জৈন্তাপুরে জাতীয় শিক্ষা পদক-২০২২ মনোনয়নে অনিয়নের অভিযোগ

0
306
জৈন্তাপুরে জাতীয় শিক্ষা পদক-২০২২ মনোনয়নে অনিয়নের অভিযোগ
জৈন্তাপুরে জাতীয় শিক্ষা পদক-২০২২ মনোনয়নে অনিয়নের অভিযোগ

জৈন্তা প্রতিনিধিঃ জাতীয় শিক্ষা পদক-২০২২ উপলক্ষে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্রেষ্ট প্রতিষ্টান প্রধান, শ্রেষ্ট শিক্ষক সহ অন্যান্য ক্যাটাগরি শ্রেষ্টত্ব অনুসরণ না করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফাইল জমা নিয়ে নির্বাচিত করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কমিটির বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ উঠেছে জৈন্তাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকার ভারপ্রাপ্ত হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ ৷ যার কারনে তিনি প্রতিদিন অফিস করা সম্ভব হয়না৷ সেক্ষেত্রে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার আজিজুল হক খোকন বেশিরভাগ মাধ্যমিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন৷ এছাড়া দীর্ঘ দিন হতে উপজেলা চাকুরীর সুবাদ তিনি প্রায় একক আধিপত্য বিস্তার করছেন উপজেলা জুড়ে৷ তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর হতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে নানা রকম দূর্নীতির অভিযোগও রয়েছে৷ নিজের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ সুবিধা ভাগিয়ে নিয়েছেন৷ একই ধারাকাহিকতায় ২০২২ সনের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলার যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোকে সুকৌশলে দূর্যোগের সুবাদে ফাইল জমা না দেওয়ার অযুহাতে নামমাত্র প্রতিষ্টানে শ্রেষ্টত্বের পুরস্কার তুলে দিয়েছেন৷ 

বিষেশ করে যে সকল প্রতিষ্ঠান সমুহ উপজেলার শতভাগ পাশের হার নেই তাদের নিকট এখন শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব পাইয়ে দেন৷ অপরদিকে শ্রেষ্টত্বের তালিকায় রয়েছেন এই কর্মকর্তা নিজের স্ত্রী মরিময় বেগম সুমা৷ তিনি উপজেলার শ্রেষ্ট শিক্ষিকার পদকে মনোনিত হয়েছেন৷ 

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য বাউরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল এবং ক্যাপ্টেন রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই বরং দূর্যোগের জন্য আমরা সময় চেয়ছিলাম৷ এবিষয়ে আমাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা হয়নি৷ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, হঠাৎ করে ১লা মে হতে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে এছাড়া ১০ মে হতে জৈন্তাপুর উপজেলায় অতি মাত্রায় কাল বৈশাখী ঝড় সহ পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টির কারনে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে৷ এদিকে বন্যায় উপজেলার সবকয়েকটি বিদ্যালয়ে পানিতে তলিয়ে যায়৷ সেই কারনে আমরা ফাইল জমা দিতে সময় চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আমাদেরকে সময় দেওয়া হয়নি৷ তার মধ্যে ১৮ তারিখের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান ফাইল জামা দেয়নি৷ কিন্তু অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্টান কি করে ফাইল জমা দিলেও সেটি দেখার বিষয়৷ আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাম মাত্র প্রতিষ্টান গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্যটাগরিতে শ্রেষ্টত্ব নির্বাচন করা হয়৷ এতেকরে শিক্ষা প্রতিষ্টান সমুহ প্রতিযোগিতার আগ্রহ হারাবে বলে তারা দাবী করেন৷

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ফলাফল ও অন্যান্য কার্যক্রমে যে সকল প্রতিষ্ঠান সকল ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। সেসকল প্রতিষ্টান গুলো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে প্রতিষ্টান গুলো বন্যার পানিতে ঢুবে থাকা ও সেই সাথে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষনা করার কারনে আরও বিপাকে পড়তে হয় প্রতিষ্টান প্রধানদের৷ আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই কর্মকর্তা অতি সুকৌশলে বাছাই কাজটি করেন৷ বাছাই কমিটির অনেক সদস্য বাছাই কাজে অনুপস্থিত থাকেন৷ 

এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিটির সদস্য রেজওয়ান করিম সাব্বির বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিটির সদস্যরা জৈন্তাপুরে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ পালন করা হচ্ছে বিষয়টি জানেন না৷ 

উপজেলার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, মনোযোগ ও গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য শ্রেষ্ঠত্ব বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইচ্ছামত কিছু ফাইল জমা নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করে শ্রেষ্ঠ ক্যাটাগরি নির্বাচন করা হলে শিক্ষকদের মাঝে প্রতিযোগিতা ও কাজ করার আগ্রহ কমে যাবে। এমনকি অভিভাবক মহলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। তাই শ্রেষ্ঠ ক্যাটাগরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠ ও সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে পুনঃ বিবেচনার দাবি করেন তিনি।

এদিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উপজেলা নির্বাচিতদের নাম প্রকাশের পর উপজেলা জুড়ে তুমুল আলোচনা সমালোচানার সৃষ্টি হয়৷ শিক্ষাবিদরা বলেন, দূর্যোগকে পুজি করে যারা এই কাজটি করেছেন এটা টিক হয়নি৷ আমরা এমন কাজের জন্য হতভম্ব হয়ে পড়লাম ৷ জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি যে সকল প্রতিষ্ঠান ভাল ফলাফল অর্জন করল কিন্তু সে সকল প্রতিষ্টানের কেউই শ্রেষ্টত্ব অর্জন করতে পারলা না এটা কি করে হল৷ তারা বলেন এখানে ভিন্ন কিছু রয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খাতিয়ে দেখার দাবী জানান৷ যোগ্যরা মূল্যায়ণ না পেলে একটি উপজেলা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস হয়ে পড়বে, শিক্ষকরা আগ্রহ হরাবেন কাজের প্রতি৷ মুলত যোগ্য শিক্ষকদের সুপরিকল্পিত ভাবে গলা টিপে হত্যা করার শামিল বলে মনে করেন৷

বাছাই কমিটির সদস্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা একেএম আজাদ ভুইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কমিটির সদস্য তবে বাছাই কাজে উপস্থিত হতে পারিনি৷ কিভাবে বাছাই হয়েছে উপস্থিত না থাকায় কিছু বলা যাচ্ছো না৷

উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান যদি বলে ফাইল জামাপ্রদানের বিষয় তারা জানেন না তাহলে বিষয়টা অত্যান্ত  দু:খজনক৷ এবিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইট সহ সকল বিভাগে নোটিশ জারী করা হয়েছিল৷ তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের এক দুই উপজেলার দূর্যোগের জন্য জাতীয় প্রোগ্রাম বন্দ রাখা সম্ভব নয়৷ তাই নির্দেশনা মোতাবেক একটি প্রতিষ্ঠান যদিও ফাইল জমা দেয় সেক্ষত্রে ঐ প্রতিষ্টানই নির্বাচিত হবে ৷ আমি মুলত জেলার কাজ করছি সেক্ষেত্রে উপজেলার বিষয়টি উপজেলা কমিটি দেখবে৷ 

অভিযুক্ত উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আজিজুল হক খোকন বলেন, বিষয়টি এমন নয় উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি এবং উপজেলা বাছাই কমিটি ফাইল পত্র যাচাই বাছাই করেই শ্রেষ্ট ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন করেছেন৷ ১৮ তারিখের মধ্যেই যারা ফাইল জমা দিয়েছে৷ তাদের মধ্য হতে বাছাই কমিটি নির্বাচন করেছে৷ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আব্দুল জলিল বললেন ১৮ তারিখের মধ্যে কোন ফাইল জমা হয়নি তিনি উপস্থিত ছিলেন প্রশ্ন করা হলে একাডেমিক সুপারভাইজার বলেন, এটি সত্য নয়, যে সকল ফাইল জমা পড়েছে সব কয়টি ১৮ তারিখের মধ্যেই পড়েছে৷পরবর্তীতে বাছাই কমিটি তা যাচাই বাছাই করেছে৷ যদি একটি ফাইলের জমা পড়ে উপর ভিত্তি করে উপজেলার শ্রেষ্ট ঘোষনা করা হয় কি করে ? প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি৷

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা একটি শিক্ষা কমিটি আছে ৷ তবে এখানে শিক্ষা কমিটির কোন কাজ নেই৷ সরকারি নির্দেশনা যে ভাবে এসেছে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাছাই কমিটি কাজ করেছে৷ এছাড়া যে সকল প্রতিষ্টান ফাইল জমা দিয়েছে তাদের মধ্য হতে নির্বাচন শ্রেষ্টত্ব নির্বাচন করা হয়েছে ৷

উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, এরকম হওয়ার কথা নয়, তারপরও  বিষয়টি নিয়ে ইউএনও সাহেব ভাল বলতে পারেন৷ যদি কোন ক্রুটি হয় কিংবা দূর্যোগের কারনে ফাইল জমা না পড়ে সেক্ষেত্রে বিষয়টি পুর্ণ:বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি৷