গোলাম আযমের আপিল শুনানি ২ ডিসেম্বর

    0
    217

    আমারসিলেট24ডটকম,২২অক্টোবরঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের আপিল শুনানির জন্য ২ ডিসেম্বর দিন রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৯০ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারকের বেঞ্চ এ দিন ধার্য্য করেছেন।

    অন্য ৪ বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। আদালতে গোলাম আযমের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
    জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই বয়স বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির পরিবর্তে গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। ৫ আগস্ট এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন গোলাম আযম (আপিল নম্বর- ১০২/২০১৩)। গোলাম আযমকে নির্দোষ দাবি করে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজা বাতিল এবং খালাস চেয়ে আপিলটি করেন গোলাম আযমের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম।

    ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০৯টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন তারা। তাদের মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার। এর সাথে সাড়ে ৯ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়। এদিকে ১২ আগস্ট সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জামায়াতকে নিষিদ্ধের আবেদন জানানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনটি দাখিল করেন এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদিন তুহিন (আপিল নম্বর- ১০৫/২০১৩)।
    ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সহযোগিতা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়া- এ ৫ ধরনের অপরাধের প্রতিটিই প্রমাণিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মুক্তযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর রায়ে বলেন, তার যে অপরাধ এর সবগুলোই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তবে গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তার বয়স ও শরীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সাজা দেয়া হয়েছে।
    রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেয়া শাস্তি অপর্যাপ্ত। তাই সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আরজি জানিয়ে আপিল করেন তারা। অন্যদিকে আসামি পক্ষের দাবি, ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই। আপিল বিভাগে উচ্চতর শুনানিতে গোলাম আযম নির্দোষ প্রমাণিত হবেন, এমনটিও প্রত্যাশা তাদের।
    প্রসঙ্গত একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। এসব আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এ জামায়াত নেতা।

    মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যান গোলাম আযম। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে।
    ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা; নাগরিকত্বও ফিরে পান। ১৯৯৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমিরের পদ থেকে অবসরে গেলেও দলটির তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে সম্পৃক্ততা বজায় রাখেন।

    গোলাম আযম ফেরার পর থেকে একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন এবং ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণআদালতে প্রতীকী বিচার ও ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি চূড়ান্ত রূপ পায়।