আবার হত্যার পরিকল্পনা করছে কি না প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

    0
    200

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১মার্চঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘হাসিনাবিহীন নির্বাচন’ করার ঘোষণা দেয়ায় নিজের প্রাণনাশের শংকা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “বিএনপির কাউন্সিলে খালেদা জিয়া হাসিনাবিহীন নির্বাচনের কথা বলেছেন। হাসিনাবিহীন নির্বাচন বলতে খালেদা জিয়া কী বোঝাতে চাচ্ছেন? ২১ আগস্টের মতো আবার গ্রেনেড হামলা বা আবার হত্যার পরিকল্পনা করছে কি না- সেটাই হচ্ছে আমার প্রশ্ন।”

    রোববার  রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।

    এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হবে, আর সেটি হবে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে।

    খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, “উনি (খালেদা) তো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। দলটির জন্মই হত্যা-ক্যু’র মাধ্যমে, অগণতান্ত্রিক পন্থায়।”

    “শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো নয়ই বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না”- প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যও মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আর রাজনীতি করতে পারব না। মানে, আমার অস্তিত্বই থাকবে না। এবং তারপরই হলো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা।”

    ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থল থেকে বোমা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সে সময় একটা ৭৪ কেজি বোমা আরেকটা ৭৬ কেজি বোমা, দুটো বোমা পাওয়া গিয়েছিল। সেই সমাবেশে বোমা হামলার চক্রান্ত করা হয়েছিল। বিএনপি নেত্রী ও তার নেতারা একই বক্তৃতা দিয়েছেন। ২০০০ সালে আমাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় দিয়ে সরকার পতন করবে।”

    ভয়াবহ ওই ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, “রাখে আল্লাহ মারে কে। আল্লাহ জীবন দিয়েছে, আল্লাহ কাজ দিয়েছে, যতক্ষণ কাজ শেষ না হবে, ততক্ষণ আল্লাহ হেফাজত করবে।”

    বিএনপি’র সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণা এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গিকারের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন অনেকেই আমাদের নীতি ও ভিশন অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বিএনপি নেত্রী তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু এটা যে আওয়ামী লীগের আমলেই সম্ভব হচ্ছে এটা স্বীকার করলে ভালো হতো।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন অনেক কথা বলে। কিন্তু তাদের আমলে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে গেছে, দেশের জনগণের জন্য কিছু করে নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষকে দেয়ার জন্য, আর বিএনপিসহ অন্যরা আসে নিজেরা নেয়ার জন্য- দেশবাসীকে এই তফাৎটা লক্ষ্য রাখতে হবে।”

    দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করতেই বিএনপি নির্বাচনে আসে নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষায় বলেন, “নির্বিচারে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পরও শুধুমাত্র দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসার জন্য নিজে টেলিফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোনে বিএনপি নেত্রীর হুমকি-ধমকির কথা তো দেশবাসী নিজেই শুনেছে।”

    তিনি বলেন, “নির্বাচনে আসার জন্য আমি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেই এবং সাফ বলে দেই যতগুলো মন্ত্রণালয় বিএনপি চায় আমরা দিয়ে দেব। কিন্তু বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে না আসার কারণ জাতির সামনে পরিষ্কার। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিশ্বাস থেকেই উনি নির্বাচনে আসেন নি। অবৈধ দখলকারীর হাতে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দল কখনই যে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হতে পারে না, তা বিএনপি প্রমাণ করেছে।”

    তিনি বলেন, নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বিচারে দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে। পরে আন্দোলনের নামে আবারও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ওই সময়ের বীভৎস্য দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। একজন জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা অতীতে কখনো দেশের মানুষ দেখেনি। এরা হত্যা, খুন, জঙ্গীবাদ ছাড়া আর কিছু বোঝে না।

    ‘ঢাকার বাইরে আন্দোলন সফল হয়েছে’- খালেদা জিয়ার এমন দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঢাকার বাইরে আন্দোলনের নামে অনেক মানুষকে হত্যা করতে পেরেছেন, এটাই কি তাঁর বড় তৃপ্তি? ওই সময় ১৫-১৬টি জেলায় বিএনপি-জামায়াত জোট তাণ্ডব চালিয়েছে। শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরে এখন উনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন! আসলে এরা মানুষ নয়, মানুষ নামের অমানুষ।”

    দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন করতে পারে না কেন? আমরা গত ৭ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি, গত ২১ বছরেও তারা পারে নি কেন? এসব বিষয় একটু বিচার করুন। আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করতে পারে, কারণ আমাদের একটি ভিশন, স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে যা অন্যদের নেই।

    তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। গত দুই টার্ম পরপর আমরা ক্ষমতায় রয়েছি বলেই দেশকে আমরা সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। সারাবিশ্বেই এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল।

    আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল পেছানোর ইঙ্গিত দিয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ আগামী ২৮ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের সময় কাউন্সিল হলে তৃণমূল থেকে আমাদের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের আসতে অসুবিধা হবে। এজন্য সম্মেলনের সময় কিছুটা পিছিয়ে দিয়ে সুবিধাজনক একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আর সম্মেলনের আগে জাতীয় কমিটির একটি মিটিং ডাকা হবে। জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করব। তারপর যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভূক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।

    সভার শুরুতে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।