কমলা বদলে দিয়েছে জুড়ীর চাষিদের জীবন

    0
    316

    এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী,মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাগানগুলোতে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু কমলা। পাহাড়ি জনপদের কমলা চাষিদের মুখে বইছে আনন্দের হাসি। আর এ কমলা বদলে দিয়েছে অত্রা লের চাষিদের জীবন। কমলা পাকতে শুরু করায় ইতোমধ্যে বেচা-কেনা শুরু হয়ে গেছে। কমলা ফলনের পাশাপাশি বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে পাকা, আধা পাকা কমলা সংগ্রহ ও খাঁচাবন্দি করে পাইকারদের হাতে তুলে দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে প্রশান্তির হাসি মুখে ঘরে ফিরছেন চাষিরা। এ অ ল থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার বেশী কমলা বিক্রি হবে হলে আশা করছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় দ্বিগুন বেশী কমলার ফলন ও বিক্রি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষি ও সংশ্লিষ্টরা। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ক্রেতা ও চাষিরা পাকা ও আধাপাকা কমলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ভৈরব ও সিলেটে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকযোগে নিয়ে বিক্রি করছেন।

    উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া ও টালিয়াউড়া এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলা বাড়িগুলোতে কমলার পাশাপাশি বাতাবি লেবু, আদা লেবু, শাসনি ও জাড়ালেবুর বাগান রয়েছে। আর এ বাগানগুলোতে পেশা হিসেবে সর্বদা পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এক একটি বাগান থেকে প্রায় ২/৩ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমন শ্রমও দিতে হয়না এমনটাই জানিয়েছেন অত্র বাগানগুলোর কৃষকরা। ফলে, কমলা চাষে অত্রা লের কৃষকরা আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।

    জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯২ হেক্টর জমিতে ৮৫ টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে ২ জাতের কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। এক জাতের নাম খাসি ও অপর জাতের নাম নাগপুড়ি। অত্রা লের অধিকাংশ কমলা খাসি জাতের চাষাবাদ হচ্ছে। এ বাগানগুলো থেকে চলতি মৌসুমে ৫০০ মেট্রিকটন কমলা লেবুর ফলন প্রাপ্তির আশা রয়েছে। সরেজমিনে আলাপ হয়, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া গ্রামের কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া (৪৯) এর সাথে। আলাপকালে তিনি বলেন, কমলা এক বছর বেশি হলে অন্য বছর কম হয়। প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী এবারের ফলন ভালো হয়েছে।

    তিনি বলেন, এবারে কমলার বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি, আকারেও বড়। তিনি ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। আরো ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন। এছাড়াও লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি শামীম আহমদ (৩০), হায়াছড়া গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৪), কচুরগুল গ্রামের হাজী নজির আহমদ (৬০) ও শুকনাছড়া গ্রামের ইব্রাহিম আলী (৫৫) সহ অনেকে জানান, প্রতি বছর ভারতীয় কমলা বাংলাদেশে আসায় আমাদের কমলা বিক্রি করতে সমস্যা হয়। তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করেন।

    জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভার প্রাপ্ত) জসিম উদ্দিন জানান, অত্রা লের কমলা চাষিরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন। পোকা মাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করায় এবং কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করায় এ বছর জুড়ী উপজেলায় কমলার ফলন ভালো হয়েছে। ভারতীয় কমলা যাতে আমাদের বাজারে আসতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।