তাহিরপুরে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ডিআইজির কাছে অভিযোগ

    0
    224

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫ডিসেম্বর,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ   সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না দুই সহোদরের চাঁদাবাজি। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। দুই সহোদর চাঁদাবাজরা হলেন-উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বিশিস্ট সুদি ব্যবসায়ী বদ মিয়ার ছেলে হাবিব সারোয়ার আজাদ ও তার ছোট ভাই সাজ্জাদ হোসেন শাহ।

    সোমবার সকাল ১১টায় তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার বারকি ও বালি,পাথর শ্রমিকরাসহ ব্যবসায়ীরা ওই দুই সহোদরের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিলেট বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

    দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,হাবিব সারোয়ার আজাদ ও সাজ্জাদ হোসেন শাহ দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক ভোরের কাগজসহ আরো একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার স্টাফ  রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে বিজিবি,র‌্যাব ও পুলিশসহ সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন যাবত যাদুকাটা নদীর বারকি ও বালি-পাথর শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে চাঁদাবাজি করছে। তাদের কথা মতো চাঁদার টাকা না দিলে নিরীহ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের কাছে দুই সহোদর তাদের পত্রিকার সম্পাদকের নাম ভাঙ্গিয়ে ১লক্ষ টাকা চাঁদা ও ২১হাজার টাকা মূল্যের ১টি মোবাইল ফোন দাবী করে।

    এঘটনায় সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাবিব সারোয়ার আজাদ ও সাজ্জাদ হোসেন শাহ বিরুদ্ধে গত ১৭ই নভেম্বর চাঁদাবাজি মামলা নং-সি আর ১৮৩/১৬ইং,ধারা-৩৮৫/৩৪ দায়ের করা হয়। এর আগে বড়ছড়া কয়লা আমদানী কারক সমিতির অর্থ সম্পাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুছ মিয়া কাছে ২লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় আদালতে-৩৮৫/৫০০/৫০১/৫০২/১০৯ধারায়,মামলা নং-১১৫/২০১১ ও তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক,সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি,চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলীর কাছে পৃথক ভাবে আজাদ মিয়ার ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী ঘটনায় গত ২৯শে জানুয়ারী আদালতে,চাঁদাবাজি মামলা নং-১০/১৫ইং,ধারা-৪২০/৩৮৫/৩৪ ও ২২শে জানুয়ারী চাঁদাবাজি মামলা নং-০৮/২০১৫ইং,ধারা-৪২০/৩৮৫/৩৪ দায়ের করা হয়।

    তাদের চাঁদাবাজির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গত ২৫.০৪.২০১১ইং তারিখে ০৫.৯০৫…০৬.০৩. ০৩১.২০১১নং স্মারকে আজাদ ও সাজ্জাদকে তাহিরপুরের ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এবং গত ১৭/০৩/১৫ইং তারিখ রাত ৯টায় সীমান্তের শাহ আরেফিন মেলায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধৌলাই খেয়ে সালিশের মাধ্যমে মুসলেখা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে আজাদ মিয়া। এঘটনার এক সপ্তাহ পর ২৪/০৩/১৬ইং তারিখে দুপুর ১২টায় বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের মহিলা কয়লা শ্রমিকদের কাছে চাঁদা চাইলে সেখানে আবারও গণধৌলাই খায়। এছাড়াও চাঁদাবাজির জন্য ২০০৪সালে চাঁনপুর সীমান্তে ১বার ও বাদাঘাট বাজারে ১বার গণধৌলায়ের শিকার হয় দুই সহোদর।

    এছাড়া আজাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে ডেকে নিয়ে মারধর করার ঘটনায় তাহিরপুর থানায় জিডি নং ৬৩১,তারিখ:২০/০৪/১১ইং দায়ের করা হয়। একই কারণে মাইটিভির সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার উপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আজাদ ও সাজ্জাদসহ ১০জনের বিরুদ্ধে আদালতে,মামলা নং-৪৪/২০১৩,ধারা-৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ দায়ের করা হয়। আর এই মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজাদ মিয়া তার ছেলে শিপু সারোয়ারকে আগুন দিয়ে পুড়ে দূর্নীতিবাজ এসআই জামাল উদ্দিনকে দিয়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের নামে মিথ্যা এসিড মামলা দায়ের করে।

    এছাড়া ২০০২সালে স্কুলের ছাত্রীদের উত্যক্ত করার কারণে আজাদের মাথায় গুল ঢেলে,গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সাড়া এলাকা ঘুরানো হয়। ২০০৪সালে ৭ই নভেম্বর এক শিশুকে বলৎকারের ঘটনায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই নির্যাতিত শিশুর মা। এঘটনায় আজাদ মিয়াকে তার বাবা তেজ্য করে দিলে সে মদ খেয়ে তার বাবা বদ মিয়াকে মারধর করে। পরে আজাদ মিয়াকে থানায় সোপর্দ করে তার বাবা।

    এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাবিব সারোয়ার আজাদকে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধির পদ থেকে বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘বিকাশ ফকির’সহ প্রায় ২০থেকে ২৫টি ফেইক আইডি তৈরি করে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করাসহ বিভিন্ন ভাবে লোকজনের মানহানি ও হয়রানী করছে।

    এব্যাপারে বাদাঘাট ন্যাশনাল প্রাইভেট স্কুলের প্রিন্সিপাল রফিকুল ইসলাম বলেন,৫০হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় হাবিব সারোয়ার আজাদ তার সহযোগী আলম শেখ তাদের বাহিনী নিয়ে আমার স্কুল ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া বলেন,আজাদ ও সাজ্জাদের অত্যাচারে সাংবাদিক সমাজসহ এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। উত্তর বড়দল ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী,বালি-পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিক সমিতির সভাপতি তাজুত আলী ও ব্যবাসায়ী রহিম উদ্দিন,নুর হোসেন মল্লিকসহ আরো অনেকেই বলেন,আজাদ ও সাজ্জাদের কথা মতো চাঁদা না দিলে অন্যায় ভাবে হয়রানী করে,আমরা তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

    তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন,আদালতের নির্দেশে হাবিব সারোয়ার আজাদ ও সাজ্জাদ হোসেন শাহর চাঁদাবাজি মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে,তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিলেট বিভাগীয় সহকারী পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন,দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে আজাদ ও সাজ্জাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।