কার্ডিফে কনসূলার সার্ভিস কি আলোর মূখ দেখবে ?

    0
    197

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৯মে,নাজমুল সুমন: বাংলাদেশ পাসপোর্ট নবায়ন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), নো ভিসা রিকোয়ার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, দ্বৈত নাগরিকত্ব আবেদন গ্রহণ, ডকুমেন্ট সত্যায়ন ও সংশোধন ইত্যাদি সেবা প্রদানের জন্য বৃটেনের বাংলাদেশ হাইকমিশন বিভিন্ন শহরে এখনো ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সার্ভিস প্রদান করে আসছে।

    প্রায় ৩১বছর আগে বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরে  কমিউনিটি লিডার মরহুম মোহাম্মদ সুরুক  মিয়া সাহেব  কার্ডিফের শাহ্‌জালাল বাংলা স্কুলের তৎকালীন  সেক্রেটারি হিসাবে  কমিউনিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় প্রথম এই কনসূলার সার্ভিস চালু করেন বলে জানা গেছে। এর পর থেকে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে পালাবদলের পরিক্রমায় এই কনসূলার সার্ভিস প্রদানের বিভিন্ন সময়ে  আয়োজকের ভৃমিকা পালন করেছেন যাহা কমিউনিটি অবহিত রয়েছেন।

    শুরু থেকেই কার্ডিফের শাহ্‌ জালাল  মসজিদ এন্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে এই  কনসূলার সার্ভিস চালু ছিলো। অনেক বছর চালুর পর মসজিদ কমিটি বা  সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিকে  না জানিয়ে শাহ্‌জালাল মসজিদ এন্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে রিভার সাইড বাংলাদেশ সেন্টারে এই সার্ভিস নিয়ে যাওয়া হয়। এই নিয়ে কমিউনিটিতে দেখা দেয়েছিলো অনেক প্রশ্ন ও  হতাশা। সেই  সময়  হাইকমিশনে এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগও করা হয়েছিলো।

    উল্লেখ্য যে এক পক্ষ চেয়েছিলেন আবার কার্ডিফের শাহ্‌জালাল মসজিদ সেন্টারে  চলে আসুক। আর অপর পক্ষ যেহেতু এখানে চলে এসেছে  বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ  বাংলাদেশ সেন্টারেই থাকার পক্ষে মতামত দেন। কমিউনিটির এই দ্বন্দের কারনে আরও কয়েকবার কনসূলার সাভিস বন্ধ  ছিলো। কনসূলার সাভিস চালুর দাবীতে ২০০১ সালে কার্ডিফ শাহ্‌ জালাল বাংলা স্কুল, শাহ্‌ জালাল মসজিদ কমিটি, গ্রেটার সিলেট ডেভোলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার  কাউন্সিল সাউথওয়েলস রিজিওন ও  বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কনসূলার সার্ভিস নিয়ে সাংবাদ সম্মেলন করা সহ লন্ডনস্থ  হাইকমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার হিজ এক্সেলেন্সীর সাথে ১২ জনের প্রতিনিধিসহ দেখা করে  সুনিদিষ্ট  প্রস্তাবলী তুলে ধরা হয়।

    যেহেতু তিনটি সেন্টার বা প্রতিষ্ঠান আমাদের কমিউনিটির তাহলে বছরে চার মাস অন্তর একেক সময় একেক সেন্টারে বাই রটেসন অনুযায়ী  তথা কার্ডিফ শাহ্‌ জালাল মসজিদ সেন্টার, বাংলাদেশ সেন্টার ও বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার সেন্টারে কনসূলার  সার্ভিস চালু করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তৎকালীন  মান্যবর হাইকমিশনার হিজএক্সেলেন্সি  গিয়াস উদ্দিন আহমদের আন্তরিক মতামত থাকা সত্তেও কার্ডিফ কমিউনিটির সবাই একমত না হওয়ায় এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে এর সাথে জড়িত অনেকই এই প্রতিবেদকের সাথে ফোনে আলাপকালে দূঃখ করে বলেন আমাদের কমিউনিটির তিনটি সেন্টার  বা প্রতিষ্ঠানে যদি বছরে তিনটি  সার্ভিসে কমিউনিটি নেতারা একমত হয়ে যেতেন তথা সেই সময় সবাই এক পথে হাটতেন তাহলে আজ কনসূলার সার্ভিস নিয়ে আমাদের কান্নার প্রয়োজন হতো না।

    এরপর ও  অনেক বছর বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের উদ্দোগে বাংলাদেশ সেন্টারে কনসূলার সার্ভিস চালু ছিলো। পালাবদলের ন্যায় আবার বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের  উদ্দোগে ওয়েলফেয়ার সেন্টারে চলে আসে। সেখানে ও কনসূলার সার্ভিস ভালোভাবেই চলছিলো। দোরগোড়ায় কনস্যুলেট সেবা পেয়ে মানুষও থাকতেন  দারুণ উৎফুল্ল। নানা কারণে আজ আবার দীঘদিন ধরে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে আছে।

    কমিউনিটির চাহিদা থাকা সত্তেও কনসূলার সার্ভিসটি আবার কেন চালু হচ্ছে না এই খবর খুজতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এসোসিয়েশনের নেতারা  চাচ্ছেন বাংলাদেশ সেন্টারে, আর  ওয়েলফেয়ারের নেতারা  চাচ্ছেন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার সেন্টারে, সার্ভিসটি প্রদান করা হোক। মূলত এই দ্বন্দের কারনেই সার্ভিসটি  আলোর মূখ দেখছে না বলে অনেকেই অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।

    শাহ্‌ জালাল মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান কুরেসী নিপু  বলেন, আমার মত সাধারন লোকেরও  প্রশ্ন এ ধরনের একটি চমৎকার প্রস্তাবে কেনো প্রতিটি সংগঠন একমত হলেন না  আমি ভেবে পাইনা। এখন ও সময় আছে সবাই বসে কমিউনিটির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রয়োজনে তিনটি সেন্টারে বছরে তিনটি সার্ভিস করার মহতি উদ্দোগ নেওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে  কিছুদিন আগে  ফেইসবুকের নিজের টাইমলাইনে রিভারসাইড জালালিয়া মসজিদের সাবেক ট্রেজারার সৈয়দ আশরাফ আলী কাডিফ বাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল না করে সবাই মিলে পূনরায়  সার্ভিস  চালুর ব্যাবস্তা নেওয়ার  ও আহবান জানান। এই দাবী এখন সমগ্র কমিউনিটির, জনগন জানতে চায় কবে ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সার্ভিসটি আবার চালু হচ্ছে।

    আনজুমানে আল ইসলাহ ওয়েলসের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ আনোয়ার  ও ওয়েলস বঙ্গবন্ধু পারিষদের সভাপতি  আলহাজ্ব ছালিক মিয়া কমিউনিটির সবাই মিলে কনসূলার সার্ভিস চালুর  জন্য  উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত তুলে ধরেন।

    আব্দুল মানিক নামের কার্ডিফের একজন শেফ দূঃখ করে বলেন, নো ভিসার জন্য গতমাসে বার্মিংহামে যাওয়া আসায় আমার অনেক টাকা ও সময় অপচয় হয়েছে সার্ভিসটি  আবার কার্ডিফে চালু হলে জনগনের খুব উপকার হবে।

    গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল  সাউথ ওয়েলসের চেয়ারপার্সন  আসকর আলী বলেন,  দীর্ঘদিন ধরে কনসূলার সার্ভিস চালুর জন্য  আমরা ওয়েলফেয়ারের পক্ষ থেকে  বাংলাদেশ  হাইকমিশনে লেখালেখি করে আসছি বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে সার্ভিস চালুর দাবী জানান।

    কার্ডিফ শাহ্‌ জালাল বাংলা স্কুলের জেনারেল সেক্রেটারি এবং ইউকে গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট সেক্রেটারি  মকিস মনসুর আহমদের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ, আমাদের এখানকার কমিউনিটির জন্য যারা কাজ করছেন সবাই চাচ্ছেন কনসূলার সার্ভিস কার্ডিফে পূণরায় চালু  করা হোক, এব্যাপারে  আমাদের অনেকেরই বৃটেনের হাইকমিশন মহোদয়ের সাথে অনেকবার আলাপ হয়েছে।

    বৃটেনের বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিজ এক্সেলেন্সি মোহাম্মদ নাজমুল কাওনাইন সাহেব ও  বার্মিংহামের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকার নায়েন সাহেবের  সাথে কিছুদিন আগে আমার সরাসরি কথা হয়েছে এবং গত সপ্তাহেও বার্মিংহামের হাইকমিশনের কনসূলার সেকশনে ফোনে আলাপ হয়েছে। হতাশ হবার কোনো কারন নেই বলে উল্লেখ করে কমিউনিটি সংগঠক  সাংবাদিক মকিস মনসুর আহমদ বলেন  কার্ডিফে হাইকমিশনের কনসূলার সার্ভিস পূণরায় চালুর  ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইকমিশন খুবই আন্তরিক রয়েছেন।

    কমিউনিটির সহযোগিতা থাকলে যে সেন্টারেই হোক না কেনো কমিউনিটির কল্যাণে তথা কার্ডিফের হাইকমিশনের কনসূলার সার্ভিস অচিরেই আলোর মূখ দেখবে এই আমার প্রতাশ্যা। এজন্য আমাদের কমিউনিটির পক্ষ থেকে ঐক্যদ্ধভাবে  লন্ডনে ও বার্মিংহামে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ক্যাম্পেইন জোরদার করতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যাক্ত করেন।

    কমিউনিটির  প্রাণের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে কনসূলার সার্ভিস অচীরেই  চালুর ব্যাপারে হাইকমিশন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে কার্ডিফবাসী আশা করছেন।