চাঁদা দাবির অভিযোগে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত:২টি তদন্ত কমিটি গঠন

0
186

আমার সিলেট ডেস্ক: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশ ডে পালনে সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগের ঘটনায় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ নাজমুল হক কামালকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত সংযুক্ত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার এ আদেশ দেন। নাজমুলকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল হক কামালকে বিভাগীয় নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড, অসদাচরণ ও দুর্নীতির দায়ে কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২(১) মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন। বিধি মোতাবেক তিনি খোরাকি ভাতা অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।

এর আগে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমানের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ওসির চাঁদা দাবির অভিযোগের সত্যতা পায়। সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) নাছির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়া হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শামসুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি করেন।

জানা গেছে, উভয় কমিটি শনিবার থেকে সরেজমিন তদন্ত শুরু করে চাঁদা দাবির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল হক কামাল শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অবস্থিত হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জিএম (এডমিন), স্কয়ার ডেনিমস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাফরিদ কটন মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পৃথক তিনটি চিঠি লেখেন।

চিঠিতে শারদীয় দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশ ডে উপলক্ষ্যে উল্লিখিত তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে মোট সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

এ নিয়ে ১৪ অক্টোবর ‘শায়েস্তাগঞ্জে পূজা উদযাপন, সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ওসির’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরই সিলেট রেঞ্জ ডিআইজিসহ জেলা পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করে।

প্রেরিত চিঠিগুলোর সারসংক্ষেপ: শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক কামাল শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অবস্থিত তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পৃথক তিনটি চিঠি লেখেন। ১০ অক্টোবর সই করা ওই চিঠিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে প্রত্যেকের কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকার হিসাব দেওয়া হয়। নাস্তা, পানীয় ও ফলমূল সরবরাহ করার বিষয় উল্লেখ করে পূজা ও কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র নামে টাকা চাওয়া হয়। তিনটি চিঠিই একই রকম।

চিঠিতে বলা হয়, ১৪ অক্টোবর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। পূজা সংক্রান্ত ওই অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের নাস্তা এবং আপ্যায়নের জন্য বর্ণিত মালামাল সরবরাহ করে পুলিশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করার অনুরোধ করা হলো।

চিঠিতে ওসি কামাল খাবারের ছয়টি আইটেমের উল্লেখ করেন। পূজা উদযাপনের নামে কাচ্চি বিরিয়ানি, জিলাপি, মিষ্টি, দই, পানি, বিভিন্ন প্রকার ফলের খরচ বাবদ এক লাখ টাকা চাওয়া হয়। একই চিঠিতে আলাদাভাবে আগামী ২৮ অক্টোবর কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপনের জন্য আড়াই লাখ টাকার মালামাল চেয়ে হিসাব দেওয়া হয়।

পুলিশিং ডের কথা উল্লেখ করে প্রত্যেক চিঠিতেই ৫০০ লোকের সমাগমের কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের আপ্যায়নে নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করার কথা বলেন। এ আইটেমে রাখা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি, কেক, মিষ্টি, পানি ও বিভিন্ন প্রকার ফল। কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং, ফিল্ড ক্যাপও এ চাঁদার মধ্যে ধরা হয়।