তাহিরপুরে স্কুল শিক্ষার্থীরা বোরো ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত 

    0
    332

    তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ  মহামারী করোনায় স্কুলসহ সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুই বন্ধ আর এখন বৈশাখ মাসে। হাওর জুড়েই পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এর মধ্যেই আছে কাল বৈশাখী ঝড়,বৃষ্টি,বজ্রপাত আর পাহাড়ি ঢলের কষ্টের ফলানো সোনার ফসল তলিয়ে যাবার শংকা।
    কৃষক পরিবারের সন্তান তাই ঘর ছেড়ে চলে এসেছে বাবা,মা আর ভাইয়ের কষ্টের ফলানো বোরো ধান শুকানোর জন্য খলায়। এক পাশে মা,অন্য পাশে দুই ভাই তাতে কি নিজের মত করে ধান শুকানোর জন্য ধানে শুকানো আর ধানে থাকা ময়লা পা দিয়ে ন্যাড়ে আর হাতে থাকা ঝাড়ু দিয়ে সড়িয়ে ফেলছে। সে কখনও নিজের মত করে আবার কখনও মা,ভাইয়ের চাহিদা অনুযায়ী জিনিস এনে দিচ্ছে মিনহা বেগম(৬)। এমনি দৃশ্য দেখা যায় সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন মমিসিংঙ্গা হাটির সামনের শনির হাওর পাড়ে ধান শুকানোর খলায়।
    এক পাশে শনির হাওরের মধ্যে থেকে শ্রমিকরা ধান কেটে আনছে ঠলি,ঠেলাগাড়ী দিয়ে। এনে ফেলছে পাশের খলায়। এরপর কেউ মাড়াই করছে কেউ বা আবার ধান রৌদে শুকানোর কাজে ব্যস্থ সময় পাড় করছে। আর এসব কাজে কোমল হাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে খলায় আরও অনেক শিশুরাই।
    এই সময় কাছে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলে মিনহা জানায়,তাদের বাড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের মমিসিংগা হাটি আর লেখা পড়া করছে মধ্য তাহিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীতে। পরিবারে তিন ভাই পাচঁ বোনের মধ্যে ছোট সে। সে জানায়,স্কুল বন্ধ ঘরে কাজ নেই তাই মা,বাবা আর ভাইদের কে ধান শুকানোর কাজে সহযোগী করার জন্য এসেছে।
    এমনি একেই চিত্র দেখা গেছে ভাটি তাহিরপুর গ্রামের পাশের খলায়। সেখানে কাজ করছে হুসাইন মিয়া(৬),এলিনা বেগম(৭)। তারাও স্কুলে খেলাপড়া করছে। তাদের বাবা শনির হাওরে এবার বোরো ধানের চাষ করছে ফলন ও ভাল কিন্তু করোনার কারনে এখন শ্রমিক সংকট সাথে রয়েছে কাল বৈশাখী ঝড়,বজ্রপাত,বৃষ্টি আর ভারতীয় মেঘালয়ে পাহাড়ি ঢলের কারনে ফসল ডুবির আশংকা। স্কুল বন্ধ থাকায় আর প্রতি বছরেই এভাবে পরিবারের সবার সাথে ধান কাটা,মাড়াই আর শুকানোর কাজে আসে তারা। শুধু তারাই নয় হাওর পাড়ের প্রতিটি পরিবারের সবাই এক ফসলী বোরো ধান কাটায় অংশ নেয়। আর হাওরা লের প্রতি বছরেই এমনি দৃশ্য চোখে পরে।
    হাওর পাড়ের কৃষক আমিন মিয়া জানান,আমি কৃষক পরিবারের সন্তান,কৃষি কাজ করেই আমরা বংশ পরমপরায় চলছি। বছরের এই সময়টাই আমরা সবাই মিলে বোরো ধান কেটে আনন্দ করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আর এ কাজে স্কুল পড়ুয়া শিশুরাও আসে আনন্দের সাথে কাজে সহযোগিতা করতে তারাও একাজে আনন্দ পায়। আর আমরাও খাবার পানি আনা,বা ছাতা,ঝাড়ু এমন ছোটখাট কাজে তাদের সহযোগিতা নেই। করোনা ভাইরাসের কারনে বড় আতংকের মাঝে আছি।
    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন,হাওরা লে কৃষক ও তাদের পরিবারের সন্তানরা খুবেই পরিশ্রমী। স্কুল বন্ধ তাই এই সময়টায় তারা তাদের মা বাবা সাথে ধান কাটা মাড়াই করার জন্য খলায় গিয়ে কাজে সহযোগিতা করে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকট কালীন সময়ে হাওরের ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শনি ও মাটিয়ান হাওরসহ ছোট বড় মোট ২৩টি হাওরের কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক সংঘটনসহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল,কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।