ছাতকে ভূমি জালিয়াতচক্রের সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য

    0
    272

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬জানুয়ারী,ছাতক প্রতিনিধিঃ  ছাতকে ভূমি ডাকাতদের ব্যাপক জাল-জালিয়াতিসহ নানা অপতৎপরতা ক্রমশঃ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। এসব ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের তৈরী পুরানো কার্টিজ পেপারে জাল দলিল ও জাল নকল-তৈরীর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতারণায় ফেলে নিজেদের নামে দেদারসে নাম খারিজ করে নিচ্ছে। সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের একটি প্রতারক ও পেশাদার জালিয়াতচক্রের শকিক্তশালী সিন্ডিকেট এরসাথে জড়িত রয়েছে। এসব সিন্ডিকেট তহশীল অফিসের একটি অসাধুচক্রের মাধ্যমে অফিসের ডিসিআর ও খাজনার রশিদের বহি অবাধে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

    এসব চোরাই ডিসিআর ও খাজনার রশিদ দিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনের ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে ভূমি দস্যুরা। জানা যায়, গত ২৪জানুয়ারি ভ্রাম্যমান আদালত জাল কাগজপত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সব দলিল লিখকদের ব্যক্তিগত অফিস তল্লাসী করা হয়। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে র‌্যাব-৯ এর সহকারি পুলিশ সূপার আফজাল হোসেনসহ পুলিশের একটি চৌকস দল অংশ গ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত স্মারক নং-০৫.৬০.৯০০০.০০৮.০০৩.০০২.১৫-৪৮৫, তাং ২৬ফেব্রুয়ারি ২০১৫ইং মূলে এক বিঞ্জপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা হতে প্রাপ্ত এবং উপজেলা ভূমি অফিস ছাতকের অনুকূলে সরবরাহকৃত আর আর বহির ব্যবহৃত ৫৯পাতাসহ ক্রমিক নং ৪৫৪৯০১ হতে ৪৫৫০০০পর্যন্ত বহিটি এবং ডিসিআর বহির ব্যবহৃত ৬টি পাতাসহ ৪০৬৬৪/১ হতে ৪০৬৬৪/২৫ পর্যন্ত ক্রমিকের বহিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস পীরপুর, ছাতক হতে অফিসের ব্যবহৃত ষ্টিলের আলমিরা ড্রয়ার থেকে চুরি/খোয়া যাওয়ায় উক্ত বহি দু’টির অব্যবহৃত পাতা সমূহ এতদ্বারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।

    বাতিলকৃত পাতা দ্বারা কোন প্রকার সরকারি অর্থআদায় করা হলে তা অবৈধ এবং বে-আইনী বলে গন্য করা হবে এবং ব্যবহারকারি আইনতঃ দন্ডনীয় হবেন। এআদেশের পরও দলিল লিখক আশরফুল হক (সনদ নং ৯৯) গত ৯জানুয়ারি পৌরসভার চরেরবন্দ মহল্লার মৃত জয়নাল আবেদীনের মেয়ে পাওয়ার দাতা মোছা: শিরিনা আকতার ও একই মহল্লার মৃত আবদুল বারির পুত্র মো. সুহেল আহমদকে পাওয়ার গ্রহীতা সাজিয়ে মন্ডলীভোগ মৌজার একাধিক দাগ ও খতিয়ানের ভূমির আমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করার জন্যে সাব-রেজিষ্ট্রার শাহ নেওয়াজ বরাবরে দাখিল করেন।

    এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইকালে খাজনার রশিদ দেখে সন্দেহ হলে সাব-রেজিষ্ট্রার এটি ফিরিয়ে দেন। পরের দিন ১০জানুয়ারি আশরাফের অনুপস্থিতিতে জনৈক নজরুল পূনরায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলটি উপস্থাপন করে। এ সময় খাজনার রশিদগুলো যাচাই করে জাল প্রমানিত হলে সে পালিয়ে যায়।

    রাতে এসিল্যান্ড পুলিশ নিয়ে নজরুলের বৌলা গ্রামের বাসায় তল্লাসী করে অব্যবহৃত একটি খাজনার রশিদ উদ্ধার করেন। এছাড়া আশরাফুল হক বন্য প্রাণী (কক্ষা) পাচারের সাথেও জড়িত রয়েছেন। ২০১৬সালের প্রথম দিকে এনিয়ে বাগবাড়ি গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকনের অফিসে কক্ষা পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে এক বৈঠকে আশরাফকে ৬০হাজার টাকা জরিমানা করে কক্ষাটি যথাস্থানে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে দলিল লিখকের সনদ থাকার পরও অবৈধভাবে সে হাজি নূরুল্লাহ তালুকদার দশগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে।

    সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অভ্যন্তরে একটি পেশাদার জালিয়াত সিন্ডিকেট বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জাল ও ভূয়াঁ কাগজপত্র তৈরী করে ভূমি অফিসের একটি অসাধুচক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় নাম খারিজ করে নিচ্ছে। ফলে প্রতারিত হয়ে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার ভূমি মালিক। সাব-রেজিষ্ট্রার শাহ নেওয়াজ জানান, প্রথম দিন আশরাফ ও পরের দিন নজরুল নামের অপর একজন দলিলটি উপস্থাপন করে।

    কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় রেজিষ্ট্রি করা হয়নি। তবে রাতে নজরুলের বাসা থেকে খাজনার একটি রশিদ এসিল্যান্ড পুলিশ নিয়ে উদ্ধার করেছেন বলে জানান। দলিল লিখক আশরাফুল হক ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করলেও এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ভূমি সংক্রান্ত ব্যাপক জাল-জালিয়াতিও হয়রানীমূলক দলিল সৃজনের অভিযোগ করেন।

    এব্যাপারে এসিল্যান্ড শেখ হাফিজুর রহমান জানান, ভূমি জালিয়াতিচক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তবে এদেরকে সনাক্ত করা গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।