আজ সূর্যগ্রহণ,ক্ষমা প্রার্থনার সময়

    0
    222

    আজ বৃহস্পতিবার দেশে সূর্যগ্রহণটি শুরু হবে ঢাকা এলাকায় সকাল ৯টা ১মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। ১০টা ২৮মিনিট ৯ সেকেন্ডের সময়ে সর্বোচ্চ সূর্যগ্রহণ হবে; ওই সময়েই সূর্য সবচেয়ে বেশি ঢাকা পড়বে চাঁদের আড়ালে এবং সূর্যকে একটি অগ্নিবলয়ের মতো দেখাবে ।সর্বোচ্চ দুপুর ১২টা ৮মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলবে। তাই এ সময় সালাতে দাড়িয়ে যান।অন্যদেরও বলুন প্রার্থনায় নিমগ্ন হতে যাতে এর ফলে মানুষের কোন ক্ষতি না হয়,আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

    আজ ২৬ ডিসেম্বর সারাবিশ্ব এমন এক সূর্যগ্রহণ দেখবে যা শেষবার পৃথিবীর মানুষ দেখেছিল ১৭২ বছর আগে।এ সূর্য গ্রহণের সময় সূর্যের চারপাশে থাকবে এক আগুনের বলয়। বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন ‘রিং অব ফায়ার’।তাই এ সূর্য গ্রহণ দেখার জন্য অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ বিশেষ গ্লাস কিনে রাখছে।মনে হচ্ছে যেন ঈদের সূর্য উঠবে।অধিকাংশ সময়েই আমাদের দেশের মানুষেরা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতুহল নিয়ে সূর্যগ্রহন এবং চন্দ্রগ্রহন প্রত্যক্ষ করে থাকে।

    সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহনের সময় হয় তখন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো।তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন।কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।আরবীতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসূফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘নামাজে কুসূফ’ বলা হয়। দশম হিজরীতে যখন পবিত্র মদীনায় সূর্যগ্রহণ হয়, ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সম্ভবত তার জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিলো।

    অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথমে যখন মহানবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালাম এর এ আমল সম্পর্কে জানতে পারলো, তখন তারা এটা নিয়ে বিদ্রুপ করলো (নাউযুবিল্লাহ)। তারা বললো, এ সময় এটা করার কি যৌক্তিকতা আছে? সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। ব্যাস এতটুকুই ! এখানে কান্না কাটি করার কি আছে ? মজার বিষয় হলো,বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হলো, তখন মহানবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামার এই আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে আসলো।

    আধুনিক সৌর বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু’টি কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়ে(Asteroid), মিটিওরিট (Meteorite) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট, এগুলোকে এক কথায় গ্রহানুপুঞ্জ বলা হয়। গ্রহানুপুঞ্জের এইবেল্ট (Belt) আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে।এক একটা ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল।বিজ্ঞানীরা আজ পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত।কখন জানি এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কিনা? গ্রহানুপুঞ্জের পাথর খন্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখন্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়।

    কিন্তু বৃহদাকার পাথর খন্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কি হবে ? প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এমনই একটি পাথর আঘাত হেনেছিলো। এতে ডাইনোসরসহ পৃথিবীর তাবৎ উদ্ভিদ লতা গুল্ম সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। আপনজনের (Arizon) এ যে উল্কাপিন্ড এসে পড়েছিলো তার কারণে পৃথিবীতে যে গর্ত হয়েছিলো তার গভীরতা ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮০০ ফুট। বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশী থাকে। কারণ হচ্ছে,এসময় সূর্য,চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে,একই অক্ষ বরাবর থাকে ।ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রুপান্তরিত হয়। এমনি মুহূর্তে যদি কোন পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচন্ড শক্তিতে, প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে আসবে,এ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি হবে ধ্বংস।একজন বিবেকবান মানুষ যদি মহাশূন্যের এ তত্ব জানে, তাহলে কেবল তারই শঙ্কিত হবার কথা।

    এই দৃষ্টিকোন থেকে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালাম সেজদারত থেকে এবং সৃষ্টিকূলের জন্য পানাহ চাওয়ার মধ্যে আমরা একটি নিখুঁত বাস্তবতার সম্পর্ক খুঁজে পাই।  প্রিয় নবীর এ আমলটি ছিলো যুক্তিসঙ্গত যা বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মত। তাই এটিকে উৎসব না বানিয়ে আল্লাহকে ভয় করুন।সালাত আদায় করুন। আসুন আমরা মহান রবের নিকট এর কুফল থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনা করি।
    পরিশেষে আবারো বলতে চাই, প্রত্যেক এলাকার ইমামগনের উচিত এই বিষয়ে নিজ নিজ এলাকার লোকদের সচেতন করা আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন-বে হুরমাতে সায়্যিদুল মুরসালিন।