপুর ও রায়ের বাজারে পাওয়া গিয়েছিল। বাকিরা আজও নিখোঁজ রয়ে গেছেন। সেই সব বুদ্ধিজীবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়