কমলগঞ্জে মাগুরছড়া বিষ্ফোরণের ১৭ বছর পালনঃমানববন্ধন

    0
    229

    “কমলগঞ্জে মাগুরছড়া বিষ্ফোরণের ১৭ বছর পূর্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের জন্য কমলগঞ্জে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ”

    আমারসিলেট24ডটকম, ১৪জুন,শাব্বির এলাহীঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রে বিষ্ফোরণের ১৭ বছর পূর্তিতে বন ও পরিবেশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবীতে মাগুরছড়া গ্যাসকুপের সামনে মানবন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন পালিত হয়। কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে ও বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ১৪ জুন শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রে অক্সিডেন্টাল কোম্পানী গ্যাস উত্তোলনের খননকালে ১৯৯৭ সনের ১৪ জুন মধ্যরাতে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ঘটেছিল।

    মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রের সামনের কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল প্রধান সড়কধারে মানববন্ধন কর্মসূচীতে কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক এম, এ, ওয়াহিদ রুলুর সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মি. জিডিশন প্রধান সুচিয়াং, বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভানেত্রী হাবিবা সুলতানা বিলকিছ, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, মো, আসহাবুর ইসলাম শাওন, শীলা বেগম, মো. সুমন আহমদ, সংস্কৃতিকর্মী শিক্ষক আলমগীর হোসেন, জালাল আহমদ, ফারহান ইসলাম, আব্দুস সালাম প্রমুখ।

    মানববন্ধনে বক্তারা সরকারের কাছে জোর দাবী করে বলেন, ১৯৯৭ সনের বিষ্ফোরনের পর তদন্ত করেও দীর্ঘ ১৭ বছরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। সরকারের উচিত মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে বিষ্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্যসহ প্রতিবেদনটি দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা। সাথে সাথে দায়িত্বে অবহেলায় ঘটা বিষ্ফোরণে মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে সে ক্ষতিপূরণ আদায় করা। বক্তারা আরও বলেন, কমলগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে ঘরে ঘরে গ্রাস সুবিধা দিতে হবে। আগামীতে এসব দাবী আদায়ে সবগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করা হবে। দীর্ঘ ১৭ বছরে মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্র হাত বদল হয়ে ইউনোকল ও বর্তমানে শেভরনের হাতে গেছে।

    এদিকে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে বিক্ষোদ্ধ লোকজন আঘাঘন্টা কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় রাস্তার দু’দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায়, জনসম্মুখে তালিকা প্রকাশ ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবীতে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে কমলগঞ্জ থানার এসআই গৌরাঙ্গ কুমার বসুর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দুপুর পৌনে ১২টায় যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়।

    উল্লেখ্য, মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিষ্ফোরণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনের রেল পথ, ফুলবাড়ি চা বাগান,কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক জনপথের প্রধান সড়ক. মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি ঘর, পান জুম এলাকা ও পিডিবির ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যূৎ লাইনের। বিষ্ফোরণের পর পরই দুর্ঘটনার কারন অনুসন্ধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সচিব ড. তৌফিক-ই এলাহির কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষ্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির ৩ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করেছিল। দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন অভিমত প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ। তাদের কাছে অক্সিডেন্টালের ১৫/১৬ টি ত্রুটি ধরা পড়েছিল। তৎকালীন তদন্তকারী কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বন পরিবেশ, বিদ্যূৎ, সড়ক, রেলপথ ও গ্যাসের মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বলে সংশিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।