জাফলংয়ে টিলা কর্তনে লালসোনা উত্তোলন সংশ্লিষ্টরা নিরব

    0
    284

    রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর সিলেট প্রতিনিধিঃ গোয়াইনঘাট উপজেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে পাথরের খনি। এছাড়া গোয়াইনঘাটের কয়েকটি ইউনিয়নে ছোট বড় পাহাড় ও টিলা রয়েছে সেগুলো পরিবেশর জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিলা শ্রেনীর ভূমি গুলোতে প্রচুর কাঠাল, তেজপাতা ও নানা প্রজাতির লেবু উৎপাদিত হয়।

    একশ্রেনীর পাথর খেকুরা টিলা দখল করে টিলার রুপ পরিবর্তন করে বসতবাড়ী সরিয়ে ভূগর্ভের লাল সোনা খ্যাত পাথর বের করছে। এলাকার সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। জাফলংয়ের টিলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এগিয়ে না আসলে মারাত্বক আকারে পরিবেশ বিপর্যয় আশংঙ্কা।

    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের সোনা টিলার মুকিত মিয়ার মালিকানাধিন অংশের ঘুরে দেখা যায় পাথর খেকু চক্র বড় বড় গর্ত করে সোনাটিলার ভূগর্ভ হতে লাল সোনা খ্যাত পাথর উত্তোলন করেছে প্রভাবশালী পাথর খেকু চক্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই লাল পাথর উত্তোলন অব্যহত রেখেছে।

    পাথর উত্তোনের গর্ত হতে প্রায় ১শত গজ দূরে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির জন গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি নামক ক্যাম্পটি। এছাড়া টিলার নিম্ন অংশে রয়েছে কয়েক বসবাস করছে শত শত নিম্ন আয়ের ভাসমান মানুষ। সোনাটিলা হতে অপরিকল্পিত ভাবে লাল পাথর উত্তোলন ফলে যে কোন মুহুত্বে টিলা ধসের মত বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশংঙ্কা করছে সচেতন মহল।

    সচেতন মহলের দাবী সোনাটিলায় বড় বড় গর্ত করে পাথর উত্তোলনের ফলে বৃষ্টির পানি জমাট হয়ে টিলার একটি বিশাল অংশ ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কোন পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হয়ে প্রাণহানির মত দূর্ঘটনা ঘটবে। বিগত ২বৎসর পূর্বে পাথর খেকু চক্রের সদস্যরা বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাশ্বে বাংলাদেশের একমাত্র গবেষণার জন্য সংরক্ষিত চুনা পাথর খনি হরিলুটের প্রক্কালে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে এবং ২জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

    সে সময় উপজেলা প্রসাশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর পুরো সোনাটিলা এরিয়ায় পাথর উত্তোলন বন্দের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ জারির পর হতে সোনা টিলায় পাথর উত্তোলন বন্দ হয়ে যায়। টাইলস শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে লাল পাথরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং পাথরটি মূল্যবান হওয়ায় সম্প্রতি পাথর খেকু চক্র পুনরায় সোনা টিলার লাল সোনা আহরনে তৎপর হয়ে উঠে এবং শত শত গাড়ী লাল পাথর সংগ্রহের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। জরুরী ভিত্তিত্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী সচেতন মহলের।

    এদিকে পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছাড়পত্র ছাড়া সিলেট বিভাগের সদর সিলেট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।

    বিগত ২০১১ সালের ১লা মার্চ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) দায়ের করা রিটের রুল নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের নের্তৃত্বাধীন যৌথ বেঞ্চ এই রায় দেন। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর এসব এলাকায় পাহাড় ও টিলা কাটা কেন এখতিয়ার বর্হির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষনা করা হবে না এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত দুঃস্থদের পূর্ণবাসনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত।

    রিটে পরিবেশ, ভূমি ও গৃহায়ন সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, সিলেট সিটি করর্পোরেশন, সিলেট বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলা অধিদফতরের উপ-পরিচালক, সিলেট সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল।

    আদালতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পক্ষে ছিলেন এডভোকেট ইকবাল কবির লিটন ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান।

    গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) আশিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিবেদককে জানান- সোনাটিলা এলাকায় টিলা কর্তন করে লাল পাথর উত্তোলনের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। যেহেতু আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম, আমি নিজেই সরেজমিন পরিদর্শন করে টিলা কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।