ডিজিটালের আওতায় আসেনি বেনাপোল স্থলবন্দর

    0
    227

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১জানুয়ারী,এম ওসমান, বেনাপোল:    ডিজিটাল যুগেও ‘অটোমোশন’ পদ্ধতির পরিবর্তে মান্ধাত্বা আমলের ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে চলছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে দ্রুত কার্গো পণ্য আমদানি-রফতানিতে পুরনো ওই পদ্ধতিকে অন্যতম বাধা হিসেবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

    বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ও আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিস্ট শুল্কভবনের সকল কাজকর্ম ডিজিটাল পদ্ধতিকে চললেও বন্দরের কাজকর্ম চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এদিকে বন্দরে অটোমোশন পদ্ধতি চালু না হওয়ায় শুল্কভবনের সাথে সমন্বয় করাও সম্ভব হচ্ছে না।

    বন্দর ব্যবহারকারিরা বলছেন, বন্দরের চুরিসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ার ভয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় অটোমোশন পদ্ধতি চালু না হচ্ছে না। এতে বন্দরের কাজকর্মে গতি ও স্বচ্ছতা আসছে না। এছাড়াও পণ্য খালাসে অযথা সময় নষ্ট হওয়ায় যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের উপর।

    অবশ্য বন্দর কর্মকর্তারা দিচ্ছেন দায়সারা বক্তব্য। এ প্রসঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে ডিজিটাল করতে প্রধান কার্যালয়ে কাজ চলছে। শিগগির বন্দরকে ডিজিটালাইজ করা হবে। এর ফলে বন্দরের গতিশীলতা অনেক বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।

    এদিকে বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মোহম্মাদ শওকাত হোসেন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের প্রধান কার্যালয়ের অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন। পুরো শুল্কভবনকে অটোমোশনের আওতায় আনা হলেও বন্দরের কারণে আমাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

    বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে লাখ লাখ টন পণ্য নিয়ে শতশত ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান বন্দরগুলো অটোমোশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হলেও বেনাপোলে এখনো চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতি। এতে আমদানি-রফতানিসহ মালামাল খালাসে প্রতিদিন বাড়তি সময়ের অপচয় হচ্ছে। আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না বন্দর ব্যবহারকারীরা। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ ঠিকই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শতকরা পাঁচ ভাগ হারে বন্দর চার্জ আদায় করে নিচ্ছেন।

    তিনি বলেন, ম্যানুয়েল ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতিতে কার্গো পণ্য তদারকি করার ফলে বেনাপোলে পণ্য খালাসে অযথা সময় নষ্ট হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমদানি-রফতানি এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপর। এই পুরনো পদ্ধতিকে পুঁজি করে বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি অসাধু চক্র। যাদের কারণে সরকার প্রতিবছরই বি ত হচ্ছে বড় ধরনের রাজস্ব থেকে। গত অক্টোবরে আগুন লেগে প্রায় কত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে এর কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই হিসেব মেলাতে কাস্টমসের কাছে ধরনা দিচ্ছে। অথচ এসব পণ্যের তালিকা কম্পিউটারে থাকলে এক ক্লিকে সব পাওয়া যেত বলে মনে করেন তিনি।

    ব্যবসায়ীদের শীর্ষ ওই সংগঠনের আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, অটোমোশন পদ্ধতি চালু না হওয়ায় প্রতিদিন ভারত থেকে বন্দরে কি পরিমাণ পণ্য ঢুকছে, পণ্যের সঠিক বর্ণনা, মালামালের পরিমাণ, কোন মাল কত নম্বর শেডে সংরক্ষিত হচ্ছে তার কোনো সঠিক হিসেব দিতে পারছে না। এসব জানতে চাইলে খাতাপত্র দেখে বলা হয়। যার ফলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে বন্দরে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে সরকার এ বন্দর থেকে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে।

    বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ডিজিটাল অটোমোশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি ওয়্যারহাউজ, চোরাচালান প্রতিরোধে স্ক্যানিং ব্যবস্থাসহ আরো অনেক আধুনিক ব্যবস্থা, যার একটিও নেই বেনাপোল বন্দরে। অথচ প্রতি বছর পাঁচ ভাগ করে মাসুল বাড়াচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্য কমিয়ে দিচ্ছেন।