চুনারুঘাটঃচিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে,বেডে কাতরাচ্ছে রোগী

    0
    232

    “চার লক্ষ জনসাধারণের চিকিৎসা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স” 

    এস এম সুলতান খান, চুনারুঘাট থেকে:  আমার বইনডারে লইয়্যা ২ দিন ধইরা হাসপাতালে ভর্তি। একটা ডাক্তার আইয়া দেখলো না। এইহানে ভর্তি থাকলেও ডাক্তার দেখাতে হয় ডায়াগনস্টিকে যাইয়া। একটা সরকারি ওষুধও পাওয়া গেল না দুইদিনের মধ্যে। আইজকা বিকালে রোগী লইয়্যা অন্য জায়গায় চইলা যাইমু।”
    শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সাথে আলাপকালে এই কথাগুলো বলছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুকের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি আরজুদা আক্তারের বড় ভাই ছাবু মিয়া। তারা ওই উপজেলার পীরের বাজার এলাকার বাসিন্দা।
    ছাবু মিয়া বলেন, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে তার বোনের বুকে ব্যাথা হলে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কিন্তু সারাদিন চলে গেলেও কোনও ডাক্তার না আসায় তিনি চলে যান পার্শ্ববর্তী সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে ডা. তানভীর আহমেদ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু দুইদিন হাসপাতালের বেডে থাকার পরও কোনও ডাক্তার আসেননি রোগীর পাশে। তাই শুক্রবার বিকেলে আবারো ওই ডায়াগনস্টিকে ডা. তানভীর আহমেদকে দেখিয়ে বাড়ি চলে যাবেন।
    একই অভিযোগ করেন উপজেলা লাতিরগাঁও গ্রামের হাছেনা আক্তার। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত তার স্বামী ছামির হোসেনকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরও একজন চিকিৎসক এসে দেখেননি। তিনি জানান, নার্সরা আসলেও তারা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।
    শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫ জন রোগী ভর্তি। অথচ জরুরী বিভাগে নেই কোনও আবাসিক মেডিকেল অফিসার। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. সজল মিয়া নামের এক ইনটার্ন (শিক্ষানবিস চিকিৎসক)। ওই সময়ের ভিতরে ৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি এবং ১৫ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ইনটার্ন চিকিৎসকের মাধ্যমেই।
    চুনারুঘাট বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা সাজিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিয়মিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে প্র্যাক্টিস করেন। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
    উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সোহেল আরমান বলেন, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের ছত্রছায়ায় থেকে সরকারি চিকিৎসকরা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
    স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শেখ মো. হারুনুর রশিদ বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীরা এসে বসে থাকেন, চিকিৎসক না পেয়ে ইনটার্নদেরকে দিয়েই চিকিৎসা করান। প্রভাবশালী কেউ হাসপাতালে আসলে ফোন পেয়ে তারা আসেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
    চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা। বিষয়টি নিয়ে আমি তার সাথে আলাপ করবো।
    এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর জানান, শুক্রবার দায়িত্বে ছিলেন ডা. রাসমিনা আক্তার।
    ডা. রাসমিনাকে হাসপাতালে না পেয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, আজ শুক্রবার। তাই আমি আসবো না। শনিবার আসলে আমাকে পাওয়া যাবে। তবে হাসপাতালে কর্মরত ইনটার্নরাও অনেক অভিজ্ঞ বলে দাবি করেন তিনি।
    এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী বলেন, ‘ইনটার্নরা চিকিৎসা দেওয়ার কোনও নিয়ম নাই। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের সাথে কথা বলব।’চুনারুঘাট উপজেলার,  চার লাখ জনসাধারণের জন্য এক মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন নিজেই রোগি। এখানে কোন পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, নেই কোন যন্ত্র পাতি। প্রতিদিন শত শত রোগিরা এসে বিরম্বনার শিকার হয়ে পিড়তে হয়। এ উপজেলার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী মোহোদয়সহ সরকারের  সু দৃষ্টি  কামনা করছেন উপজেলা বাসী।